বৃহস্পতিবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৫, ১১ বৈশাখ ১৪৩২

কেশবপুরে ঘেরের পানি বাড়িঘরে শীতের মধ্যে ভোগান্তিতে মানুষ

তন্ময় মিত্র বাপী, কেশবপুর (যশোর)
  ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
কেশবপুরে ঘেরের পানি বাড়িঘরে শীতের মধ্যে ভোগান্তিতে মানুষ
যশোরের কেশবপুরে ঘেরে পানিতে ডুবে যাওয়া ঘরবাড়ি -যাযাদি

যশোরের কেশবপুর উপজেলার বাগডাঙ্গা ও মনোহরনগর গ্রামের মানুষদের শীতকালেও বসত বাড়িতে পানির সঙ্গে মোকাবেলা করেই টিকে থাকতে হচ্ছে। বসত বাড়িতে পানি উঠে আসায় তীব্র শীতের ভেতর গ্রাম দুটির মানুষ চরম ভোগান্তিতে রয়েছেন। কাঁদাপানির কারণে তাঁদের পরিবেশ কলুশিত হয়ে পড়েছে। ঘর থেকে বের হতে বাঁশের সাঁকোই এখন তাদের ভরসা। স্যাঁতস্যাঁতে পরিবেশে মানুষের স্বাস্থ্যগত দিকও এখন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। বাগডাঙ্গা-মনোহরনগর খাল দিয়ে পানি নিষ্কাশিত হতে না পেরে গ্রামের মধ্যে ঢুকে পড়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

সরেজমিন উপজেলার পাঁজিয়া ইউনিয়নের মনোহরনগর-বাগডাঙ্গা গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, মানুষের বাড়িতে এখনো পানি থই থই করছে।

বাঁশের সাঁকো পেরিয়ে তাদের দৈনন্দিন কাজ করতে হয়। মনোহরনগর গ্রামের প্রসিত হালদারের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, উঠানে পানি ও কাঁঁদায় একাকার হয়ে রয়েছে। ওই গ্রামের নমিতা হালদার (৩৮) বলেন, বাগডাঙ্গা-মনোহরনগর খাল দিয়ে পানি নিষ্কাশিত হতে না পেরে গ্রামের মধ্যে ঢুকে পড়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। গত সাত মাস ধরে এলাকাটি পানিবন্দি। গ্রামের যুবক পলস্নব রায় জানায়, খাল পলিতে ভরাট হওয়ায় পানি সরতে না পেরে উপরের ঢল পানি তাদের বাড়িতে উঠে এসেছে। তীব্র শীতের মধ্যে বাড়িতে পানি উঠে আসায় তাদের সীমাহীন কষ্টের মধ্যে পড়তে হয়েছে।

একই গ্রামের স্কুল পড়ুয়া ছাত্রী অহনা সরকার সাঁকো পেরিয়ে সড়কে উঠার সময় জানায়, এ পরিবেশে তাদের পড়াশুনা করতে খুবই সমস্যায় পড়তে হয়। পানির কারণে পরিবেশ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে।

বাগডাঙ্গা গ্রামে কৃষক নিহার সরকার ও তার স্ত্রী সবিতা সরকার বলেন, গত শ্রাবণ মাস থেকে তাদের বাড়িতে পানি। পানির সঙ্গেই তাদের সংগ্রাম করে টিকে থাকতে হচ্ছে। কাঁদাপানিতে পরিবেশ হয়ে পড়েছে কলুশিত। এলাকাটি মাসের পর মাস পানিবন্দি থাকায় মশার উপদ্রব বৃদ্ধি পেয়েছে। গরু ছাগল নিয়ে পড়তে হয়েছে তাদের বিপাকে। দীর্ঘদিন ধরে এলাকার জলাবদ্ধতা নিরশণের দাবি করা হলেও এ সমস্যার সমাধান হচ্ছে না।

২৭ বিল বাঁচাও আন্দোলন কমিটির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, পলিতে নদনদী ভরাট হওয়ায় জলাবদ্ধতার পানি সরছে না। তারপরও মাছের ঘেরের পানি সেচ দিয়ে মনোহরনগর-বাগডাঙ্গা খালে ফেলায় পানি উপচে পড়ে গ্রাম দুটিতে ঢুকে পড়ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ওই এলাকায় প্রায় ২ ইঞ্চি পানি বৃদ্ধি পেয়েছে।

বাগডাঙ্গা গ্রামের ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার বৈদ্যনাথ সরকার বলেন, খাল দিয়ে পানি সরতে না পারায় ঘেরের সেচ দেওয়া ঢল পানি গ্রামের মানুষের বাড়ি ঘরে ঢুকে পড়ছে। গ্রাম দুটির প্রায় তিন শতাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। শীতকালে পানির মধ্য দিয়ে যাতায়াত করতে ওই সমস্ত বাড়ির মানুষদের পড়তে হচ্ছে চরম বিপাকে। পঁচা কাদাপানির কারণে মানুষের জীবনে এক দুর্বিষহ পরিবেশ নেমে আসে। যে কারণে মানুষের স্বাস্থ্যগত দিকও এখন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে।

২৭ বিল বাঁচাও আন্দোলন কমিটির আহ্বায়ক বাবর আলী গোলদার বলেন, মাছের ঘেরের পানি সেচ দিয়ে বাগডাঙ্গা-মনোহরনগর খালে ফেলায় পানি উপচে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। পাশাপাশি নদ-নদী পলিতে ভরাট হওয়ায় পানি নিষ্কাশিত হতে না পেরে এলাকার বিলগুলোতে সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতা। যে কারণে এলাকার কৃষকরা বোরো আবাদ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তিনি আরও বলেন, হরিহর নদ, আপার ভদ্রা, বুড়িভদ্রা ও শ্রীহরি নদী খননসহ ভবদহ অঞ্চলের যে কোন একটি বিলে টিআরএম চালু করা না হলে এলাকার এ সমস্যা সমাধান হবে না।

এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী সুমন সিকদার বলেন, হরিহর নদ, বুড়িভদ্রা নদী, আপার ভদ্রা ও শ্রীহরি নদী খননের জন্য প্রকল্প ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট প্রেরণ করা হয়েছে। প্রকল্প অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। নদ-নদী খনন হলেই এলাকায় আর জলাবদ্ধতা থাকবে না।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে