বৃহস্পতিবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৫, ১০ বৈশাখ ১৪৩২

হাওড়ে শুকিয়ে যাচ্ছে জলমহাল, সেচ সংকটে কয়েকশ' হেক্টর জমি

সোহেল তালুকদার, শান্তিগঞ্জ (সুনামগঞ্জ)
  ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
হাওড়ে শুকিয়ে যাচ্ছে জলমহাল, সেচ সংকটে কয়েকশ' হেক্টর জমি
সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জে সুরাইয়া বিল জলমহাল পলি পড়ে এভাবেই ভরাট হয়ে গেছে -যাযাদি

সুনামগঞ্জ জেলার শান্তিগঞ্জ উপজেলার শিমুলবাক ইউনিয়নের জীবদাড়া বাজারের দক্ষিণের হাওড়ের কয়েকশ' হেক্টর বোরো ফসলি জমিতে সেচ সংকট দেখা দিয়েছে। পানির অভাবে ফেটে গেছে ফসলি জমি। হাওড়ের জলমহালগুলোতে পানি শুকিয়ে যাওয়ায় কৃষক পরিবারগুলো পড়েছেন চরম বিপাকে। হুমকির মুখে পড়েছে কয়কেশ' হেক্টর বোরো জমির ফসল।

স্থানীয়রা বলছেন, জলমহালগুলো ভরাট হয়ে যাওয়ায় এই হাওড়ের সেচ সংকট দেখা দিয়েছে। জলমহালগুলো দ্রম্নত খনন না করলে আগামীতে এই হাওড়ের ফসলি জমিগুলো অনাবাদি হয়ে পড়বে বলে আশংঙ্ক করছেন তারা।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলার শিমুলবাক ইউনিয়নের উকারগাঁও মৌজার মোট ১৩.৩০ একর নিয়ে সুরাইয়া বিল জলমহালটি বিদ্যমান। ২০২৩ সালের ৫ সেপ্টেম্বর ইউএনও কার্যালয়ের ৮৯৪ নং স্মারকে জলমহালটি ১৪৩০-১৪৩২ বাংলা সনের জন্য জ্বীবদাড়া আদর্শ মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি লি. ইজারা পায়।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, জ্বীবদাড়া বাজারের দক্ষিণের হাওর জুড়ে কয়েকশ' হেক্টর জমিতে বোরো ফসলের মাঠ, সবুজ রঙের ধান গাছগুলো বাতাসে দোল খাচ্ছে। বিস্তীর্ণ হাওড় জুড়ে বোরো ফসল রোপণ করেছেন কৃষকরা। তবে জমিতে চরম সেচ সংকট দেখা দিয়েছে। হাওড়ের মধ্যখানে 'সুরাইয়া বিল' জলমহালটিতে কোন পানি নেই, বিল আর জমি চেনা বড় দায়! বিলটি একেবারেই হাওড়ের পলি পড়ে ভরাট হয়ে গেছে। তাই জমি ও জলমাহাল একেবারেই সমানতরাল হয়ে গেছে। কোথাও পানি নেই, যা ছিলো তা গত কয়েকদিনে কৃষকরা ব্যবহার করে ফেলেছেন। 'সুরাইয়া বিল' জলমহালের সমিতির লোকজন কিছু জায়গায় নিজ উদ্যোগে খনন করে ডোবা তৈরি করছেন, তবে সেটি খুবই সীমিত। বিগত বছরগুলোতে সমিতির লোকজন যে কয়েকটি ডোবা তৈরি করেছিলেন তার অধিকাংশই ভরাট হয়ে গেছে। আর যেগুলোতে কিছুটা পানি ছিল সেগুলো ব্যবহার করে ফেলেছেন কৃষকরা।

হাওড়ের কৃষক এনামুল হক জানান, এই হাওড়ে তার অনেক জমি আছে, নিজে অনেক ব্যয় করে জমিগুলো চাষাবাদ করেছেন। এখন হাওড়ে চরম সেচ সংকট দেখা দিয়েছে। সুরাইয়া বিল জলমহালটি ভরাট হয়ে যাওয়ায় এমন দুর্ভোগের সৃষ্টি হয়েছে। এই হাওড়ের কৃষি জমিগুলো বাঁচাতে সুরাইয়া বিল জলমহালটি খনন করতে হবে। জীবদাড়া গ্রামের কৃষক সোহেল মিয়া জানান, জলমহলটি একেবারেই ভরাট হয়ে যাওয়ায় জমি আর বিল সমানতরাল হয়ে গেছে। এ বছর বৃষ্টি না হলে তাদের রোপণকৃত ফসল ঘরে তোলা অনিশ্চিৎ। এই জলমহালটি খনন করা হলে, তারা জমিতে ধান ফলাতে পারবেন, না হলে আগামীতে এই হাওড়ের সব জমিই অনাবাদি থেকে যাবে।

সুরাইয়া বিল জলমাহালের ইজারাদার জীবদাড়া আদর্শ মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি লি'র সভাপতি সাজিরুল ইসলাম বলেন, 'বোরো মৌসুমের শুরুতেই হাওড়ের কৃষকরা আমাদের বিলের পানি দিয়ে চাষাবাদ শুরু করেন। কিন্তু জলমহালটি একেবারেই ভরাট হয়ে গেছে। আমরা প্রতি বছরই নিজেদের অর্থে বিলের কিছু কিছু অংশ খনন করে ডোবা তৈরি করি। কিন্তু এতে সেচের পানির প্রয়োজন মেটে না। বৃহৎভাবে এই জলমহালটি খনন করা প্রয়োজন। চলতি বছরও আমরা এই বিলে পানি ধরে রাখার জন্য আমাদের সীমানায় একটি বাঁধ নির্মাণ করছি। সম্পূর্ণ আমাদের টাকায় সেটি বাস্তবায়ন করছি।'

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আহসান হাবিব বলেন, 'এই হাওড়ে আমাদের প্রচুর পরিমাণে বোরো জমি চাষাবাদ হয়েছে। এখান সেচ সংকট দেখা দিয়েছে। আমরা উপজেলা জলমাল ব্যবস্থাপনা কমিটিকে জানাব। একই সঙ্গে সেচ সংকট নিরসনে বিএডিসিকেও অবগত করব।'

শান্তিগঞ্জ ইউএনও ও জলমহাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি সুকান্ত সাহা জানান, বিলটি ভরাট হওয়ার ফলে এই সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। এ বিষয়ে তার কাছে কেউ লিখিত আবেদন করনেনি। তবে প্রতিটি জলমাহালই খনন করা প্রয়োজন। এলাকার লোকজন বিলটি খননের জন্য আবেদন করলে তা যাচাই বাছাই করে খননের জন্য অনুমতি দেবেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে