কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার ৪০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে। ভারপ্রাপ্তরা পালন করছেন প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব। শিক্ষক সংকটের ফলে চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে বিদ্যালয়গুলোর শিক্ষাসহ প্রশাসনিক কার্যক্রম। ফলে ভারপ্রাপ্তদের ভারে ভারাক্রান্ত হয়ে পড়েছে ওই সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলায় একটি পৌরসভা ও ৯টি ইউনিয়নে ১১৯টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে ৪০টি বিদ্যালয়েই প্রধান শিক্ষকের পদ দীর্ঘদিন ধরে শূন্য। সিনিয়র সহকারী শিক্ষকদের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নিযুক্ত করে প্রশাসনিক কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। ২৮ বিদ্যালয়ে রয়েছে চলতি দায়িত্বে প্রধান শিক্ষক। এ ছাড়া শূন্য রয়েছে ৪১ সহকারী শিক্ষকের পদও। এতে ওইসব বিদ্যালয়ে ব্যাহত হচ্ছে স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম। এ ছাড়া দিন দিন বিদ্যালয়গুলোতে কমছে শিক্ষার গুণগত মান।
প্রধান শিক্ষকবিহীন কয়েকটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কয়েকজন সহকারী শিক্ষক জানান, প্রধান শিক্ষক না থাকায় ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকরা বিদ্যালয়গুলোর পাঠদান থেকে শুরু করে প্রশাসনিক কার্যক্রম সামলাচ্ছেন। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে যিনি দায়িত্ব পালন করছেন, তিনি আমাদের মতোই একজন সহকারী শিক্ষক। তাই অনেক ক্ষেত্রেই ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে থাকা শিক্ষককে বিদ্যালয়ের অন্য সহকারী শিক্ষকদের সঠিকভাবে পরিচালনা করতে গিয়ে চরম বেগ পেতে হচ্ছে। অনেক সহকারী শিক্ষকই ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের নির্দেশনা মানতে অনীহা প্রকাশ করেন। যার ফলে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া মারাত্মকভাবে ক্ষতি হচ্ছে। তাই বিদ্যালয়গুলোতে প্রধান শিক্ষক পদায়ন খুবই জরুরী।
বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর অভিভাবক আরিফুল ইসলাম, খোকন ও জেসমিন আক্তার জানান, বিদ্যালয়ে যিনি ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে রয়েছেন, তিনি মূলত এই বিদ্যালয়েরই একজন সহকারী শিক্ষক। বেশিরভাগ সময় তিনি দাপ্তরিক কাজে ব্যস্ত থাকেন। এ কারণে বিদ্যালয়ে নিয়মিত আসতে পারেন না। এ ছাড়া বিদ্যালয়ে অন্যান্য সহকারী শিক্ষকও তার নির্দেশনা সঠিকভাবে মানছেন না। ফলে তাদের শিক্ষার্থীদের পড়ালেখায় সমস্যা হচ্ছে।
মসূয়া ইউনিয়নের ফুলদি কড়েহা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আনোয়ারা খাতুন জানান, 'প্রধান শিক্ষক অবসরের যাওয়ায় সিনিয়র সহকারী শিক্ষকদের কাঁধে বাড়তি দায়িত্ব চেপে বসেছে। দায়িত্ব পালনকালে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে আমরা তেমন কোন সুবিধা পাইনি। অফিসের কাজে দৌড়াদৌড়ি করে ক্লাস নিতে সমস্যা হয়। বিদ্যালয়ে শিক্ষকের পদ ৬টি, তারমধ্যে আছেন ৪ জন। এর মধ্যে প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে। শিক্ষক স্বল্পতার কারণে বিদ্যালয়ের শিক্ষা ও প্রশাসনিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।'
চরপুক্ষিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জামাল উদ্দিন জানান, '২০১৯ সালের অক্টোবর মাসে চলতি দায়িত্ব হিসেবে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পেয়ে ছিলাম কিন্তু আমরা বেতন পাই ১১ তম গ্রেডে। চলতি দায়িত্ব হিসেবে শুধু ১৫শ' টাকা সম্মানী হিসেবে পাই। পাঁচ বছর চার মাস হয়ে গেল আজও দশম গ্রেডে বেতন পাইনি।'
কটিয়াদী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আফজাল হোসেন জানান, ইতোমধ্যে ৪০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের শূন্যপদ পূরণ চেয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। পদ উন্নতি অথবা সরাসরি নিয়োগের মাধ্যমে প্রধান শিক্ষকের পদ পূরণ করবে। ৪১টি সহকারী শিক্ষকের পদ শূন্য থাকার বিষয়ে বলেন, অধিদপ্তর আমাদের থেকে শূন্যপদের তালিকা নিয়েছে। সরকার নিয়োগ দিলেই শূন্যপদ পূরণ হবে।