বুধবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৫, ১৬ বৈশাখ ১৪৩২
কোটি টাকার সরকারি সম্পদ লুটপাট

শায়েস্তাগঞ্জ-বালস্না রেলপথের ৭ স্টেশনের কোন অস্তিত্ব নেই

মঈনুল হাসান রতন, শায়েস্তাগঞ্জ (হবিগঞ্জ)
  ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
শায়েস্তাগঞ্জ-বালস্না রেলপথের ৭ স্টেশনের কোন অস্তিত্ব নেই

হবিগঞ্জ জেলার শায়েস্তাগঞ্জ-বালস্না পরিত্যক্ত রেলপথের কোটি কোটি টাকার সম্পদ লুটপাট অব্যাহত রয়েছে। ইতোমধ্যে এ পথটির ৯০ ভাগ রেলপাতসহ মূল্যবান যন্ত্রপাতি ও ঘরের আসবাবপত্র লুটপাট করে নিয়েছে একটি সংঘবদ্ধ চক্র। শুধু তাই নয়, এ পথের ৭টি স্টেশনের কোন অস্তিত্ব এখন আর অবশিষ্ট নেই। বিভিন্ন সময়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদন্যরা অভিযান চালিয়ে বেশ কয়েকটি ট্রাক, পিকআপসহ প্রায় কোটি টাকা মূল্যের রেলপাত আটক করলেও পাচারকারীরা রয়ে যায় ধরা ছোয়ার বাইরে।

বিশেষ করে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে রেলের পরিত্যক্ত এসব সম্পদ লুটপাট বৃদ্ধি পেয়ে যায় কয়েক গুণে। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের ছত্রছায়ায় একটি মহল রাতের অন্ধকারে ট্রাক ও পিকআপ ভর্র্তি করে রেলের এসব সম্পদ পাচার করেছে দেশের বিভিন্ন স্থানে। ফলে অপ্রতিরুদ্ধ হয়ে পড়েছে এসব সম্পদ পাচাররোধ।

ব্রিটিশ আমলে নির্মিত রেল লাইনটি বিগত সরকারের আমলে ২০০৩ সালে অঘোষিতভাবে বন্ধ হওয়ার পর থেকেই একটি প্রভাবশালী মহল রেলের বিশাল সম্পদের দিকে নজর দেয়। তাদের অনেকেই এখন বিলাস বহুল বাড়ি ও গাড়ির মালিক। ২০০৭ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে যৌথ বাহিনীর ভয়ে কিছুটা বন্ধ থাকলেও আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে রেলপাত পাচার বেড়ে গিয়েছিল।

১৯২৮ সালে ব্রিটিশ সরকার হবিগঞ্জ জেলা সদর থেকে প্রায় ৫২ কিলোমিটার শায়েস্তাগঞ্জ হয়ে বলস্না সীমান্ত পর্যন্ত রেল লাইন স্থাপন করে। সে সময়ে চুনারুঘাট উপজেলার ১৩টি বাগানের চা-পাতা রপ্তানী ও বাগানের রেশনসহ আনুষাঙ্গীক জিনিসপত্র আমদানী করার একমাত্র মাধ্যম ছিল এ রেলপথটি। স্বাধীনতার পর এ লাইনটি লোকসানের পথে এগোতে থাকলে এরশাদ সরকারের আমলে প্রথম দিকে এ লাইনটি সর্বপ্রথম অঘোষিতভাবে বন্ধ হয়। এর পর ১৯৯১ সালে বিএনপি সরকারের আমলে একবার ও ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে এ লাইনে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে হবিগঞ্জ থেকে শায়েস্তাগঞ্জ পর্যন্ত রেল লাইনটি উঠিয়ে বাইপাস সড়ক নির্মাণ করা হয়।

এদিকে শায়েস্তাগঞ্জ- বালস্না রেল লাইনের প্রায় ৩৬ কিলোমিটার সড়কের রেলের পাত, পাথর, সিগ্যানাল, তার, নাট বল্টু ও ওজন মাপার যন্ত্রপাতি এবং ৭টি স্টেশনের অবকাঠামোসহ কোটি কোটি টাকার মালামাল লুটপাট হয়ে যায়। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের ইশারায় পাচারকারী দলটি দিন ও রাতে ট্রাক ও পিকআপ লাগিয়ে রেলের কোটি কোটি টাকার এসব সম্পদ দেশের বিভিন্ন স্থানে পাচার করেছে।

বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে যৌথবাহিনী অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমান রেলের পাত উদ্ধার ও পাত কাটার যন্ত্র উদ্ধার করে। এসময় তারা অনেককে আটক করে জেল হাজতে প্রেরণ করে। পরে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর পুনরায় রেলপাতসহ রেলের মুল্যবান সম্পদ পাচার বেড়ে গিয়েছিল।

অপরদিকে এ রেলপথের মালামাল লুটপাটকে কেন্দ্র করে চুনারুঘাট ও শায়েস্তাগঞ্জে গড়ে উঠা ভাঙ্গারীর দোকান একটি সূত্র জানিয়েছে।

সরজমিনে দেখা গেছে, চুনারুঘাট উপজেলার বালস্না আমুরোড, বগাডুবি হয়ে ইনাতাবাদ, সতং, শাকির মোহাম্মদ, বড়কোটা থেকে শায়েস্তাগঞ্জ এলাকা পর্যন্ত রেল লাইনের প্রায় ৯৫ ভাগ নেই। এ অবস্থায় প্রায় ৩৬ কিলোমিটার এলাকার অধিকাংশই এখন রেল পাত বিহীন অবস্থায় পড়ে আছে।

কোন কোন স্থানে রেল লাইনের কোন অস্তিত্বই নেই। এছাড়া বালস্না থেকে শায়েস্তাগঞ্জ পর্যন্ত ৭টি রেল স্টেশনের কোন অস্তিত্ব এখন আর বিদ্যমান নেই। পরিত্যক্ত রেল স্টেশনগুলোতে অসামাজিক কার্যকলাপ ও গরু ছাগলের ঘরে রুপ নিয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে