সদরপুরে অবৈধ যানবাহনে বাড়ছে দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি
প্রতিকারে স্থানীয় প্রশাসনের নেই কোনো ব্যবস্থা
প্রকাশ | ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
সদরপুর (ফরিদপুর) প্রতিনিধি
ফরিদপুরের সদরপুর উপজেলার আঞ্চলিক সড়কসহ বিভিন্ন সড়কগুলোতে দিনরাত অবাধে চলছে অবৈধ নছিমন, বালুবাহী ড্রাম ট্রাক ও ভটভটি। বেশ কয়েকবার বন্ধ করার পদক্ষেপ নিলেও বাস্তবে তা কার্যকরে ব্যবস্থা গ্রহনে কোনো পদক্ষেপ গ্রহন করা হচ্ছে না। সরকারিভাবে অবৈধযানের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও উপজেলা শহরে বেশ দাপটের সঙ্গেই চলছে এসব নিষিদ্ধ যান। অবাধে একদিকে অদক্ষ কিশোর চালক অন্যদিকে রেজিস্ট্রেশন বিহীন থাকায় প্রতিনিয়ত বাড়ছে সড়ক দুর্ঘটনা। দুর্ঘনায় অকালে বেশির ভাগ কিশোররা প্রানহারানোর পাশাপাশি বাড়ছে আহতদের সংখ্যা।
সরজমিনে দেখা যায়, কৃষি কাজে বা মালামাল বহনের যানবাহন এখন উপজেলা শহর ও প্রান্তিক গ্রাম পর্যায়ে অবৈধ যানের কারনে হুমকিতে পড়েছে সড়কে চলাচলকারীরা। কৃষি জমি চাষাবাদের জন্য ট্রাক্টরসহ অন্যান্য উপকরণ কৃষক ক্রয় করলেও কিনলেও এখন অসাধু মুনাফাভোগী ব্যবসায়ী বা ইটভাটা মালিকরা গাড়ি বানিয়ে মাটি কাটার কাজে ব্যবহার করছে।
গত ২ ফেব্রম্নয়ারি সন্ধ্যায় সদরপুর আটরশি আঞ্চলিক সড়কে নসিমন ও মাহিন্দ্রার মুখোমুখি সংঘর্ষে সঞ্জয় দরানী (২৪) নামে এক নসিমন চালক মারা যান। ২১ জানুয়ারি সদরপুর কৃষ্ণপুর আঞ্চলিক সড়কে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ও মোটরসাইকেল মুখোমুখি সংঘর্ষে আসিফ খাঁন (১৯) নামের এক কলেজ ছাত্র মারা যান। গত বছর ৪ ডিসেম্বর সদরপুর পুখুরিয়া আঞ্চলিক সড়কে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় আসরাফুল আলম আশিক নামের এক ব্যক্তি মারা যান। ২১ সেপ্টেম্বর সদরপুর কৃষ্ণপুর আঞ্চলিক সড়কে মোটরসাইকেল ও ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে আসলাম শেখ (২২) নামে এক ব্যক্তি মারা যান। ৭ আগস্ট পিয়াজখালী মনিকোঠা আঞ্চলিক সড়কের মোটরসাইকেল ও নসিমনের মুখোমুখি সংঘর্ষে শাওন খান (২০) নামের এক যুবক মারা যান এবং দুই জন গুরুতর আহত হন। এ ছাড়াও বিগত বছর গুলোতে অসংখ্য সড়ক দুর্ঘটনায় সদরপুর উপজেলায় বহু মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন।
আরও দেখা যায়, এসব অবৈধ গাড়ি চালকেদের কোন দক্ষতা না থাকায় যেখানে সেখানে দাঁড়িয়ে যায়। হঠাৎ করেই নিয়ে বসেন ইউটান। অদক্ষ চালক ও কাগজপত্র বিহীন যানবাহনে দাপটে এখন ভয়াবহ রূপ নিয়েছে সড়ক দুর্ঘটনা। মৃতু্যর পাশাপাশি প্রতিদিনই দুর্ঘটনায় পঙ্গুত্ববরণ করেছেন। অবৈধ এসব যানবাহনের কারণে এখন সদরপুর উপজেলার প্রধান সড়কগুলোতে প্রতিনিয়ত যানজট সৃষ্টি হচ্ছে।
সদরপুর বাজারের ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, অদক্ষ চালক আর অবৈধ গাড়ির কারণে সদরপুর বাজারের সামনের সড়ক থেকে কলেজ মোড় যেতে ২ মিনিটের রাস্তায় ১০ থেকে ১৫ মিনিট সময় লাগে। কখনো কখনো অতিরিক্ত জ্যামে ২০ থেকে ২৫ মিনিটও লেগে যায়। রাস্তায় এখন বহু ইজিবাইক চলাচল করে। এই ইজিবাইক গুলো নির্দিষ্ট স্ট্যান্ডে অপেক্ষা না করে রাস্তার দুই পাশে দাড়িয়ে অপেক্ষা করে এবং চালকেরা রাস্তার মধ্যেই যাত্রী ওঠা-নামা করান। রাস্তা এখন ইজিবাইক, ড্রাম ট্রাক, নসিমন ও ভটভটির দখলে। এ বিষয়ে আমরা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
সদরপুর উপজেলা যুবদলের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক মুন্সী ইশরাত হোসেন বলেন, সদরপুরে প্রতিটি ইট ভাটার মালিকেরা ড্রাম ট্রাক ও ভটভটির বোঝাই করে বিভিন্ন এলাকা থেকে মাটি সংগ্রহ করে উপজেলার প্রধান-প্রধান সড়ক ব্যবহার করে এসব মাটি তাদের ইট ভাটায় নেয়। ট্রাকে করে এই মাটি নেওয়ার সময় বহু মাটি সড়কে পরে যায়। পরে একটু বৃষ্টি হলেই সড়কে পরে থাকা এসব মাটি কাঁদামাটিতে রূপ নেয়। এই কাঁদামাটির কারণে সড়ক দিয়ে চলাচলে সমস্যা হয় এবং এই মাটিতে স্পি করে ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে। এ বিষয়ে ইট ভাটার মালিকেরা কোন পদক্ষেপই নেয় না।
ঢেউখালী ইউনিয়নের বাসিন্দা আছিরন বিবি বলেন, 'রাত-দিন সব সময় আমাদের বাড়ির সামনের সড়ক দিয়ে বালু বোঝাই ট্রাক চলাচল করে। এসব ট্রাকের বালু খোলা অবস্থায় থাকে। ট্রাকে করে এই বালু নেওয়ার সময় আমাদের ঘরবাড়ি ও আসবাবপত্র সব ধুলায় ভরে যায়। রাতভর এই ট্রাক চলাচলের শব্দে আমরা ঠিকমতো ঘুমাতে পারি না। শুধু তাই নয়, বাড়ির সামনের সড়কে চলাচলের সময় আমরা খুব ভয়ে থাকি। কখন যে এই ট্রাকগুলো আমাদের চাপা দিয়ে দিবে কে জানে।' এ ব্যাপারে সদরপুর থানার অফিসার্স ইনচার্জ আ. মোতালেব হোসেন বলেন, 'আমরা অবৈধ যানবাহন বন্ধে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছি। ইতিমধ্যে মাটি বোঝাই ১২ টি ড্রাম ট্রাক জব্দ করে থানায় নিয়ে এসেছি। নিয়মিত মামলা হয়েছে এসব ট্রাকের বিরুদ্ধে। অবৈধ যান চলাচল বন্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।'