সোমবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৫, ১৫ বৈশাখ ১৪৩২

কেশবপুরে সুই সুতার বুননে ভাগ্য বদল অর্ধশত নারীর

তন্ময় মিত্র বাপী, কেশবপুর (যশোর)
  ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
কেশবপুরে সুই সুতার বুননে ভাগ্য বদল অর্ধশত নারীর
যশোরের কেশবপুরে আর্থিক স্বচ্ছলতা আনতে সুচের ফোঁড়ে পোশাকের ওপর নানা রকমের কারুকাজ ফুটিয়ে তুলছেন নারীরা -যাযাদি

জীবন-জীবিকার তাগিদে স্বামী-সন্তানের কথা চিন্তা করে ইচ্ছাশক্তি আর সুই সুতার বুননের দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে ভাগ্য ফেরাচ্ছেন কেশবপুরের হাবাসপোল এলাকার অর্ধশত নারী। সংসারের আর্থিক স্বচ্ছলতা আনতে সুচের ফোঁড়ে ফোঁড়ে শাড়ি, পাঞ্জাবী, কামিজের ওপর ফুটিয়ে তুলছেন নানা রকমের কারুকাজ। পরিবার সামলিয়ে অবসরে বিভিন্ন ধরণের পোষাকে সেলাইয়ের কাজ করে অনেকে মুক্তি পেয়েছেন দারিদ্র্যের হাত থেকে। পাশাপাশি এ শিল্পকে ঘিরে কর্মসংস্থান সৃষ্টিতেও সম্ভাবনার নতুন দ্বার উন্মোচন করেছেন তারা।

জানা গেছে, ২০০৭ সালের দিকে উপজেলার হাবাসপোল এলাকার মিতু বেগম যশোর থেকে শাড়ি, পাঞ্জাবী, কামিজসহ বিভিন্ন পোষাকের ওপর সুই সুতার বুননের নকশার কাজ শিখে এলাকার নারীদের শেখান। এসময় তিনি ৪০/৫০ জন নারীকে নিয়ে একটি দল গঠন করে বিভিন্ন জায়গা থেকে নকশার কাজের অর্ডার এনে দলের সদস্যদের দিয়ে করাতে থাকেন। সংসারের আর্থিক সচ্ছলতা আনতে নারীরা এ কাজে আগ্রহী হয়ে ওঠেন। মিতু বেগম হয়ে ওঠেন এ উপজেলার প্রথম সারির একজন সফল নারী উদ্যোক্তা। তিনি ও তার দলের সদস্যদের সুই সুতার কাজের সুনাম নিজ এলাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় পরিচিতি লাভ করে। পরবর্তীতে সাংসারিক ঝামেলার কারণে সুচের ফোঁড়ের কাজ থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেয় মিতু বেগম।

পরবর্তীতে এ নারী দলের নের্তৃত্বে আসেন ওই গ্রামের আরেক উদ্যোক্তা লিপিয়া বেগম। এলাকায় এ কাজ ধরে রাখতে তার সাথে পরিচয় ঘটে বেসরকারি সংগঠন ব্র্যাক পরিচালিত আয়শা আবেদ ফাউন্ডেশন প্রকল্পের কর্মকর্তাদের। এরপর থেকে তাকে আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি। এসময় আয়শা আবেদ ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে হাবাসপোল এলাকায় সুই সুতার কাজে দক্ষ নারীদের নিয়ে ৫০ জনের একটি দল গঠন করা হয়। হাবাসপোলে এ ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে একটি টিন সেডের ঘরে কেন্দ্র করে সেখানে চলে নকশার কার্যক্রম।

লিপিয়া বেগম জানান, প্রতিদিন সংসারের কাজের ফাকে সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত কেন্দ্রে এসে তাদের সুই সুতার কাজ করতে হয়। আয়শা আবেদ ফাউন্ডেশন বিভিন্ন কোম্পানীর নকশার কাজ ধরে তাদের দিয়ে বাস্তবায়ন করায়। ঘরভাড়া প্রতিমাসে ৭৫০ টাকা দিতে হয়। শাড়ি, পাঞ্জাবী, কামিজ, জায়নামাজ, ফতুয়া, সুতা, নকশাসহ উপকরণ ফাউন্ডেশন দেয়। সুই ও ফ্রেম নিজেদের কিনতে হয়। তারা প্রতিটি শাড়ির মুজুরী ১৬'শ থেকে ১৮'শ টাকা, পাঞ্জাবী, কামিজ, ফতুয়া ২০৮ টাকা থেকে ৮০০ টাকা পর্যন্ত পান। বর্তমান দেশের পরিস্থিতি খারাপ। তাই কাজ কম হচ্ছে। এ ছাড়া বন্যায় তার গ্রাম ৩ মাস তলিয়ে থাকায় কাজ বন্ধ হয়ে যায়। সরকারি পৃষ্টপোষকতা পেলে এ পেশায় আরও নারীর কর্মসংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি প্রচুর আয় করা সম্ভব।

ওই কেন্দ্রের অন্যান্য নারী উদ্যোক্তা তাসলিমা, রেশমা, আসমা, নাজমা বেগম জানায়, একটা পাঞ্জাবী এক দিনে করা যায়। এভাবে তারা প্রতি মাসে অবসর সময়ে অনায়াসে ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা আয় করেন। তারা আরও বলেন, আয়শা আবেদ ফাউন্ডেশন তাদের আয় থেকে প্রতিমাসে ২৫ টাকা করে কেটে নেয়। এঅর্থ দলের সদস্যদের চিকিৎসা খরচ বাবদ দেওয়া হয়। এরমধ্যে মহিলাদের সিজারিয়ান অপারেশন ৮ হাজার টাকা, অ্যাপেন্ডিক্স অপারেশন ৬ হাজার টাকা, জ্বরায়ু অপারেশন ৩০ হাজার টাকাসহ অবসর ভাতা বাবদ এককালিন ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা করে হয়। এতে তারা আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন।

এ ব্যপারে ব্র্যাকের যশোর ডিস্ট্রিক কো অর্ডিনেটর আলমাস বলেন, আমরা নকশাসহ অর্ডারের কাপড়, সুতা দিয়ে তাদের সহযোগিতা করি। বিনিময়ে তারা পারিশ্রমিক পায়। এ ছাড়া এ কাজে নিয়োজিত সকল নারীরা ফ্রি চিকিৎসা সেবা পেয়ে থাকেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে