আদালতে হুইল চেয়ারে উপস্থিত হয়ে শিশু ধর্ষণ মামলার আসামির জামিন!
প্রকাশ | ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
মিঠাপুকুর (রংপুর) প্রতিনিধি
রংপুরের মিঠাপুকুরে শিশু ধর্ষণ মামলায় আদালতে হুইল চেয়ারে উপস্থিত হয়ে জামিন পেয়েছেন আসামি শেরহিন্দী চৌধুরী (৬০)। তিনি উপজেলার শ্যামপুর সুগার মিলের একজন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। দীর্ঘদিন পলাতক থেকে আদালতে শারীরিক অক্ষমতার নাটক সাজিয়ে মামলার একমাত্র আসামি শেরহিন্দীর জামিন লাভের ঘটনায় আইনজীবীদের মধ্যে এবং এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
এদিকে, জামিন লাভের পর আসামিকে নিজ এলাকায় মোটর সাইকেল চালিয়ে ঘুরতে দেখা গিয়েছে। এমনকি আসামি জামিন লাভের পর বাদীকে মামলা তুলে নিতে হুমকি দিচ্ছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। মামলার বিবরণে জানা যায়, মিঠাপুকুর উপজেলার ২নং রানীপুকুর ইউনিয়নের দৌলত নুরপুর গ্রামে শ্যামপুর সুগার মিলের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শেরহিন্দী চৌধুরীর বাড়িতে ষষ্ট শ্রেণিতে পড়ুয়া ওই শিশুটি (১২) গৃহকর্মীর কাজ করত। ঘটনার দিন ২০২৪ সালের ১০ মার্চ শেরহিন্দীর স্ত্রী এবং পুত্রবধু বাড়িতে ছিলেন না। এই সুযোগে শেরহিন্দী ওই শিশুটিকে ধর্ষণ করেন। এরপর ঘটনাটি কাউকে না বলার জন্য ভিকটিমকে হুমকি দেন। ধর্ষণের বিষয়ে শিশুটি তার মা বাবাকে জানালে তারা অস্বচ্ছল হওয়ায় প্রথমে কোথাও অভিযোগ করেননি।
ধর্ষণের তিনমাস পর শিশুটির শারীরিক পরিবর্তন দেখে মা এবং চাচির সন্দেহ হয়। এরপর হাসপাতালে পরীক্ষা করলে শিশুটির অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হন। তবুও ধর্ষণের শিকার শিশুর পরিবার যখন বিভিন্ন প্রলোভনে এবং অর্থনৈতিক কারনে আইনগত ব্যবস্থা না নিলে ভিকটিম নিজেই ন্যায় বিচার চেয়ে ওই বছরের ১০ মিঠাপুকুর থানায় ধর্ষণ মামলা করে, যার এফআইআর নং- ২০,জি আর নং-২৫৮।
দীর্ঘদিন তদন্ত শেষে স্বাক্ষীদের জবানবন্দি এবং মেডিকেল রিপোর্টে অনুযায়ী মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা, মিঠাপুকুর থানা পুলিশের উপপরিদর্শক, এসআই-আল মামুন চৌধুরী গত বছরের ২৭ আগস্ট আদালতে চূড়ান্ত চার্জশীট দেন।
বাদীর অভিযোগ, শেরহিন্দী প্রভাবশালী হওয়ায় পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করেনি। তবে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা জানিয়েছেন শেরহিন্দী পলাতক থাকায় তাকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। এদিকে আসামি দীর্ঘদিন পলাতক থাকায় আদালত মামলার চার্জশীট আমলে নিয়ে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। এর ৫ দিন পর মামলার আসামি অসুস্থতার অযুহাতে হুইল চেয়ারে করে এসে আদালতে আত্মসমর্পণ করেন ও জামিন চান। আসামি পক্ষের আইনজীবী অপরাধীর অসুস্থতার কথা বলে জামিন চাইলে রংপুর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবু্যনাল-১ এর বিচারক-মোস্তফা কামাল শেরহিন্দী চৌধুরীকে অন্তবর্তীকালীন জামিন মঞ্জুর করেন। এদিকে, বাদীর অভিযোগ- আসামি অসুস্থরা মিথ্যা নাটক সাজিয়েছেন। অভিযোগের ভিত্তিতে এই প্রতিবেদক এলাকায় গেলে দেখতে পান শেরহিন্দী নিজের মোটর সাইকেল চালিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। এ ঘটনার একটি ভিডিও ফুটেজ প্রতিবেদকের কাছে সংরক্ষিত আছে। এ সময় শেরহিন্দীর সঙ্গে কথা বললে তিনি বলেন, আদালত যেহেতু তাকে একবার জামিন দিয়েছে, সেহেতু আর কারো করার কিছু নেই। প্রয়োজনে যদি কিছু বলার বা শোনার থাকে, সেটা তিনি আদালতে গিয়েই বলবেন।