হাওড়ে ফসল রক্ষা বাঁধের কাজ শেষ হওয়ার আগেই ধস

প্রকাশ | ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০০:০০

শান্তিগঞ্জ (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি
সুনামগঞ্জের হাওড় এলাকায় সংস্কার কাজ শেষও হওয়ার আগেই ফের ধসে যাওয়া ফসল রক্ষা বাঁধ -যাযাদি
সুনামগঞ্জ জেলার শান্তিগঞ্জ উপজেলার দেখার হাওড়ের ছাইয়া কিত্তা ফসল রক্ষা বাঁধের কাজ শেষ হওয়ার আগেই বাঁধে ধসের সৃষ্টি হয়েছে। এতে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন হাওড়পারের কৃষকরা। বাঁধটিতে প্রতিবছরই এমন ধস দেখা দেয়। স্থানীয়রা বলছেন, আওয়ামী লীগ সরকার আমলে ছাত্রলীগের এক নেতা এই বাঁধের পাশ থেকে ড্রেজার মেশিন লাগিয়ে অবৈধভাবে মাটি উত্তলন করার কারণে প্রতিবছর এমনটি হচ্ছে। অন্যদিকে হাওরের পানি অপরিকল্পতভাবে নামার ফলেও নতুন আরো ৩টি প্রকল্পের ৩টি স্থানে ধ্বস দেখা দিয়েছে। জানা যায়, শান্তিগঞ্জ উপজেলার দেখার হাওড়ের ছাইয়া কিত্তার বাঁধ ৫৫নং পিআইসি কমিটির অধীনে। দেখার হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধের পিআইসি নং-৫৫ এর অধীনে ১২২৫ মিটার বাঁধের কাজ নির্মাণাধীন রয়েছে। প্রকল্প এলাকার উত্তর পার্শ্বে 'ছাইয়া কিত্তা' নামক জায়গায় গত তিন বছর আগে বর্ষা মৌসুমে আওয়ামী লীগ সরকার আমলে ছাত্রলীগের এক নেতা অসাধু ব্যবসায়ী রাতের আধারে ড্রেজার মেশিন লাগিয়ে মহাসিং নদী ও বাঁধের পশ্চিমে বালি মাটি ও ভিট বালি উত্তোলন করে। এতে বাঁধের দুই পাশে মহাসিং নদীর অংশে ও হাওড়ের অংশে বড় বড় দুইটি ডোবার সৃষ্টি হওয়ায় প্রায় ২৭ ফুট গভীর গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। বর্তমানে ছাইয়া কিত্তা বাঁধ নির্মাণ প্রকল্পের মাটি ভরাটের কাজ চলমনান রয়েছে। এবার বাধের কাজ শুরুর আগেই এই ধস দেখা দিয়েছে। গত ৭-৮ দিন ধরে বাঁধের দুই পাশে বড় বড় ফাটল দিয়ে বাঁধে ধস নামা শুরু হয়েছে। এতে বাঁধের সব মাটি দুই পাশে গভীর ডোবায় ধসে পড়ছে। দেখার হাওড়ের ছাইয়া কিত্তা ফসল রক্ষা বাঁধের দুই পাশে ভাঙন শুরু হওয়ায় হুমকির মুখে রয়েছে ফসল রক্ষা বাঁধ। একই সঙ্গে দেখার হাওড়ের ৪৯, ৫৩ ও ৫৪ নং প্রকল্পেও নতুন করে বাঁধে ধ্বস দেখা দিয়েছে। এই বাঁধ গুলোর প্রতিটিতে একটি করে বাধের পাশে মহাসিং নদীর তীর ঘেঁশা ডুবা রয়েছে। এই কারণে বাঁধগুলোতে এমনটি হচ্ছে। হাওড়ের পানি অপরিকল্পিত ভাবে প্রতি বছর নেমে যাওয়ার কারণে নদীর তীরে এমন গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এখন নদীর পানি কমে যাওয়ায় বাঁধ গুলোয় ফাটল ও ধ্বস দেখা দিয়েছে। আগে থেকেই বাঁধগুলো রক্ষায় কার্যকরী পদক্ষেপ না নিতে পারলে পুরো হাওড়ের বোরো ফসল হুমকির মুখে পড়বে বলে মনে করছেন কৃষকরা। উপজেলা দেখার হাওড়ের ছাইয়া কিত্তার বাঁধ ৫৫নং পিআইসি কমিটির সাধারণ সম্পাদক আখতার হোসাইন নোমান জানান, আমাদের কাজের বাইরে এই বাঁধে ফাটল দেখা দিয়েছে, চলতি বছরের এই অংশে আমাদের তেমন কোন কাজ ধরা ছিলো না। কিন্তু বাঁধটি ফাটল দিয়ে ধ্বসে পড়ার কারণে এখানে নতুন করে আমাদের কাজ করতে হবে। এই হাওড়ের ৪৯ নং পিআইসি কমিটির সভাপতি সফিকুর রহমান জানান, 'হাওড়ের পানি অপরিকল্পিত ভাবে নেমে যাওয়ার কারণে আমার প্রকল্পের পাশে নদীর তীরে বড় একটি গর্ত হয়েছে। এখন নদীর পানি কমে যাওয়ায় আমার বাঁধের বড় একটি অংশ ফাটল দেখা দিয়ে ধ্বসের সৃষ্টি হয়েছে। শিগগিরই এই ফাটল বন্ধ করতে আমাদের অতিরিক্ত বরাদ্দসহ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। আমরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের সঙ্গে কথা বলেছি, তারা আমাদের প্রকল্পগুলো পরিদর্শন করে গেছেন।' শান্তিগঞ্জ উপজেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ সহকারি প্রকৌশলী মমিন মিয়া জানান, 'দেখার হাওড়ের ছাইয়া কিত্তা বাঁধটি আসলে হুমকির মুখে এবং ইতিমধ্যে বাঁধটি পরিদর্শন করেছি। এগুলোতে যা প্রয়োজন সব বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। কোথাও কোন অবহেলার সুযোগ নাই। আশাকরি এই সকল বাঁধের কাজ ২৮ ফেব্রম্নয়ারীর মধ্যেই সমাপ্ত করতে পারব।'