ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের মৌলভীবাজার জেলার মনু নদীর ওপরে বাংলাদেশের দেওয়া ৩টি পয়েন্টের চলমান কাজ ভারতের বাধায় বন্ধ রয়েছে। এ নিয়ে দিলিস্নতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর কাছে এক প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী মানিক সাহা। যদিও বাংলাদেশের তরফ থেকে বলা হয়েছে, বাঁধ দিলে ভারতের কৈলাশহর ডুবে যাবে, এমন আশঙ্কার যৌক্তিক কোন কারণ নেই।
এদিকে মনু নদে মুলতুবি কাজ পুণঃ সংস্কারের জন্য অনুমতি দিতে বাংলাদেশের যৌথ নদী কমিশনের তরফ থেকে ভারতের যৌথ নদী কমিশনে পত্রও পাঠানো হয়েছিল। এর উত্তর এখনো পায়নি বাংলাদেশ। পত্রতে বাংলাদেশ জানায়, মৌলভীবাজার জেলার ৪৬ বিজিবি ব্যাটালিয়ানের অধীনে মনু নদের তীর রক্ষা কাজের অনুমতি দেওয়ার জন্য আপনাকে বিনীতভাবে অনুরোধ করা হয়েছিল। জনস্বার্থে কাজগুলি অত্যন্ত গ্রম্নরুত্বপূর্ণ। দয়া করে মনে রাখবেন যে, এই কাজগুলি এই শুষ্ক মৌসুমের মধ্যেই সম্পন্ন করা প্রয়োজন। বাংলাদেশের স্বার্থের সুবিধার্থে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সম্মতির জন্য এই পত্রে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেবার আহবান জানানো হয়।
মনু নদ ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য থেকে উৎপন্ন হয়ে মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া, রাজনগর ও সদর উপজেলার দিয়ে প্রবাহিত হয়ে কুশিয়ারা নদীতে পতিত হয়েছে। নদ অত্যন্ত ম্যাশি নদ হওয়ায় প্রতি বছর বর্ষাকালে নদীর দুপাড় ভাঙ্গনসহ বন্যা দেখা দেয় এবং নদটি জেলার ৩টি উপজেলার দুঃখের কারণ হয়ে দাড়ায়। ২০১৮ সালে মৌলভীবাজারে সংঘটিত স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় নদের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের বিভিন্ন স্থানে ভাঙ্গনসহ শহর রক্ষা বাঁধ ভেঙে যায়। এই কারণে মৌলভীবাজার শহরসহ তিনটি উপজেলার প্রায় ১১টি ইউনিয়নের শতাধিক গ্রাম পস্নাবিত হয়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি সাধিত হয়।
বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ পুনর্বাসনসহ নদী ভাঙন হতে কুলাউড়া, রাজনগর ও মৌলভীবাজার সদর উপজেলার বিভিন্ন স্থান রক্ষার্থে একটি প্রকল্প গত ২০২০ সালের ২১ জুন একনেক সভায় অনুমোদিত হয়।
'মনু নদীর ভাঙন হতে ৩টি উপজেলা রক্ষা' শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় সীমান্তবর্তী ৩টি প্যাকেজের মোট ১৪শ' মিটার নদী তীর সংরক্ষণমূলক কাজ বাস্তবায়নের জন্য ভারতের অনুমতির লক্ষ্যে গত ২০২০ সালের ১১ ডিসেম্বর উল্যেখিত ৩ টি কাজের তথ্যাদি প্রেরণ করা হয়। উক্ত পত্রের প্রেক্ষিতে গেল বছরের ১১ ডিসেম্বর যৌথ নদী কমিশন, ভারত বর্ণিত ও ৩টি প্যাকেজের কাজ বাস্তবায়ন করা হলে ভারতীয় অংশে ৫টি স্থান ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে মর্মে পত্রের মাধ্যমে জানানো হয় এবং উক্ত ৫টি স্থানে কাজ বাস্তবায়নের জন্য বাংলাদেশের সম্মতি চেয়ে একটি পত্র প্রেরণ করা হয়। যার প্রেক্ষিতে গেল বছরের ৮ অক্টোবর প্রকল্প পরিচালক ও নির্বাহী প্রকৌশলী পাউবো, বিজিবি, বিএসএফ এবং সংশ্লিষ্ট নির্বাহী প্রকৌশলী, জল শক্তি কমিশন, কৈলাশহর, ভারত এর উপস্থিতিতে ভারতীয় অংশের ঝুঁকিপূর্ণ ৫টি স্থান যৌথ পরিদর্শন সম্পর্কে আলোচনা হয়। তবে ভারতের অনুমতি না থাকায় উক্ত স্থানসমূহ সরেজমিন পরিদর্শন করা যায়নি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী খালেদ বিন অলীদ বলেন, আন্তর্জাতিক নদী আইন থাকায় অনুমতি চেয়ে মনূ নদ সংস্কারের জন্য ভারতের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে। ভারতের অনুমতি পেলে পূনরায় কাজ শুরু হবে।