ঝিনাইদহে বিস্তীর্ণ এলাকার ফসলি জমিতে তামাক চাষ করেন এক কৃষক -যাযাদি
ঝিনাইদহে জেলার বিস্তীর্ণ এলাকার ফসলি জমিতে তামাক চাষ শুরু হয়েছে। সম্প্রতি বছরগুলো জেলার কৃষকদের মধ্যে তামাক চাষে আগ্রহ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তামাক কোম্পানির প্রলোভন ও কৃষকদের অসচেতনতার কারণে আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে তামাক চাষ। ঝিনাইদহ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে, জেলায় ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ১৯৩ হেক্টর জমিতে তামাকের চাষ হয়েছিল। সেখানে এক বছরপর ২০২৪-২৫ অর্থবছরে সেটা বৃদ্ধি পেয়ে চাষ হয়েছে ২২৪ হেক্টর।
তামাক চাষের ফলে অনেক কৃষক তার জমি হারিয়ে নদীর বুকে ধান চাষ করতে দেখা যাচ্ছে। নদীর বুকে ধান চাষ করতে গিয়ে ক্ষতিকারক রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের ব্যবহার দেশীয় প্রজাতির মাছসহ জীববৈচিত্র হুমকির মুখে পড়েছে। যদিও কৃষি বিভাগ থেকে বলা হচ্ছে, কৃষকদের বার বার সচেতন করা হলেও এসব বিষয়ে গুরুত্ব নেই তাদের। তামাক কোম্পানির প্রলোভন ও কৃষকদের অসচেতনতার কারণে বৃদ্ধি পাচ্ছে তামাক চাষ।
এদিকে কৃষকদের অসেচতনতা ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরদারির অভাবে পরিবেশ তার নিজস্ব ভাবরসাম্য হারিয়ে ফেলছে। গত এক দশকে জেলার নদ-নদী তার নাব্যতা হারিয়ে মরা খালে পরিণত হয়েছে। বিলুপ্ত হয়ে গেছে প্রায় অর্ধশতাধিক দেশীয় মাছ। ফলে চরম বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে প্রাকৃতিক পরবেশ ও জীববৈচিত্র।
ঝিনাইদহ শহরের বিভিন্ন এলাকায় বিস্তীর্ণ মাঠ জুড়ে চাষ হয়েছে তামাকের। অন্যদিকে জেলার বিভিন্ন নদ-নদীর পানি শুকিয়ে গেছে। শুকনা নদীর চরে ধান চাষ করছে স্থানীয় কৃষকরা। গ্রীষ্ম শুরু হওয়ার আগেই জেলার ১০ নদী ও ২ নদের প্রায় ৭০ শতাংশ শুকিয়ে গেছে। এসব নদ-নদীতে কৃষকদের ধানের চাষ করছে।
জেলা সদরের সুরাপাড়া গ্রামের কৃষক আকবর শেখ বললেন, এবছর সাত বিঘা জমিতে তামাকের আবাদ করেছেন। তামাকের চারা রোপণ করার পর থেকে শেষ পর্যন্ত ৩০০ কেজির অধিক সার ব্যবহার করতে হয়। তামাক চাষ করার জন্য কোম্পানিগুলো আমাদের নগদ টাকা ও সার দিয়ে সহযোগিতা দিচ্ছেন। মাঠে উৎপাদিত তামাকের দামও নির্ধারণ করে দিচ্ছেন তারা। এতে আগাম লাভ দেখে চাষিরা তামাক চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছে।
শহরের উদয়পুর গ্রামের কৃষক আলী আহমেদ জানান, দুই বছর আগে তিন বিঘা জমিতে টমেটো বেগুন কাচা মরিচের আবাদ করেছিলেন। সেখানে মোটা অংকের লোকশান হয়। তাই এখন ওই জমিতে তিনি তামাক চাষ শুরু করেছেন।
সদর উপজেলার বাসুদেবপুর গ্রামের কৃষক শামসুল নবগঙ্গা নদীর মধ্যে ধানের চারা রোপণ করছিলেন। কথা হয় তার কৃষক শামসুলের সঙ্গে। তিনি বলেন, নদীতে পানি নেই তাই ধান লাগাচ্ছেন। ফসলি দুই বিঘা জমি তামাক চাষির কাছে ৪০ হাজার টাকায় লিজ দিয়েছেন। আর্থিক লাভের জন্য এমনটা করেছেন বলে যোগ করেন তিনি।
ঝিনাইদহ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক (শস্য) মো. আনিসুজ্জামান খান বলেন, 'আমরা কৃষকদের প্রতিনিয়ত তামাক বিষয়ে সচেতন করছি। তামাক বাদ দিয়ে অন্য ফসল উৎপাদনে উৎসাহিত করছি। আমাদের আশা আগামী বছর তামাক চাষ কমে যাবে।'