বুধবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৫, ১০ বৈশাখ ১৪৩২
দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ পথচারী

পুঠিয়ার বানেশ্বর হাট ও শায়েস্তাগঞ্জে রঘুনন্দন পাহাড়ে ময়লার ভাগাড়

স্বদেশ ডেস্ক
  ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
পুঠিয়ার বানেশ্বর হাট ও শায়েস্তাগঞ্জে রঘুনন্দন পাহাড়ে ময়লার ভাগাড়
পুঠিয়ার বানেশ্বর হাট ও শায়েস্তাগঞ্জে রঘুনন্দন পাহাড়ে ময়লার ভাগাড়

রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার বানেশ্বর হাট এবং হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জে ওলিপুর রঘুনন্দন পাহাড়ে ময়লার ভাগাড়ের দুর্গন্ধে অতিষ্ট পথচারীরা। এ থেকে তারা পরিত্রাণে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

পুঠিয়া (রাজশাহী) প্রতিনিধি জানান, কর্তৃপক্ষের অবহেলায় ময়লার স্তূপ ও দুর্গন্ধে জরাজীর্ণ রাজশাহীর ঐতিহ্যবাহী বানেশ্বর হাট। এমন অস্বাস্থ্যকর ও নোংরা পরিবেশে বাধ্য হয়ে কেনা বেচা করছেন ক্রেতা এবং বিক্রেতারা। এ হাট থেকে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব আদায় হলেও উন্নয়নে তেমন কোন উদ্যোগ না নেওয়ার অভিযোগ ব্যবসায়ীদের।

মাংস বিক্রেতা আলম আলী বলেন, 'পাশেই ময়লার ভাগাড় আর দুর্গন্ধ। কেনা বেচা তো দূরের কথা এখানে টিকে থাকা দায় হয়ে গেছে। মাছ ও মাংস হাটের পানি নিস্কাশনের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় মাছের পানি, জবাই করা গবাদি পশুর রক্ত জমে পচা-দুর্গন্ধময় হয়ে উঠেছে পরিবেশ। এর মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বাধ্য হয়ে কেনা বেচা করছি।'

মাছ ব্যবসায়ী রেজাউল করিম বলেন, মাছ বাজারের পাশের পুকুরটি পরিনত হয়েছে ময়লার ভাগাড়ে। শুকনো মৌসুমে কষ্ট করে কেনা বেচা করা গেলেও বর্ষার সময় দুর্গন্ধযুক্ত পানি ছড়িয়ে পড়ে পুরো হাটজুড়ে। বার বার বলা হলেও কোন ব্যবস্থা নেয় না হাট কর্তৃপক্ষ।

রহিদুল নামে এক ক্রেতা বলেন, বানেশ্বর হাট বর্তমানে খুবই নোংরা পরিবেশ। দুর্গন্ধের কারনে এ হাটে বাজার করতে আসা যায় না। চারিদিকে শুধু ময়লার স্তূপ।

বানেশ্বর বনিক সমিতির সভাপতি মতিউর রহমান মতি বলেন, আম, খেজুরের গুড়, সবজি গরু-ছাগল ও গৃহস্থালি পণ্যের জন্য বেশ পরিচিত এ হাট। প্রতিবছর কোটি টাকার বেশি দিয়ে হাটটি ইজারা নেওয়া হলেও হাটটির সার্বিক উন্নয়নে কোনো নজরদারি নেই কর্তৃপক্ষের। বার বার পুঠিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হাটের উন্নয়নের জন্য আশ্বাস দিলেও এখনো কার্যকরী পদক্ষেপ নেননি।

পুঠিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা একেএম নুর হোসেন নির্ঝর জানান, হাটের নোংরা পরিবেশের অন্যতম কারণ ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকা। মাছ ও মাংস হাটার বন্ধ ড্রেনটি সংস্কার করার পাশাপাশি হাটের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে দ্রম্নত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

শায়েস্তাগঞ্জ (হবিগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জে ওলিপুর রেলওয়ে গেটের অদূরে রঘুনন্দন পাহাড়ের পাশে রেল ও সড়ক পথের মাঝামাঝি সরকারি জমিতে অপরিকল্পিতভাবে ময়লা ফেলা হচ্ছে।

একাধারে এ অবস্থা চলতে থাকায় স্থানটি এখন ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। ময়লার দুর্গন্ধে আশপাশের বাড়ির লোকজন ও পথচারীরা দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। এর ফলে হুমকিতে পড়েছে পাহাড়সহ আশপাশের পরিবেশ। প্রতিকার করতে এগিয়ে আসছেন না কেউ। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন দুর্ভোগের শিকার হওয়া লোকজন।

ঘটনাস্থল পরিদর্শনকালে দেখা যায়, পিকআপ ভর্তি করে ময়লা এনে এ স্থানে ফেলা হচ্ছে। সেসব ময়লার দুর্গন্ধে এ স্থান দিয়ে যাতায়াত কষ্টদায়ক হয়ে পড়েছে। পিকআপ চালক আব্দুস ছাত্তার জানান, এসব ময়লা ওলিপুর বাজারের। টাকার বিনিময় তিনি গাড়ি ভরে ময়লা এখানে ফেলে যান। শ্রমিকরাও মজুরি পেয়ে এখানে ময়লাগুলো ফেলে যাচ্ছে। এখানে তার কিছু করার নেই।

বাজার পরিচালনা কমিটির সভাপতি নূরুল ইসলাম সরদার বলেন, ময়লা ফেলানোর আর কোন স্থান নেই। তাই ময়লাগুলো ওখানে ফেলা হচ্ছে। দ্রম্নত যেন সরকারিভাবে ডাম্পিং স্টেশন নির্মাণ করে দেওয়া হয়। তাহলে আর ওই স্থানে ময়লা ফেলতে হবে না।

এলাকার বাসিন্দা আব্দুল জলিল বলেন, ময়লার দুর্গন্ধে বাড়িতে অবস্থান করা কঠিন হয়ে পড়েছে। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ চান। ব্যাটারিচালিত টমটম চালক বাচ্চু মিয়া বলেন, ময়লার দুর্গন্ধে এ পথে চলাচল কঠিন হয়ে পড়েছে। দ্রম্নত এর প্রতিকার দেখতে চান।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল সোহেল বলেন, রঘুনন্দন পাহাড়টি পরিবেশ রক্ষায় বিরাট ভূমিকা পালন করছে। পাহাড়, সড়ক ও রেলপথের পাশে খোলা স্থানে অপরিকল্পিতভাবে ময়লা ফেলা ঠিক হচ্ছে না। এতে পাহাড়ের প্রাকৃতিক পরিবেশের উপর বিরাট প্রভাব পড়ছে।

শায়েস্তাগঞ্জ রেলওয়ে জংশনের ঊর্ধ্বতন উপ-প্রকৌশলী (পথ) ফিরোজ আহমেদ বলেন, 'শুনেছি রেলপথের পাশে ময়লা ফেলা হচ্ছে। এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নেবেন শায়েস্তাগঞ্জ রেলওয়ে জংশনের ঊর্ধ্বতন উপ-প্রকৌশলী (পূর্ত) কর্মকর্তা মিঠুন দাস।'

ঊর্ধ্বতন উপ-প্রকৌশলী (পূর্ত) কর্মকর্তা মিঠুন দাস বলেন, বিষয়টি জেনে পরবর্তীতে জানানো যাবে। এর আগে সঠিক করে কিছু বলা যাচ্ছে না। তবে অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার ব্রাহ্মণডোরা ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মোহন মিয়া বলেন, 'এখানে ময়লা ফেলানোর কথা উপজেলা প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। আশা করছি, উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে সরকারি বরাদ্দে দ্রম্নত ডাম্পিং স্টেশন করে দেওয়া হবে।'

শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার পলস্নব হোম দাস বলেন, বিষয়টি জেনে দ্রম্নত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এখানে কারো ক্ষতি করে ময়লা ফেলা যাবে না।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে