মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ১৬ বৈশাখ ১৪৩২

পটুয়াখালীতে সওজ'র জমিতে কোটি টাকার বাণিজ্য!

পটুয়াখালী প্রতিনিধি
  ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
পটুয়াখালীতে সওজ'র জমিতে কোটি টাকার বাণিজ্য!

পটুয়াখালীতে সড়ক ও জনপদ (সওজ) বিভাগের জমি দখল করে অবৈধভাবে দোকান স্থাপন ও ভাড়া দিয়ে কোটি টাকার বাণিজ্য চলছে। জেলার লেবুখালী-পায়রা সেতু থেকে শরু করে হেতালিয়া বাঁধঘাট পর্যন্ত সড়কের দুই পাশে এসব স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে। তবে সব থেকে বেশি স্থাপনা নির্মাণ হয়েছে পটুয়াখালীর চৌরাস্তা এলাকায়।

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, পটুয়াখালী চৌরাস্তা এলাকার পটুয়াখালী-মির্জাগঞ্জ সড়কের চৌরাস্তা মসজিদ পর্যন্ত মোট ৫৯টি অবৈধ দোকান রয়েছে। এর মধ্যে মাছের দোকান ৭টি, সবজির দোকান ১৫টি, পান-সুপারির চারটি, জুতার একটি, ফ্লেক্সিলোডের একটি, ফার্মেসি দুইটি, খাবার হোটেল দুইটি, চায়ের ২৪টি এবং তিনটি মুদি দোকান।

পটুয়াখালী-বরিশাল সড়কের টোল পস্নাজা পর্যন্ত ৩৭টি অবৈধ দোকান স্থাপন করা হয়েছে। এর মধ্যে মাছের দোকান দুইটি, কসমেটিকসের একটি, চায়ের ১৭টি, ফলের পাঁচটি, পান-সুপারির দুইটি, খাবার হোটেল একটি ও ৯টি মেকানিকাল ওয়ার্কশপ রয়েছে।

পটুয়াখালী-কুয়াকাটা মহাসড়কের পিডিও অফিস পর্যন্ত ২৫টি দোকান রয়েছে। এর মধ্যে ফলের দোকান আটটি, চায়ের দোকান ১০টি, রেস্টুরেন্ট একটি, বাস কাউন্টার একটি, টাইলসের দোকান তিনটি, সেলুন একটি এবং একটি সবজির আড়ৎ রয়েছে। এছাড়াও শহরের প্রবেশপথেও অবৈধভাবে ৮টি দোকান রয়েছে। এর মধ্যে চায়ের দোকান দুইটি, পোশাকের তিনটি, ফ্লেক্সিলোডের একটি এবং দুইটি ফলের দোকান রয়েছে।

স্থানীয়রা সূত্রে জানা যায়, রেজাউল খান ও তার ছেলে আব্দুলস্নাহ খান ও মিজান খান (ওভার ব্রিজের নিচে), শাহিন হাওলাদার ও অমল বাবু (পটুয়াখালী-বরিশাল মহাসড়কে), আশরাফ মৃধা (ট্রাফিক বক্সের পাশে), রশিদ বয়াতি (পটুয়াখালী-মির্জাগঞ্জ সড়কের মসজিদ সংলগ্ন) দোকানপাট নিয়ন্ত্রণ করে। প্রতিটি ফলের দোকান থেকে প্রতিমাসে চার থেকে ছয় হাজার, প্রতিটি চায়ের দোকান থেকে তিন থেকে পাঁচ হাজার, ফার্মেসি প্রতি তিন থেকে চার হাজার টাকা আদায় করা হয়। এসব অবৈধ দোকান থেকে প্রতিমাসে প্রায় ৫ লাখ এবং বছরে প্রায় অর্ধকোটি টাকা চাঁদা আদায় করে প্রভাবশালী মহলটি।

চৌরাস্তা ওভার ব্রিজের নিচের ফল ব্যবসায়ী আবু জাফর বলেন, 'গত ১২ ডিসেম্বর আমার এই দোকানটি তুলেছি। প্রতি মাসে মাটি ভাড়া বাবদ ২৫০০ টাকা দিতে হয়। জানি সরকারি জমি। কিন্তু সবাই দেয়, তাই আমিও দেই। আর নয় তো দোকান করতে পারবো না।' একই জায়গার ফল ব্যবসায়ী শহিদুল ইসলাম বলেন, 'প্রতিমাসে দোকান ভাড়া বাবদ ৪ হাজার টাকা দিতে হয়। এই টাকা যদি সরকার নিয়ে আমাদের বসার ব্যবস্থা করে দিত তাহলে সরকার যেমন রাজস্ব পেত, আমরাও উপার্জন করে জীবিকা নির্বাহ করতে পারতাম।'

ফুট ওভার ব্রিজের খুঁটির নিচে চায়ের দোকান করা শর্মিলা রানী বলেন, 'আমার এই তিন হাত দোকানের জন্য প্রতিমাসে রেজাউল খানকে ৩০০০ টাকা ভাড়া দিতে হয়। টাকা না দিলে দোকান করতে দেবে না। আর দোকান না করলে ছেলে সন্তান নিয়ে কি খাব গত দুই বছর পর্যন্ত ভাড়া দিয়ে যাচ্ছি। এছাড়াও ১০ হাজার টাকা অগ্রিম দেওয়া আছে।'

অভিযুক্ত রেজাউল খান বলেন, 'আমাগো দাগের মাথা তাই সেখানে দুই-একটা দোকান বসাইছি, নাম দেয় সবাই আমারই। কিন্তু সেখানে বড় ভাই মেজ ভাই ভাতিজা ও ভাগিনাসহ অনেকের দোকান আছে। সরকারে যখন প্রয়োজন হবে তখন আমরা এখান থেকে দোকান সরিয়ে নেব।' অভিযুক্ত শাহিন হাওলাদার বলেন, 'চৌরাস্তায় আমার দোকান আছে। এক এক দোকানের ভাড়া এক এক ধরনের।' পটুয়াখালী সওজ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী জামিল আক্তার লিমন বলেন, 'ঢাকা-কুয়াকাটা মহাসড়কের লাউকাঠি ব্রিজ থেকে হেতালিয়া বাধঘাট পর্যন্ত সড়কের জায়গায় গড়ে ওঠা অবৈধ স্থাপনা মার্কিং করা হয়েছে।

ইতিমধ্যে ডিসি অফিস থেকে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের সহযোগিতা চেয়েছি। তাদের সহযোগিতায় শিগগিরই এসব অবৈধ স্থাপনা অনুচ্ছেদ করব।'

পটুয়াখালী জেলা প্রশাসক আবু হাসনাত মোহাম্মদ আরেফীন বলেন, সড়কের দুই পাশে গড়ে ওঠা অৗবধ স্থাপনা অপসারণের জন্য ইতিমধ্যে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করা হয়েছে। শিগগিরই অপসারণ করা হবে। তবে অপসারণের পর ফের ডেন জায়গাগুলো দখল হয়ে না যায়, সে বিষয়ে সড়ক ও জনপথ বিভাগকে উদ্যোগ নিতে হবে।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে