উপকূলীয় সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলায় সুন্দরবন সংলগ্ন বুড়িগোয়ালিনী ইউপির দাতিনাখালী গ্রামে দুর্যোগ সহিষ্ণু পাট দিয়ে তৈরি জুটিন শিটের পরীক্ষামুলক তিনটি বাসগৃহ নির্মাণ করা হয়েছে এবং দরিদ্র পরিবারের মধ্যে হস্তান্তর করা হয়েছে।
ঘরে বসবাসকারী অর্ধশতাধিক বয়স্ক হাসিনা বেগম,সত্তর বছর বয়স্ক আব্দুল হামিদ ও চলিস্নশ বছর বয়সের শাহজাহান আলী বলেন, পাট দ্বারা তৈরি জুটিনের ঘরে মাত্র কয়েক মাস বসবাস করছি। এই ঘরের বৈশিষ্ট্য হিসাবে তুলে ধরে বলেন, টিন বা এডবেস্টার শিটের ঘরে যেমন গরমের সময়ে গরম বেশ অনুভূত হয় এ ঘরে গরমে কম গরম অনুভূত হয় এবং প্রচন্ড শীতে একটু কম শীত অনুভূত হয়। টিন ও এডবেস্টারের সামান্য কিছু ক্ষতিকর দিক থাকলেও এটির ক্ষতিকর কিছু আছে বলে মনে হয় না। তাছাড়া এটি পরিবেশ বান্ধব ঘর। জুটিনে মরিচা বা জং ধরার কোন রুপ আশংকা নাই। এটি শুধু ঘরের ছাউনির কাজে নয় ঘরের বেড়া বা জানালা তৈরিতেও ব্যবহার করা হয় বা হয়েছে। লবনাক্ত এলাকায় ছাউনিটি টেকসই বলে তারা মনে করছেন।
সরজমিনে দেখা যায়, তিনটি ঘরের তিনটি মডেল তৈরি করা হয়েছে। মাটি থেকে প্রায় ৩ থেকে ৪ ফিট উঁচু করে পাকা ভিত করে ঘরের ভেতর মেঝেসহ বারান্দা পাকা করা হয়েছে। একটি ঘরে কয়েকফিট উঁচু করে ইট দিয়ে ওয়াল তৈরি করে জুটিন দিয়ে ডিজাইন করে বেড়া করা হয়। আর দুটি ঘরে ভিতের উপর থেকে বেড়া, জুটিন দিয়ে ছাউনি সবটাই করা হয়েছে। একটি ঘরে প্রতিবন্ধীদের উঠানামার সুবিধার্তের্ যাম সিঁড়ি করা হয়েছে। দুটি ঘরের সিঁড়িতে রেলিং দেওয়া হয়েছে। সব বাস গৃহের সঙ্গে জুটিন শিটের তৈরি ওয়াশ রুম, স্নানাগার দুই কক্ষ বিশিষ্ট তৈরি করা হয়েছে। একই সঙ্গে সুপেয় পানির জন্য রেইন ওয়াটার হার্ভেস্টিং সিস্টেম তৈরিতে এক হাজার লিটার ড্রাম স্থাপন করা হয়েছে জুটিনের ছাউনিতে। প্রত্যেকটি ঘরে সোলার স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়া অগ্নি নির্বাপকের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে ঘরের সামনে।
জানা যায়, উপকূলীয় এলাকা শ্যামনগরে পাট দিয়ে গৃহ নির্মান একটি গবেষণামূলক প্রকল্প যার নেতৃত্ব দিচ্ছে আইসিডিডিআরবি এবং বাস্তবায়নে সহযোগিতা করছে কারিতাস বাংলাদেশ। এছাড়াও দ্যা রকফেলর ফাউন্ডেশন, কারিতাস ডেনমার্ক, ক্যাথলিক রিলিফ সার্ভিসেস(সিআরএস), ইমোরি ইউনিভার্সিটি এবং এপস্নাইড বায়োপস্নাস্টিক এখানে আর্থিক ও কারিগরি সহায়তা প্রদান করে। পরীক্ষামূলক বা গবেষণামূলক বাসগৃহ তিনটি জানুয়ারী মাসে অতি দরিদ্র তিনটি পরিবারের মধ্যে হস্তান্তর করা হয়। গৃহ হস্তান্তর করেন শ্যামনগর ইউএনও রণী খাতুন। তিনি বলেন, গবেষণামূলক প্রকল্পটি সফল হলে আগামী দিনে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর পরিবেশ বান্ধব, স্বাস্থ্যসম্মত, টেকসই ও দুর্যোগ সহনশীল বাসগৃহ তৈরিতে ব্যাপক সহায়ক হবে।
জানা যায়, জুটিন আবিস্কার করেন বাংলাদেশের বিজ্ঞানী ড. মোবারক আহমদ খান। ২০০৯সালে পাটের তৈরি ঢেউটিন উদ্ভাবন করেন যা জুটিন নামে পরিচিত। জুটিন তৈরিতে তিনি পাটের সঙ্গে ব্যবহার করেন পলিমার।
আইসিডিডিআরবি, ঢাকা মহাখালীর অ্যসোসিয়েট সাইন্টিস্ট ডা. ফারজানা জাহান বলেন, জুটিন শীট পরিবেশবান্ধব। লবন সহিষ্ণু ও আয়রণ প্রতিরোধক। টিন ও এডবেস্টারের তুলনায় এটি ভালো। এ ঘরে বসবাস করা হলে স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি নেই। উপকূলীয় এলাকার জন্য জুটিন শীটের ঘর ভালো হবে।