শুক্রবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৫, ১১ বৈশাখ ১৪৩২

চৌদ্দগ্রামে সাব-রেজিস্ট্রার, দলিল লেখক দ্বন্দ্বে রেজিস্ট্রি বন্ধ

চৌদ্দগ্রাম (কুমিলস্না) প্রতিনিধি
  ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
চৌদ্দগ্রামে সাব-রেজিস্ট্রার, দলিল লেখক দ্বন্দ্বে রেজিস্ট্রি বন্ধ

কুমিলস্নার চৌদ্দগ্রামে সাব রেজিস্ট্রার, দলিল লেখক দ্বন্দ্বে বন্ধ রয়েছে দলিল রেজিস্ট্রি কার্যক্রম। টানা ৪ কর্মদিবস পেড়িয়ে গেলেও এখনো কাজে ফেরেননি চৌদ্দগ্রাম সাব রেজিস্ট্রার মেহেদী হাসান (অতিরিক্ত দায়িত্ব)। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে আসা দলিল দাতা, গ্রহীতা ও নকল দলিল উত্তোলনকারীরাসহ বিভিন্ন সেবা গ্রহীতারা।

একাধিক দলিল লেখক জানিয়েছেন, 'দলিল রেজিস্ট্রিতে বাড়তি টাকা দাবি করার অভিযোগে দলিলের পার্টি সাব রেজিস্ট্রারের সঙ্গে খারাপ আচরণ করেছেন। সাব রেজিস্ট্রার মেহেদী হাসান জানান, দুই জায়গায় একসঙ্গে দায়িত্ব পালন সম্ভব হচ্ছে না বিধায় চৌদ্দগ্রাম অফিসে যাচ্ছি না।'

সাব-রেজিস্টার অফিস সূত্রে ও সরেজমিনে জানা গেছে, গুনবতী সাব-রেজিস্টার অফিস দলিল লেখক সমিতির অন্তর্ভুক্ত দলিল লেখক মোহাম্মদ হানিফ গত ৪ ফেব্রম্নয়ারী বিকেলে পৌরসভার ২২ শতক জায়গার দলিল সম্পাদনের জন্য সাব রেজিস্টারের খাস কামরায় প্রবেশ করেন। এসময় অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা সাব-রেজিস্টার মেহেদী হাসান ত্রুটিপূর্ণ কাগজ দেখে ভেন্ডার হানিফকে শতভাগ নির্ভুল দলিল নিয়ে আসতে বলেন।

এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ভেন্ডারসহ দলিল গ্রহীতা পৌরসভার চান্দিশকরার শহীদ সাব-রেজিস্টারকে লাঞ্চিত করেন। এ ঘটনার জেরে ১০ ফেব্রম্নয়ারী পর্যন্ত সাব-রেজিস্টার কর্মস্থলে আসেননি। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন দলিল দাতা ও গ্রহীতারা।

২২ শতক জায়গার কবলা দিতে আসা বুদ্দিন গ্রামের রফিকুল ইসলাম, শফিকুল ইসলাম, ফরিদা বেগম জানান, 'আমরা পূর্বনির্ধারিত বুধবার (৫ ফেব্রম্নয়ারি) একটি দলিল সম্পাদনের জন্য এসেছিলাম ঢাকা থেকে। কিন্তু এখানে জানলাম অভ্যন্তরীণ ঝামেলায় সাব-রেজিস্টার অনুপস্থিত। কর্মসূত্রে আমরা সবাই ঢাকা থাকি, মাইক্রোবাস ভাড়া করে ঢাকা থেকে এসেছি, এখন দলিল সম্পাদন না করেই ফিরে যেতে হবে।'

উপজেলার আলকরা ইউনিয়নের আলকরা গ্রাম থেকে আসা আবদুল মমিন বলেন, 'টাকার জন্য জমি বিক্রি করেছি, কিন্তু আজকে সাব-রেজিস্টার না থাকায় ফিরে যেতে হচ্ছে। জমি রেজিস্টি ছাড়া ক্রেতা টাকা দিচ্ছে না। বিপদের সময় টাকা-ই যদি না পাই তাহলে জমি বিক্রি করে কী লাভ হলো!'

দলিল লেখক মমিনুল ইসলাম জানান, 'বুধবার আমার দুইটি দলিল রেজিস্ট্রি হওয়ার কথা ছিল। যার একটি বন্টননামা। বন্টননামার একজন অংশীদার আগামীকাল দেশের বাইরে চলে যাবে। কয়েকজন আসছেন শহর থেকে। এমন পরিস্থিতিতে সবাই ক্ষতিগ্রস্ত।'

আরেক দলিল লেখক মোহাম্মদ রায়হান জানান, 'সাব রেজিস্ট্রারে সঙ্গে দুর্ব্যবহারের কারণে তিনি অফিসে আসছেন না বলে জেনেছি।'

দলিল লেখক মোহাম্মদ হানিফ বলেন, 'দলিল গ্রহীতাদের সঙ্গে রেজিস্ট্রারের ঝামেলা হয়েছে। ওইদিন ঘটনার সময়ে সমিতির সভাপতি শাহনেওয়াজ শাহিন ও দলিল লেখক মমিনুল ইসলাম ঘটনাস্থলে ছিলেন। আমাদের সঙ্গে কোন ঝামেলা হয়নি। সম্ভবত ব্যক্তিগত কারণে তিনি (সাব রেজিস্ট্রার) আসছেন না।'

চৌদ্দগ্রাম দলিল লেখক সমিতির সভাপতি শাহনেওয়াজ শাহিন জানান, 'সন্ধার পরে হওয়ায় ওইদিন (৪ই ফেব্রম্নয়ারী) আমি ঘটনাস্থলে ছিলাম না। পরে জেনেছি। তবে ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে সাব রেজিস্ট্রার অফিসে আসছেন না বলে জেনেছি।' চৌদ্দগ্রাম সাব রেজিস্ট্রার মেহেদী হাসান (অতিরিক্ত দায়িত্ব) জানান, 'এখানে কাজ করার বিষয়ে মনমানসিকতা নাই। আমি ইতোমধ্যেই বিষয়টি জেলা রেজিস্ট্রার মহোদয়কে জানিয়েছি। এখন থেকে নিয়মিত গুনবতী সাব রেজিস্ট্রি অফিসে দায়িত্ব পালন করব।'

জেলা রেজিস্ট্রার মনিরুল হাসান বলেন, 'মেহেদী হাসান অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে চৌদ্দগ্রাম সাব রেজিস্ট্রি অফিসে দায়িত্ব পালন করছেন। গত ৪ ফেব্রম্নয়ারী জনৈক দলিল লেখক ও তার দলিলের গ্রহীতা কর্তৃক মেহেদী হাসানকে লাঞ্চিত করা হয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে চৌদ্দগ্রাম সাব রেজিস্ট্রি অফিসে অনেকেই (সাব রেজিস্ট্রার) আসতে রাজি হচ্ছেন না। আশা করছি দ্রম্নতই সমস্যার সমাধান হবে।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে