পরীক্ষায় প্রক্সি, মাদকসেবন ও মরা গরুর মাংস বিক্রি করায় ১০ জনের জেল এবং ৭ জনের জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। ব্রাহ্মণবাড়িয়া, গাজীপুরের কালীগঞ্জ, মেহেরপুরের গাংনী ও পাবনার ভাঙ্গুড়ায় ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান চালিয়ে এসব দন্ডাদেশ দেওয়া হয়। আঞ্চলিক স্টাফ রিপোর্টার ও প্রতিনিধিদের পাঠানো বিস্তারিত খবর-
স্টাফ রিপোর্টার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জানান, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বিআরটিএ'র ড্রাইভিং লাইসেন্স পরীক্ষায় একজনের পরিবর্তে আরেকজনকে দিয়ে পরীক্ষা দেওয়ানোর অভিযোগে দুইজনকে ৩১ হাজার টাকা জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। গত মঙ্গলবার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সহকারী কমিশনার ইকরামুল হক এই জরিমানা করেন। অর্থদন্ডপ্রাপ্তরা হলেন- আবু হুরাইরা (২৭) ও সাইদুল ইসলাম (২১)। তাদের মধ্যে আবু হুরাইরাকে ১ হাজার টাকা এবং সাইদুলকে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
জানা গেছে, মঙ্গলবার সকাল থেকে সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) অধীনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের মিনি কনফারেন্স রুমে লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। ২৭৩জন লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নেয়। সকালে মিনি কনফারেন্স রুমে ড্রাইভিং লাইসেন্স পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। আবু হুরাইরা নামে একজন পরীক্ষার্থী নিজে লিখিত পরীক্ষা না দিয়ে আরেকজনকে দিয়ে (প্রক্সি) পরীক্ষা দেওয়ান। লিখিত পরীক্ষায় পাস করার পর মৌখিক পরীক্ষা দিতে গেলে দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা বিষয়টি বুঝতে পেরে আবু হুরাইরাকে আটক করেন। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের জানান যে, জেলা শহরের কাউতলীর হুন্ডা গ্যালারি নামে একটি মোটর সাইকেল শোরুমের ব্যবস্থাপক সাইদুল ইসলামের সাথে লিখিত পরীক্ষা পাশ করিয়ে দেওয়াসহ লাইসেন্স করিয়ে দেওয়ার বিষয়ে আবু হুরাইরার ১২ হাজার টাকায় চুক্তি হয়। দুপুরে মোটর সাইকেলের শোরুমে অভিযান চালিয়ে সাইদুলকে আটক করে ভ্রাম্যমাণ আদালত। জিজ্ঞাসাবাদে সাইদুল নিজের অপরাধ স্বীকার করেন। পরে ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সহকারী কমিশনার ইকরামুল হক তাদেরকে অর্থদন্ড দেন। এ ব্যাপারে ভ্রাম্যমান আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সহকারী কমিশনার ইকরামুল হক বলেন, ১২ হাজার টাকার বিনিময়ে আবু হুরাইরাকে ড্রাইভিং লাইসেন্স করিয়ে দেয়ার চুক্তি করে সাইদুল। আবু হুরাইরার পরিবর্তে অন্য আরেকজন লিখিত পরীক্ষা দিয়েছে। মৌখিক পরীক্ষা দেয়ার সময় বিষয়টি ধরা পড়লে আবু হুরাইরা আটক করা হয়। এজন্য সাইদুলকে ৩০ হাজার টাকা এবং আবু হুরাইরাকে এক হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। চুক্তির ১২ হাজার টাকা আবু হুরাইরাকে ফেরত দেওয়ার জন্য সাইদুলকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
কালীগঞ্জ (গাজীপুর) প্রতিনিধি জানান, গাজীপুরের কালীগঞ্জের ভ্রাম্যমাণ আদালতের পৃথক দুটি অভিযান পরিচালিত হয়েছে। এতে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন আইনে ৩ মাদকাসক্তকে ১০০ টাকা করে জরিমানা ও ৭ দিন করে বিনাশ্রম কারাদন্ড দিয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত।
বুধবার পৃধকভাবে এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার তনিমা আফ্রাদ এবং উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) নূরী তাসমিন ঊর্মি এ দন্ডাদেশ প্রদান করেন। দন্ডপ্রাপ্তরা হলেন- কালীগঞ্জ পৌর এলাকার দড়িসোম গ্রামের নজরুল মিয়ার ছেলে শাহেদ (২০), আবুল মিয়ার ছেলে আমজাদ হোসেন (২৯), কুদ্দুস মিয়ার ছেলে দুলাল মিয়া (৩৩)।
জানা গেছে, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে কালীগঞ্জ পৌরসভার দড়িসোম এলাকায় পৃথক দুটি অভিযান চালায় গাজীপুর জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। পরে সেখান থেকে ৩ মাদকাসক্তকে ৩ আটক করা হয়। পরে পৃথক দুটি ভ্রাম্যমান আদালদের মাধ্যমে আটকৃতদের মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১৮ এর ৩৬(৫) ধারায় ৩টি মামলায় প্রত্যেকের ১০০ টাকা জরিমানা ও ৭ দিন করে বিনাশ্রম কারাদন্ডের দন্ডাদেশ প্রদান করা হয়। অভিযানকালে গাজীপুর জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পরিদর্শক মো. মোজাম্মেল হক, উপপরিদর্শক জুয়েল মিয়া, বেঞ্চ সহকারী মো. আলামিন ভূঁইয়া, জাকির হোসেন সহ থানা পুলিশ ও আনসার সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
গাংনী (মেহেরপুর) প্রতিনিধি জানান, মেহেরপুরের গাংনী পৌরসভার জবেহখানায়, অসুস্থ মরা গরুর মাংস বিক্রির চেষ্টার অভিযোগে এক কসাই ও গরু ব্যাপারীকে অর্থদন্ড করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। মঙ্গলবার মধ্য রাতে গাংনী উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) সাদ্দাম হোসেন তাদের ১৫ হাজার টাকা জরিমানা করে মরা গরুটি মাটির নিচে পুতে ফেলার আদেশ দেন।
ভ্রাম্যমাণ আদালত সূত্রে জানা গেছে, গাংনী বাজারের জাহাঙ্গীর কসাই বালিয়াঘাট গ্রামের গরু ব্যাপারী মহিবুল ইসলামের মাধ্যমে একটি অসুস্থ গাভী কিনে নিয়ে আসেন। বুধবার সকালে জবেহ করে মাংস বিক্রির জন্য পৌর জবেহখানায় রাখা হয়। এর মধ্যেই গাভীটির মৃতু্য হয়। খবর পেয়ে উপজেলা প্রশাসন ও প্রাণি সম্পদ বিভাগের প্রতিনিধিরা ঘটনাস্থলে মৃত গাভীটি পরীক্ষা করেন। অসুস্থ গরু জবেহ করে মাংস বিক্রির চেষ্টার অভিযোগে কসাই জাহাঙ্গীর ও গরু ব্যাপারী মহিবুল ইসলামকে ১৫ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে তাদেরকে ১ মাস করে করাদন্ডের আদেন দেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। একই সঙ্গে মৃত গাভিটি মাটির নিচে পুতে দেওয়ার আদেশ দেওয়া হয়। রাতেই জরিমানার অর্থ পরিশোধ করেন কসাই জাহাঙ্গীর ও গরু ব্যাপারি মহিবুল ইসলাম। এ প্রসঙ্গে ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সাদ্দাম হোসেন বলেন, অসুস্থ পশুর মাংস বিক্রির চেষ্টার অভিযোগে তাদেরকে দন্ড দিয়ে সতর্ক করা হয়েছে। পুনরায় এমন অপরাধ করলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ভাঙ্গুড়া (পাবনা) প্রতিনিধি জানান, পাবনার ভাঙ্গুড়ায় পৌর এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে মাদক (ট্যাপেন্টডল ট্যাবলেট) দ্রব্য বিক্রয় করার সময় স্থানীয় থানা পুলিশের সহয়তায় ৭ জন মাদক ব্যবসায়ী গ্রেপ্তার করেছে। গত মঙ্গলবার গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান পরিচালনা করেন মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর পাবনার উপ-পরিদর্শক (ঈশ্বরদী অঞ্চল) আব্দুলস্নাহ আল মামুন এবং পুলিশের একটি চৌকষ দলের সহযোগিতায় গ্রেপ্তার করে একজনকে ভাঙ্গুড়া থানায় নিয়মিত মামলা, অপর ৬ জনকে ভ্রাম্যমাণ আদালতে হাজির করে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা ও অর্থদন্ড আরোপ করা হয়েছে। এ সময় আটকদের দেহ তলস্নাশি চালিয়ে ৩৪০ পিস ট্যাপেন্টডল ট্যাবলেট ও ১৩৬ গ্রাম বিস্নস্টার স্ট্রিপ জব্দ করা হয়।
পুলিশ আটকদের সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তাসমিয়া আক্তার রোজির ভ্রাম্যমাণ আদালতে হাজির করলে উপজেলার আরাজি সরদারপাড়ার মৃত তমিজ উদ্দিনের ছেলে সানোয়ার হোসেন (৪১), চৌবাড়িয়া উত্তর পাড়ার আবুল কাশেমের ছেলে মোঃ জাকির হোসেন (৪০),কলকতি শান্তিনগর গ্রামের রব্বান প্রামানিকের ছেলে রহুল আমিন (২২), উত্তর মেন্দা গ্রামের আনোয়ার হোসেনের ছেলে রহুল আমিন (২৬), উত্তর মেন্দার মৃত রহমত উলস্নাহর ছেলে আসাদুল ইসলাম (২৬), চৌবাড়িয়া দক্ষিণ পাড়ার আবেদ মোলস্নার ছেলে হাসান আলী (৪২),কলকতি শান্তিনগর গ্রামের খলিলুর রহমান্থর ছেলে শাহিন ইসলামকে (৩৫) দন্ড আরোপ করা হয়।