রাস্তাঘাট ভেঙে যাওয়ায় বিলপাটেলা গ্রামবাসীর চলাচলের জন্য ডিঙ্গিই একমাত্র ভরসা হয়ে উঠেছে। প্রত্যেক বাড়ির ঘাটকুলে বাঁধা আছে নানা রকমের ডিঙি। তবে বেশি দেখা গেছে টিনের তৈরির ডিঙি। একটি ঢেউ টিন দিয়ে তৈরি করা হয়েছে এ ডিঙি। এবাড়ি থেকে ওবাড়ি, বিল বা মাছের ঘেরে যাতায়াত করছে এ ডিঙি বেয়ে। বিলপাটেলার পশ্বিমপাড়া এলাকায় এমন দৃশ্য সৃষ্টি হয়েছে গেলো বর্ষা মৌসুমের পর থেকে। অসুস্থ মানুষকে দ্রম্নত কোন চিকিৎসালয় নিয়ে যাওয়াটাও তাদের পক্ষে দুষ্কর হয়ে পড়েছে।
জানা গেছে, খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলা সদর থেকে মাত্র ৭ কিলোমিটার দূরে বিলপাটেলা গ্রামটি ডুমুরিয়া ও রঘুনাথপুর ইউনিয়নের আওতাধীন। এ গ্রামে প্রায় ৮শ' লোকের বসবাস। গ্রামের মাঝখান দিয়ে বয়ে গেছে বালিয়ার খাল। আর খালের দু'পার দিয়ে বিলপাটেলা গ্রামের মানুষ বসবাস করছেন দীর্ঘদিন ধরে। গেলো বর্ষা মৌসুমে অতিমাত্রায় আকাশ বন্যা হওয়ার কারণে ব্যাপকভাবে পস্নাবিত হয় এ অঞ্চল। দু'পারে রাস্তার উপর ৪-৫ফুট পানি উঠে যায়। মাছের ঘের, বসত বাড়ি থেকে শুরু করে সবকিছুই নিমজ্জিত হয়ে পড়ে পানিতে। পানিবন্দি এলাকার মানুষ তখন ঘর ছেড়ে বাধ্য হয় বিভিন্ন জায়গায় আশ্রয় নিতে। এভাবে অসহনীয় জীবন-যাপন চলে প্রায় ৪ মাস। পানি কমে যাওয়ার পর স্বাভাবিক জীবনে ফেরেন বিলপাটেলার মানুষ। কিন্তু হদিস নেই তাদের রাস্তার! পানিতে ডুবার পর মাছে খেয়ে একেবারই নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় গ্রামীণ সড়ক দুইটি। নিরুপায় হয়ে এ অঞ্চলের মানুষ চলাচল করতে বেছে নেয় ডিঙি। বাড়ি থেকে কোথাও যেতে হলে এখনো ডিঙি বেয়ে যেতে হচ্ছে তাদের। এখানকার অধিকাংশ মানুষ কৃষি কাজের উপর নির্ভরশীল। রাস্তাঘাট না থাকায় কৃষি পন্য বাজারে নিয়ে যাওয়াটাও খুবই কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। তাছাড়া গ্রামের অসুস্থ রোগি নিয়েও মাঝে মধ্যে পড়তে হচ্ছে চরম বিপাকে।
বিলপাটেলা পশ্চিমপাড়ার আব্দুর রহমান হাওয়াদার বলেন, বর্ষা মৌসুমের পর থেকে আমরা যোগাযোগে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছি। এমনিতে বিলপাটেলা সবদিক দিয়ে অনুন্নত। তারপর মড়ার উপর খাড়ার ঘা! বিগত সরকারের আমলে যা একটু রাস্তা হয়েছিলো তা বন্যায় চলে গেলো। ওই গ্রামের মো. শহিদুল ইসলাম হাওলাদার জানান, আমাদের গ্রামে ৩শ' পরিবার আছে। প্রায় ৭-৮শ' লোকের বসবাস এখানে। বর্ষার পর চলাচলের রাস্তা নেই বললে চলে। তবে রাস্তাঘাট উন্নয়নে সরকারের কোন পদক্ষেপ দেখিনে।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আব্দুলস্নাহ বায়েজিদ জানান, সংশ্লিষ্ট চেয়ারম্যানদের কাছে ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তার তালিকা বারবার চাওয়া হচ্ছে। কিন্তু তারা আজো জনপ্রতিনিধিরা তালিকা দেয়নি। তালিকা পেলে এবং চাহিদানুযায়ী বরাদ্দ আসলে ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তা সংস্কার করা হবে। তিনি বলেন, বন্যার কারণে ডুমুরিয়া উপজেলার ৫টি ইউনিয়নে অন্তত ৩০টি গ্রামের মধ্যে ৫০ থেকে ৬০ টি রাস্তা চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব রাস্তা দ্রম্নত সংস্কারের প্রয়োজন।