নেত্রকোনার পূর্বধলায় মাধ্যমিক স্তরে বিভিন্ন বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী সংকট দেখা দিয়েছে। শিক্ষার্থী সংখ্যা দিন দিন কমে যাওয়ায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি নানা সমস্যায় উপনীত হচ্ছে। মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষার্থী কমে যাওয়ার কারণ হিসেবে কেউ বলছেন প্রাথমিক স্তরে শিক্ষার্থী কমে যাওয়ায় মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষার্থী সংকট দেখা দিচ্ছে। আবার কেউ বলছেন মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠান বেড়ে যাওয়ায় শিক্ষার্থীর বড় একটি অংশ মাদ্রাসায় চলে যাচ্ছে।
পূর্বধলায় ৪১টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও ১৫টি দাখিল স্তরের মাদ্রাসা রয়েছে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে- এসব প্রতিষ্ঠানে জানুয়রি মাসে কাঙ্ক্ষিত শিক্ষার্থীর চেয়ে অনেক কম ভর্তি হয়েছে। উপজেলার এন.জারিয়া ঝানজাইল উচ্চ বিদ্যালয়ে এ বছর পুরো জানুয়ারী মাসে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ৮০জন শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছে। যা বিগত কয়েক বছরের তুলনায় একেবারেই কম। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক লুৎফর রহমান খন্দকার জানান, করোনা মহামারির আগে বিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ থেকে ১০ম শ্রেণি পর্যন্ত ৮০০ থেকে একহাজার শিক্ষার্থী থাকত, এখন তা কমে ৫শ'তে নেমে এসেছে।
উপজেলার ঘাগড়া দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে এ বছর মাত্র ৬০জন শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছে। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল মোতালিব জানান, কয়েক বছর আগে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে প্রায় দেড়শর উপরে শিক্ষার্থী ভর্তি হতো। তখন বিদ্যালয়ে প্রায় ৬শর উপরে শিক্ষার্থী থাকলেও এখন তা প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। উপজেলার সাধুপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ে ২ বছর আগেও ৮শ'র উপরে শিক্ষার্থী থাকলেও তা এখন ৫শ'র নীচে নেমে এসেছে। উপজেলা সদরের পূর্বধলা জে.এম সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় সরকারীকরনের আগে প্রায় দুই হাজারের মত শিক্ষার্থী থাকলেও তা এখন ৮শ'তে কমে এসেছে। এত সংখ্যক শিক্ষার্থী কমে গেলেও উপজেলার সদরের আশেপাশে অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে কোনো প্রভাব পড়েনি।
দাখিল স্তরে শিক্ষার্থী সংকট আরও চরম আকার ধারণ করছে। উপজেলার ধারা দাখিল মাদ্রাসা, বাড়হা জসমতিয়া দাখিলা মাদ্রাসা, দক্ষিণ কাজলা দাখিল মাদ্রাসা শিক্ষার্থী সংকটে ধুকছে। উপজেলার মাধ্যমিক স্তরে গত কয়েক বছরের ব্যবধানে বিশেষ করে করোনার পর থেকে ৫৬টি প্রতিষ্ঠানে প্রায় ১০হাজারের মত শিক্ষার্থী কমেছে। তাছাড়া ৬ষ্ঠ সপ্তম শ্রেণিতে শিক্ষার্থী সংখ্যা কিছু বেশি থাকলেও উপরের শ্রেণিগুলোতে আশংখাজনক হারে শিক্ষার্থী কমতে থাকে। এতে করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলো নানামুখী সমস্যায় পড়ছে। যে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে একাধিক শাখা ছিল সে সকল প্রতিষ্ঠানে শাখা ধরে রাখা কঠিন হয়ে যাচ্ছে।
শিক্ষার্থী সংখ্যা কমে যাওয়ার বিষয়ে, আগিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বদরুজ্জামান মিন্টু বলেন, করোনাকালীন সময়ে এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ ছিল। অপরদিকে একই সময়ে কওমী মাদ্রাসাগুলো খোলা ছিল। এতে শিক্ষার্থীর বড় একটা অংশ মাদ্রাসায় চলে যায়। ফলে শিক্ষার্থীর ঘাটতি শুরু হয়। তাছাড়া পরবর্তীতে শিক্ষা কারিকুলাম পরিবর্তন করায় এই পরিবর্তিত কারিকুলামের প্রতি ভরসা করতে না পেরে অনেক অভিভাবক তাদের সন্তানকে মাদরাসায় ভর্তি করে দেয়।
উপজেলার মৌদাম সেসিপ মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গোলাম মোস্তফা বলেন, প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থী সংখ্যা কমে যাওয়ায় এবং ৫ম শ্রেণি সমাপনি পরীক্ষায় কাঙ্ক্ষিত শিক্ষার্থী না থাকায় শিক্ষার্থী সংকট দেখা দিচ্ছে।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মফিজ উদ্দিন বলেন, প্রাইমারী স্তরে শিক্ষার্থী সংখ্যা কিছুটা কমেছে তবে তারা ঝরে পড়েনি। বিদ্যালয়ের আশে পাশে মাদ্রাসা বেশি হওয়ায় ওই সকল শিক্ষার্থী মাদ্রাসায় চলে গেছে।