নিজেদের মধ্যে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা ও বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির পদ বাগিয়ে নিতেই হত্যা শিকার হন জিয়া সাইবার ফোর্সে বগুড়া জেলা কমিটির সহ-সভাপতি, উপজেলা কমিটির সভাপতি ও পাকুলস্না ইউনিয়ন যুবদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য রাসেদ। এ ঘটনায় চরম উত্তেজনা দেখা দিয়েছে ওই এলাকায় এবং সোনাতলা উপজেলা বিএনপির রাজনীতিতে নিজ দলের মধ্যেই দেখা দিয়েছে নানা ধরনের মতবিরোধ। এতে করে দলের মধ্যেই কয়েক ভাগে বিভক্ত হয়েছেন নেতাকর্মীরা। দূরত্ব দেখা দিয়েছে নিহতের পরিবার ও রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে। অন্যদিকে এই হত্যাকান্ডকে পুঁজি করে দল ভাড়ি করতেও ব্যস্ত সময় পার করছেন নেতারা।
গত ৭ ফেব্রম্নয়ারী উপজেলা বিএনপির সাধারন সম্পাদক জিয়াউল হক লিপ্পন তার মোটর সাইকেল বহর নিয়ে মোকামতলা এলাকায় একটি অনুষ্ঠানে যান। ওই বহরে নিহত রাসেদও ছিলেন। অনুষ্ঠান শেষে বিকেলে পাকুলস্না ইউনিয়ন পরিষদের সামনে আসলে আগে থেকেই ওৎ পেতে থাকা আব্দুল হান্নান বাটালুর লোকজন রাসেদের উপর হামলা চালান। দেশীয় অস্ত্র ও ইট দিয়ে মাথাসহ শরীরের বিভিন্নস্থানে উপর্যুপরি আঘাত করে চলে যান ঘাতকরা। পরে স্থানীয়রা উদ্ধার করে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে আইসিইউতে নেওয়া হয় তাকে। এক সপ্তাহ চিকিৎসাধীন থাকার পর গত ১৪ ফেব্রম্নয়ারি মৃতু্য হয় রাসেদের। এঘটনায় একটি হত্যা মামলার প্রস্তুতি চলছে বলে জানায় নিহতের পরিবার।
নিহতের পরিবার ও স্থানীয়রা জানায়, পাকুলস্না বহুমুখি উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির পদ নিয়ে দ্বন্দ্বেই রাসেদকে হত্যা করা হয়েছে। রাসেদ মূলত ছাত্রদের পক্ষ নিয়েছিলেন। এছাড়া বিদ্যালয়টির সভাপতি পদ প্রার্থী জামায়াত নেতা মাজেদুর রহমান জুয়েলের সঙ্গে রাসেদের ভালো সম্পর্ক হওয়াটাও ছিল বড় অপরাধ। কারন রাসেদ জুয়েলের সঙ্গে মিশতেন। নিহতের পরিবার অভিযোগ করে জানায়, বিএনপি নেতাদের সামনেই বাটালু বাহিনী রাসেদকে মারধোর করল, কিন্তু কেউ তাকে বাচাঁতে গেল না। এছাড়া হাসপাতালে ৭ দিন ভর্তি থাকলো সেখানেও কোন নেতাই দেখতে যায়নি।
এ ঘটনায় বগুড়া শহর জামায়াতের মাজেদুর রহমান জুয়েল বলেন, 'বর্তমানের এমন পরিস্থিতিতেও জ্যাকি নামের একজন জাসদ নেতা বিদ্যালয়ের সভাপতি হতে চান। তাকে সুপারিস করেন উপজেলা বিএনপির সভাপতি জাকির। এবং নিয়ন্ত্রন করেন ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি বাটালু। এসব কারনেই এই হত্যাকান্ড হয়। আমি এর সুষ্টু তদন্তের মাধ্যমে বিচার প্রার্থণা করছি।'
সাধারণ সম্পাদক জিয়াউল হক লিপ্পন বলেন, 'রাসেদ আমাদের সাথেই দাওয়াত খেয়ে আসার পরেই জাকির গ্রম্নপের বাটালু বাহিনী তার উপর হামলা চালায়। এমনকি একটি বাড়িতে লুকিয়েও শেষ রক্ষা হয়নি তার।' বাচাঁনোর চেষ্টা করা হয়নি এবং হাসপাতালে দেখতে যাওয়া হয়নি প্রশ্নের উত্তরে এই নেতা বলেন, 'বাঁচানোর চেষ্টা করেছি তবে সমালোচনার ভয়েই হাসপাতালে দেখতে যাইনি। কারন তিনি জামায়াত নেতা জুয়েলের সঙ্গে ঘুড়ে বেড়ান।'
উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক আব্দুল হান্নান বলেন, 'রাসেদ পাকুলস্না ইউনিয়ন যুবদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য। তার হত্যার সঙ্গে জড়িতদের উপযুক্ত শাস্তি দাবি করছি।'
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও মিডিয়া মুখপাত্র সুমন রঞ্জন সরকার বলেন, এঘটনায় একটি হত্যা মামলার প্রস্তুতি চলছে। জড়িতদের গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত আছে।