পটুয়াখালীতে উৎসব মুখর পরিবেশে ফ্রি স্টাইলে ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট উজাড়

প্রকাশ | ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০০:০০

আব্দুস সালাম আরিফ, পটুয়াখালী
পটুয়াখালীতে নিয়মনীতি না মেনে এভাবেই নদীর চরে জেগে ওঠা প্রাকৃতিক বন ধ্বংস করা হচ্ছে -যাযাদি
পটুয়াখালীতে কোন ধরনের নিয়মনীতি না মেনেই নদীর চরে জেগে ওঠা প্রাকৃতিক বন ধ্বংস করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে বনের পাঁচ একর এলাকা থেকে কয়েক হাজার গাছ কেটে নেয় হয়েছে। গত এক মাসেরও বেশি সময় যাবত জেলা শহর লাগোয়া লোহালিয়া নদীর চরে গড়ে ওঠা প্রাকৃতিক বনভূমি ধ্বংসের এই প্রক্রিয়া চলছে। তবে এতদিনেও বনটি রক্ষায় সরকারের কোন পক্ষ থেকেই কোন উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। এ ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়েছেন জেলার বাসিন্দারা। পটুয়াখালী শহরের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া লোহালিয়া নদীর তীড়ে গত দুই দশকে প্রাকৃতিক ভাবে সৃষ্টি হয়েছে এই ছৈালা বন। এই বনে বিভিন্ন প্রজাতির পাখি সহ বন বিড়াল, শিয়ালের মত ছোট ছোট বন্যা প্রাণীর বসবাস। বনটি পটুয়াখালী শহরের প্রাকৃতিক ভারষাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা রাখতো। তবে সাম্প্রতি এই চরের জমি নিজেদের দাবি করে বনের গাছ কেটে ফেলা হচ্ছে। স্থানীয় একাধিক প্রভাশালী গ্রম্নপ গত এক মাসেরও বেশি সময় যাবত বনের গাছ কেটে সাভার করেছেন। বনের গাছ কাটার সঙ্গে জড়িত স্থানীয় বাসিন্ধা সাইদ তালুকদার দাবী করেন এটি তাদের রেকর্ডিও সম্পত্তি। কিন্তু স্যাটেলাইট ইমেজ এর তথ্য বলছে ভিন্ন কথা। ভূমি অফিসের নথি পত্রে এই বনের জমিকে ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি হিসেবে নথিভুক্ত করা হলেও স্যাটেলাইট ইমেজে দেখা যায়, যে স্থান থেকে নিজেদের জমি দাবী করে গাছ কাটা হচ্ছে ২০০৪ সালেও এই স্থানে চরের কোন অস্তিত্ব ছিল না। মূলত ২০১৪ সালের পর থেকেই ধাপে ধাপে এই বাগানটি প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্টি হয়েছে। গুগল আর্থ এর ফুটেজ বিশ্লেষণ করে দেখা যায় গত এক দশক আগে লোহালিয়া নদীর কাঠপট্টি এলাকায় নদীর প্রস্বস্ততা ছিল ৪২৫ মিটার। তবে বর্তমানে সেখানে নদীর প্রস্বস্ততা কমে হয়েছে ১৫৩ মিটার। বাকি ২৭২ মিটার এলাকায় চর পড়ে প্রাকৃতিক ভাবেই ছৈালা বন সৃষ্টি হয়েছে। একইভাবে লোহালিয়া ইউনিয়নের পশ্চিম ও দক্ষিণ পাশ ঘেঁসে সাড়ে ৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এই বনভূমিটি বিস্তৃত হয়েছে। তবে স্বাধীনতার আগ থেকে এই জমি রেকর্ডিও মালিক বলে নথিপত্র উপস্থাপন করে এই চর তাদের বলে দাবী করছে একটি পক্ষ। 'ধ্বংসের ঝুঁকিতে পটুয়াখালীর প্রাকৃতিক বনভূমি ছৌলাবাগান' এই শিরোনামে দৈনিক যায়াযায়দিনের শেষ পাতায় ২০২৪ সালের ১৫ মে একটি রিপোর্ট প্রকাশিত হয়। এরই প্রেক্ষিতে লোহালিয়া নদীর তীরবর্তী চরাঞ্চলে গড়ে ওঠা ১৫৭ হেক্টর প্রাকৃতিক বনাঞ্চলকে ১৯৭২ সালের বন আইনের ৪ ধারায় প্রজ্ঞাপন জারি করে সংরক্ষিত বনভূমি হিসেবে ঘোষণা করার জন্য উপকূলীয় বন বিভাগ পটুয়াখালী থেকে ২০২৪ সালের ২০ আগস্ট জেলা প্রশাসক বরাবর একটি চিঠি দেয়া হয। তবে গত ৬ মাসেও এর কোন অগ্রগতি হয়নি। তবে এরই মধ্যে ৫ আগষ্ট পরবর্তী আওয়ামীলীগ সরকারের পতনের পর থেকেই ধাপে ধাপে বন থেকে গাছ কাটা শুরু হয়। প্রথম দিকে কিছু কিছু গাছ কাটলেও সরকারের পক্ষ থেকে কোন বাঁধা কিংবা নিশেধাজ্ঞা না থাকায় গত এক মাস যাবত অনেকটা উৎসব মুখর পরিবেশে আধুনিক করাত মেশিন দিয়ে চলছে গাছ কাটা। যা ১০ ফেব্রম্নয়ারী দুপুর পর্যন্ত চলমান ছিল। এদিকে গত এক মাসেরও বেশি সময় যাবত গাছ কাটা হলেও এ বিষয়ে কিছুই জানেননা পটুয়াখালী বন বিভাগ। এ বিষয় ১০ ফেব্রম্নয়ারী সকালে বন বিভাগের বক্তব্য জানতে চাইলে নড়েচরে বসেন বিভাগীয় বন কর্মকর্তা। তাৎক্ষনিক ঘটনাস্থলে একটি টিম পাঠিয়ে গাছ এবং গাছ কাটার সরজ্ঞাম জব্দ করা হয়। বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মোঃ সফিকুল ইসলাম বলেন, সাংবাদিকদের মাধ্যমে খবর পেয়ে আমরা সঙ্গে সঙ্গেই অভিযান চালিয়ে দুটি গাছ কাটার মেশিনসহ কুড়াল জব্দ করেছি। ৩৩৭ ঘনফুট গাছ সিস করা হয়েছে। ২.৩৭ হেক্টর এলাকার গাছ কাটার প্রমান পেয়েছি। জমিটি নিয়ে বিরোধ আছে,তবে এর পরও প্রাকৃতিক ভাবে সৃষ্ট বন থেকে গাছ কাটার কোন সুযোগ নেই। যারা গাছ কেটেছে তাদের বিরুদ্ধে আমরা মামলা দায়ের করছি।' জানতে চাইলে পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসক আবু হাসনাত মোহাম্মদ আরেফীন বলেন, 'শহরের পাশে গড়ে ওঠা এই ম্যাগ্রোভ ফরেষ্ট রক্ষায় জেলা প্রশাসন কাজ করছে। ইতিমধ্যে বনবিভাগ আইগত পদক্ষেপ নিয়েছে। এই বনটিকে কিভাবে সংরক্ষণ করা যায় সে বিষয়েও আমরা কাজ করছি।'