আখাউড়ায় ৬ ভাই-বোনই হোমিও চিকিৎসক

৬০ বছর ধরে চিকিৎসা দিচ্ছে নিমাই হোমিও চিকিৎসালয়

প্রকাশ | ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০০:০০

আখাউড়া (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় ৬০ বছরেরও অধিক সময় ধরে হোমিও চিকিৎসা সেবা দিচ্ছে নিমাই হোমিও চিকিৎসালয়। ষাটের দশকের শেষ দিকে আখাউড়া শহরের লাল বাজার রোডে দু'চালা একটি ছোট্ট টিনের ঘরে হোমিও চিকিৎসা সেবা শুরু করেন ডা. নিমাই চন্দ্র রায়। একটি টেবিল আর একটি ছোট্ট আলমিরায় ওষুধ নিয়ে আখাউড়ায় প্রথম হোমিও চিকিৎসা শুরু করেন তিনি। শুরুর দিকে বেশি রোগী হতো না। ধীরে ধীরে রোগীর আস্থা অর্জনের মধ্য দিয়ে ডা. নিমাই চন্দ্র রায় মানুষের কাছে নিমাই ডাক্তার হয়ে উঠেন। এক সময় টিনের ঘর পাকা বিল্ডিংয়ে পরিবর্তন হয়। হালে এলোপ্যাথিক চিকিৎসার উন্নতি এবং জনসাধারণের দুরগোড়ায় এসেছে। শহর থেকে গ্রাম সর্বত্র ক্লিনিক-ডাক্তারের চেম্বার। রয়েছে সরকরি হাসপাতালও। এরই মাঝে কালের স্বাক্ষী হয়ে আজও হোমিও চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছে নিমাই হোমিও চিকিৎসালয়। নিমাই চন্দ্র রায়ের ৬ ছেলে মেয়ে সবাই হোমিও চিকিৎসক। বাবার পাশে বসেই চিকিৎসা পেশা শুরু করেন ডা. নিরঞ্জন চন্দ্র রায় এবং ডা. রিপন চন্দ্র রায়। দীর্ঘ অর্ধ শতাব্দীকাল চিকিৎসা পেশায় জড়িত থাকাবস্থায় ২০২২ সালের ৭ ডিসেম্বর ডা. নিমাই চন্দ্র রায় পরলোকগমন করেন। বর্তমানে তার দুই ছেলে ডা. নিরঞ্জন চন্দ্র রায় ও ডা. রিপন চন্দ্র রায় নিমাই হোমিও চিকিৎসালয়ে রোগী দেখেন। মঙ্গলবার দুপুরে নিমাই হোমিও চেম্বারে গিয়ে বেশ কয়েজন রোগী দেখা গেছে। বেশির ভাগই নারী। উপজেলার দক্ষিণ ইউনিয়নের সাতপাড়া গ্রাম থেকে আসা এক নারী রোগী বলেন, 'দুই বছর ধরে এ চেম্বার থেকে চিকিৎসা নিচ্ছি। উপকার পেয়েছি।' উপজেলার বনগজ গ্রামের আনোয়ার মিয়া বলেন, '২-৩ বছর ধরে নিমাই ডাক্তারের ওষুধ নিচ্ছি। উপকার পাচ্ছি।' জানতে চাইলে ডা. নিরঞ্জন চন্দ্র রায় বলেন, ১৯৬৭ সালে এইচএমবি ডিগ্রী সম্পন্ন করে বাবা হোমিও চিকিৎসা শুরু করেন। বাবার মুখে শুনেছি। শুরুর দিকে রোগী হতো না। এজন্য মাঝে মধ্যে হতাশ হয়ে পড়তেন। সেময় স্থানীয় ডাক্তার মহন লাল বাবাকে ধৈর্য্য ধরার পরামর্শ দিতেন। আস্তে আস্তে রোগী বাড়তে থাকে। ২০২২ সালের ৭ ডিসেম্বর বাবা মারা যান। এখন আমি ও আমার ছোট ভাই ডা. রিপন চন্দ্র রায় রোগী দেখি। আমরা ৪ বোন ২ ভাই। সবাই হোমিও প্যাথিক ডিগ্রী ডিএইচএমএস সম্পন্ন করেছি। সবাই হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা পেশায় জড়িত রয়েছে। ডা. নিরঞ্জন চন্দ্র রায় আরও বলেন, হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসায় সঠিক আরোগ্য হয়। এজন্য হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা পেশায় এসেছি। রোগীর সমস্যা বুঝতে পেরে সঠিক ওষুধ দিলে আরোগ্য হয়। ভালো রোগী পাচ্ছেন বলে জানান তিনি। নারী ও শিশু রোগী বেশি আসে বলে জানান তিনি। জ্বর, সর্দি, কাশি এ জাতীয় রোগীই বেশি আসে। এছাড়াও মহিলারা নানা সমস্যা নিয়ে চিকিৎসা নিতে আসেন। আখাউড়া চন্দনসার এলাকার বাসিন্দা লেখক আলী মাহমেদ বলেন, আমাদের ছোট বেলায় আখাউড়ায় হাতেগুনা কয়েকজন এলোপ্যাথিক ডাক্তার ছিল। তখন হোমিও চিকিৎসা দিতেন ডা. নিমাই চন্দ্র রায়। আমিও নিমাই ডাক্তারের চিকিৎসা নিয়েছি। ওই সময় আমাদের পরিবারের যে কোন অসুখ বিসুখে উনার কাছে যেতাম। জানতে চাইলে আখাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সের প্রধান ডা. হিমেল খান বলেন, সরকারী অনুমোদনপ্রাপ্ত হোমিও কলেজ থেকে কোর্স সম্পন্ন করা চিকিৎসক যথাযথ নিয়ম মোতাবেক চিকিৎসা দিলে হোমিও চিকিৎসায় আরোগ্য হয়।