বিষবৃক্ষ তামাক ছেড়ে সবজি চাষে ফিরেছেন কৃষকরা

প্রকাশ | ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০০:০০

আজগর আলী খান, রাজস্থলী (রাঙামাটি)
রাঙামাটির বিলাইছড়ি উপজেলার ফারুয়া ইউনিয়নের রাইংখ্যং নদীর পারে শিম চাষের সমারোহ -যাযাদি
দুর্গম পাহাড় ঘেষে এঁকেবেঁকে চলে গেছে রাইংখ্যং নদী। পাশের উর্বর জমিতে চাষ চলছে শিম ও বাদামের। বৃহস্পতিবার এমন দৃশ্য প্রতিবেদকের নজরে পরে রাঙামাটির বিলাইছড়ি উপজেলার দুর্গম পার্বত্য ফারুয়া এলাকায়। এ সময় কথা হয় শিম চাষি পান্‌জা মনি তনচংগ্যার সঙ্গে। তিনি বলেন, রাইংখ্যং নদীর পারে এবার ৬০ শতক জমি বর্গা নিয়েছি। ভালো ফলনের জন্য ভিটামিনও প্রয়োগ করতে হয়েছে। যদিও বর্ষায় আসা পলিমাটির কারণে বেশ উর্বরা রাইংখ্যং নদীতীরের জমিগুলো। ইতিপূর্বে এখানে ব্যাপক মাত্রায় আগ্রাসন ছিল তামাকের। ১৫ বছরে বদলে গেছে চিত্র। সম্প্রতি দু'দিন ঘুরে এ নদীর প্রায় ৬০ কিলোমিটার অংশের দুই পাশেই কৃষিজমি দেখা যায় শিম আর শিম গাছে গাছে ভরপুর। বিপুল ফলনে হাসিও ফুটেছে চাষিদের মুখে। ফারুয়ার কয়েকজন কৃষাণি এ প্রতিবেদককে জানান, পুরো এলাকায়ই কৃষকেরা শিম ও বাদামসহ নানা জাতের সবজি চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন। তারা গত বছর সামান্য জমিতে চাষ করেন, এবারও করেছেন। চলতি মৌসুমে ফলন আগের চেয়ে ভালো হয়েছে। তারা জানান, উপজেলা কৃষি বিভাগের কোন কর্মকর্তা-কর্মচারী বছরে দুই একবার দেখা দিলেও আর তাদের চোখে পড়ে না। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, এ মৌসুমে বিলাইছড়ির ফারুয়া ইউনিয়নে লতাজাতীয় দেশীয় শিম চাষ হয়েছে ৭৫ হেক্টর জমিতে। এ ছাড়া ৩০ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ হয়েছে ফরাস শিমের। এ ছাড়া ২২৬ হেক্টর জমিতে অন্যান্য সবজি, ৬৫ হেক্টর জমিতে চীনাবাদাম ও ২৬ হেক্টর জমিতে ভুট্টার আবাদ হয়েছে। অপরদিকে, এগুজ্জেছড়ির হেডম্যানের ভাষ্য অনুযায়ী তাদের জরিপে ফারুয়া এলাকায় রাইংখ্যং নদীতীরের ১৮০০ হেক্টরের বেশি জমিতে শিম, বাদাম ও সবজির চাষ হয়েছে। অথচ এসব জমিতে ১৯৮০ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত তামাকের আগ্রাসন ছিল। কিছু কিছু কৃষক বলেন, শিমক্ষেত ইঁদুরের জ্বালা যন্ত্রণার কারণে নষ্ট হয়েছে। এ জন্য কৃষি অফিসের সহায়তা চান তারা। বুধ ও বৃহস্পতিবার সরেজমিন গিয়ে ফারুয়ার চাষিদের এই পরিবর্তিত জীবনের চিত্র দেখা যায়। বিলাইছড়ি উপজেলা সদর থেকে ফারুয়া বাজার পর্যন্ত রাইংখ্যং নদীর দুই তীরেই শীতকালীন নানা শাকসবজি চাষ করতে দেখা যায়। দিগন্তজুড়ে শুধুই সবুজের সমারোহ। নদীর দুই ধারে কোথাও পতিত জমি নেই। একসময় কৃষকরা না বুঝে লাভের আশায় তামাকের চাষ করতেন এসব জমিতে। ক্ষতির কথা মাথায় চিন্তা করে আগ্রহ হারান তারা। পরে শিমসহ সবজি চাষ শুরু করেন। এখন নদীর দুই পাড়ে কোথাও তামাকের চিহ্ন নেই। অন্‌জনা তনচংগ্যা (৭০) বছর বয়সী এক কৃষাণী বলেন, গত বছর এক কানি জায়গায় শিম চাষ করে লাখের অধিক টাকা আয় করেন। এ জমির আয়েই পরিবার চলে তার। এ বছরও শিম বিক্রি করে লাখের কাছাকাছি টাকা পেতে পারেন। অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা উপজেলা কৃষি অফিসার শাহানাজ আকতার বলেন, ফারুয়ায় রাইংখ্যং নদীর দুই পাশে বর্ষাকালে পানি বাড়ার সময় প্রচুর পলি জমে। পানি কমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এসব চর বা জমিতে শিম ও বাদামের আবাদ করেন চাষিরা। তাই ফলনও ভালো হয়। শিম ও বাদাম চাষ এখন ফারুয়া এলাকার জন্য নতুন পরিচিতি লাভ করেছে। তিনি বলেন, 'আমি উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের বিষয়টি সম্পর্কে জেনেছি, তাদের ফারুয়া এলাকার কৃষকদের সঙ্গে পরামর্শ প্রদানসহ বিভিন্ন কাজে সহযোগিতা করার জন্য নির্দেশ দিয়েছি।' ফারুয়া মৌজার হেডম্যান ও সাবেক ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তেজন্দ্র লাল তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, ১০-১৫ বছর ধরে কৃষকরা তামাক থেকে মুখ ঘুরিয়ে নেন। এখন তাদের জমিতে শিম ও চীনাবাদামের চাষ হচ্ছে প্রচুর।