নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করেই কুমিলস্নায় বসত বাড়ি ও স্কুলের কাছেই গড়ে উঠেছে অবৈধ ইটভাটা। পরিবেশ দূষণের অন্যতম কারণ এ ইটভাটা। নতুন ইটভাটার ছাড়পত্র দেওয়াও বন্ধ। কিন্তু এসবের তোয়াক্কা না করেই কুমিলস্নায় ইট পোড়াচ্ছে অনেক ভাটা। পরিবেশ অধিদফতর মাঝে মধ্যে অভিযান পরিচালনা করলেও থামছে না দূষণ।
আইন অনুযায়ী, আবাসিক, সংরক্ষিত বা বাণিজ্যিক এলাকা, পৌরসভা বা উপজেলা সদর, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সংলগ্ন এলাকা, কৃষি জমি এলাকায় ইটভাটা স্থাপন করা যাবে না। কিন্তু বাস্তবতা বলছে ভিন্ন কথা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কুমিলস্না আদর্শ সদরের ৬নং জগন্নাথপুর ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডে কালিকাপুর গ্রামে মেসার্স বি.এম.বি ব্রিকস দীর্ঘদিন ধরে কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। ইটভাটার কারণে এলাকায় পরিবেশ বিপর্যয় ও স্বাস্থ্যহানীসহ ব্যাপক অভিযোগ রয়েছে। এই ইটভাটার একশো ফিটের মধ্য বসত বাড়ি ও তিনশো ফিটের মধ্যে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় অবস্থিত। এছাড়াও অর্ধ কিলোমিটারের মধ্যে বালিকা বিদ্যালয়, বাজার, মসজিদ ও আবাসিক এলাকা রয়েছে। এলাকার স্থানীয় বাসিন্দারা মেসার্স বি এম বি ব্রিকস এর দূষণ থেকে পরিবেশ রক্ষার জন্য জেলা প্রশাসক ও পরিবেশ অধিদপ্তর বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন।
এছাড়া ইটভাটার মাটি ও কয়লা পরিবহনের কারণে বালুতুবা থেকে শ্রীপুর এবং শ্রীপুর থেকে চৌয়ারা পর্যন্ত রাস্তাটি চলাচলের অনুযোগী হয়ে পড়েছে। বিগত চার-পাঁচ বছর ধরে এই বি.এম.বি ব্রিকফিল্ডটি বন্ধ করার জন্য স্থানীয়রা জেলা প্রশাসকসহ বিভিন্ন জায়গায় চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছে। সাবেক এমপি বাহার এবং সাবেক চেয়ারম্যান মামুনুর রশীদের প্রভাব খাটিয়ে উল্টো এলাকার লোকজনকে ভয়ভীতি দেখাতেন।
কালিকাপুর গ্রামে কৃষক নুরুল ইসলাম বলেন, ইটভাটার জন্য প্রতি বছরই আমরা কৃষি ফসল ফলাতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। এখন আমের মুকুল আসার সময়। ইটভাটার ধোঁয়ার কারণে আমের মুকুল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। অনেক স্থানে আরও অনেক ফসল উৎপাদন কমে আসে এসব ইটভাটার কারণে। আমরা এসব ইটভাটা বন্ধ করে পরিবেশের সুরক্ষার জন্য প্রশাসনের উদ্যোগে চাই।
জানতে চাইলে স্থানীয় বাসিন্দা (লন্ডন প্রবাসী) কাজী আল মামুন বলেন, আমাদের গ্রামের ২০০ মিটার দূরত্বের মধ্যে মেসার্স বি, এম. বি ব্রিকস নামে একটি ব্রিক ফিল্ড গড়ে উঠেছে। ব্রিক ফিল্ডের কালো ধোয়া ও মাটি বহনকারী বড় বড় ট্রাক চলাচল করায় ধুলাবালির কারণে এলাকার জনগনের স্বাভাবিক জীবন যাপনে ব্যাপক প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হচ্ছে। ব্রিকফিল্ডটির বিষাক্ত ধোয়ার কারণে গ্রামের বেশিরভাগ মানুষ শ্বাসকষ্ট জনিত রোগ, যক্ষা, এলার্জি ও হৃৎপিন্ডের বিভিন্ন সমস্যায় ভুগছে। নবজাতক শিশুরা গর্ভকালীন বিভিন্ন জটিলতা নিয়ে জন্ম হচ্ছে, গাছে ফল ফলানি হচ্ছে না, জমিতে ফসল কম হচ্ছে। এছাড়াও শুনেছি বর্তমান ব্রিকফিল্ডের দক্ষিণে নতুন আরেকটি ব্রিকফিল্ড নির্মাণের প্রস্তুতি চলছে যা পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকিস্বরূপ। আমরা এর প্রতিকার চেয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ও কুমিলস্না জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। কিন্তু বি.এম.বি ব্রিকসের মালিক আজাদ হোসেন প্রভাব খাটিয়ে কোনো তোয়াক্কা না কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। আমরা প্রশাসনের কাছে দ্রম্নত এর প্রতিকার চাই।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) কুমিলস্না অঞ্চলের সাধারণ সম্পাদক আলী আকবর মাসুম বলেন, অবৈধ ইটভাটা বন্ধে আমরা বছরের পর বছর আন্দোলন করে আসছি। তবে আমাদের সে আন্দোলন খুব একটা কাজে আসে না। সম্প্রতি সরকার ইটভাটা বন্ধে কঠোর হয়েছে। আমরা এটাকে সাধুবাদ জানাচ্ছি। কিন্তু মাঠ পর্যায়ে যারা এটা বাস্তবায়ন করবে, তারা সেভাবে করছে বলে মনে হচ্ছে না। তারা লোক দেখানো কিছু অভিযান পরিচালনা করে, হয়তো কিছু জরিমানা করে, কিন্তু আবারও চালু হয়ে যায়। পরিবেশ অধিদফতরের লোকবল, গাড়ি বা অন্য কিছুর যদি কিছু সীমাবদ্ধতা থাকে সরকারের সেটা দ্রম্নত দূর করা উচিৎ।
যদিও পরিবেশ অধিদফতর বলছে, জোরদার করা হচ্ছে অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে অভিযান।
কুমিলস্না পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা মোসাব্বের হোসেন মুহাম্মাদ রাজীব বলেন, সরকার অবৈধ ইটভাটার ব্যাপারে সর্বোচ্চ কঠোর। যারাই অবৈধভাবে ইটভাটা চালাচ্ছে সবগুলো বন্ধ করে দেয়া হবে। পরিবেশ অধিদপ্তর নতুন করে কোন ইটভাটার প্রতিষ্ঠানকে ছাড়পত্র দিচ্ছে না। পরিবেশের ক্ষয়ক্ষতি হলে অবশ্যই ব্রিকস ফিল্ডের বিরুদ্ধে আমরা অভিযান করব। সেটা যে নামের হোক! পরিবেশ রক্ষার্থে আমরা নিয়মিত অনেক ইটভাটা ভেঙেছি, এ অভিযান অব্যাহত আছে।