সময়ের বিবর্তণে হারিয়ে যেতে বসেছে লাভজনক মিষ্টি আলুর চাষ। ৩দশক আগেও চরাঞ্চলবলে খ্যাত সিরাজগঞ্জের কাজিপুরে অনেক বেশি জমিতে মিষ্টিজাতের আলুর চাষ হলেও বর্তমানে এর চাষ আশঙ্কাজনকভাবে হ্রাস পেয়েছে। মিষ্টি আলুচাষের জমিতেআরও অধিক ফলন ভুট্টাসহ অন্যান্য ফসলের চাষাবাদ শুরু হয়েছে।বেলেদোয়াস জমিতে একসময়ের সমৃদ্ধ এই ফসলচাষের ঐহিত্য হারিয়ে একেবারে শূন্যের কোঠায় যাবার উপক্রম হয়েছে।তুলনামূলক উৎপাদন খরচ কম ও একপ্রকার কোন সার প্রয়োগ ছাড়াই মিষ্টিজাতের আলুরচাষ করতো কৃষকেরা। বিশেষ করে যমুনার চরাঞ্চলসহ বালুময় মাটিতে এর চাষ করতো কৃষকেরা। নিম্ন আয়ের মানুষেরা চাল ও গমের মতই এই আলু কিনে নিয়ে খেয়ে জীবনধারণ করতো। উৎপাদন বেশি অথচ দামে ছিলো চাল গমের তুলনায় অনেক সস্তা। কিন্তুসময়ের বিবর্তণে আলু চাষের জমিতে কৃষক ভুট্টার চাষ করে আলুর চেয়েও অধিক ফলন ওলাভে পেতে শুরু করে। বাজারেও এর চাহিদা কমতে থাকে।
লাভের পাশাপাশি বন্যা কম হওয়া কারণেও আলুচাষাবাদ হ্রাস পেয়েছে বলে কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে। কোন এক সময়ে বাড়ির উঠানে, পতিত পালান জাতীয় জমিতে পরিবারের চাহিদা মেটাতে মিষ্টি আলুর চাষাবাদ হতো। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে অবহেলিত মিষ্টি আলুর চাষ একেবারেই কমে গেছে। বাণিজ্যিকভাবে তো বটেই শখের বশেও কেউ এখন আলুর চাষ করে না।কাজিপুর উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্যমতে বিগত এক যুগে মিষ্টি জাতের আলুর চাষ কমেছে অনেক। আগে প্রতিটি পরিবারেই কম বেশী মিষ্টি আলুর চাষহলেও এখন একেবারেই বন্ধ হয়ে গেছে।কৃষি অফিসের সূত্রমতে গত অর্থবছরে উপজেলার ১০২ হেক্টর জমিতে মিষ্টি আলুর চাষহয়েছিলো। এবছর তা হ্রাস পেয়েত্র ৮৫ হেক্টরে এসেছে। অথচ একযুগ পূর্বেও এরপরিমাণ ছিলো এর তিনগুণ। মাইজবাড়ি চরের আলু চাষী সোহাগ মিয়া জানান. আমার বাপ-দাদারা আগে দশ বিঘাজমিতে মিষ্টি আলু চাষ করতো। এখন ওইসব জমিতে আরও লাভজনক ভুট্টাআবাদ করছি। ঐ কৃষক জানান ভুট্টায় লাভ বেশি কেননা ভুট্টা বছরে দুইবার আবাদ করা যায় অথচ আলু একবারই হয়। তাছাড়া বন্যা না হওয়ায় আলুর রোগ বালাই বেশী হয়,ভুট্টার তেমন কোন রোগ বালাই হয় না। কুনকুনিয়া গ্রামের কৃষক আব্দুস সোবাহান জানান, এবার বিশ শতাংশ জমিতেআলু করেছি। আশাকরি ফলন ভালো হবে। বাজারে প্রতিমণ আলু ১ হাজার থেকে ১২ শ টাকা দরে বিক্রিকরা যাবে। তিনি বলেন প্রতি শতাংশে প্রায় দেড় থেকে দুই মণ আলুর ফলনহয়েছে। কাজিপুর উপজেলা কৃষি অফিসার শরিফুল ইসলাম জানান, লাভ বেশি হওয়ায় কৃষক এখন আলুর জমিতে ভুট্টা ও বাদামের চাষ শুরচ্ করেছে। তবে এখনও আলুর চাষ হচ্ছে।