বুধবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৫, ১৭ বৈশাখ ১৪৩২
৮ সদস্যের তদন্তে কমিটি গঠন

'অ্যামোনিয়া বৃদ্ধি ও পিএইচ-অক্সিজেন কমে যাওয়ায় মেঘনায় মরছে মাছ'

চাঁদপুর প্রতিনিধি
  ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
'অ্যামোনিয়া বৃদ্ধি ও পিএইচ-অক্সিজেন কমে যাওয়ায় মেঘনায় মরছে মাছ'
চাঁদপুরের মেঘনা নদীতে মাছ মরার ঘটনা তদন্তে পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য নদীর পানি সংগ্রহ করছেন গবেষকরা -যাযাদি

চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার মেঘনা নদীর মরছে দেশীয় প্রজাতীর বিভিন্ন প্রজাতীর মাছ ও জলজ প্রাণী। চলমান এ ঘটনার পর সরে জমিনে আসলেন পরিবেশ অধিদপ্তর ও মৎস্য বিভাগের সমন্বয়ে গঠিত উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি।

তদন্ত কমিটিতে পরিবেশ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক ড. সোহরাব আলীকে প্রধান করে এবং মৎস্য বিভাগের সিনিয়র সহকারী পরিচালক আলমগীর কবিরসহ ৮ জনকে নিয়ে এ কমিটি গঠন করা হয়।

গত ৩০ জানুয়ারি তদন্ত কমিটি মতলব উত্তর উপজেলার মেঘনা নদীর ষাটনল থেকে আমিরাবাদ পর্যন্ত পরিদর্শন করেন। এ সময় তারা ষাটনল, ষাটনল বাবু বাজার, মোহনপুর ও এখলাছপুর এলাকা থেকে পানির নমুনা সংগ্রহ করে প্রাথমিক পরীক্ষার পর চূড়ান্ত পরীক্ষার জন্য ঢাকায় ল্যাবরোটরিতে নিয়ে যান। এসব তথ্য নিশ্চিত করেন পরিবেশ অধিদপ্তর চাঁদপুর জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মিজানুর রহমান।

তদন্ত কমিটির প্রধান পরিবেশ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক ড. সোহরাব আলী জানান, 'পুরো এলাকাটা আমরা ঘুরে দেখলাম। মেঘনা নদীর তীরবর্তী চারটি স্পট থেকে পানির নমুনাও সংগ্রহ করেছি ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার জন্য। ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষার পর রিপোর্ট পেতে পাঁচ দিন সময় লাগবে। তারপর আমরা মেঘনার এ অঞ্চলের মাছ মরে যাওয়ার প্রকৃত কারণ নিশ্চিত করতে পারব।'

এদিকে মেঘনা পাড়ের ষটনল মালোপাড়া, বাবু বাজার, ছটাকী, দশীনী, মোহনপুর, হাশিমপুর, এখলাছপুর ও জহিরাবাদ এলাকার নদীর পাড়ের বেশ ক'জন জেলে জানান, গত ২৪-২৫ দিন ধরেই ভাটার সময় মেঘনা নদীর পাড়ে চেউয়া, পুটি, চিংড়ি, পাঙাশ, আইর, কাচকি, বেলেসহ বিভিন্ন জাতের মরা মাছ। মাছ ছাড়া সেলেং, ব্যাঙ, কুঁচিয়া, সাপসহ নানা জলজ প্রাণীও মরে ভেসে উঠছে।

সম্প্রতি মাছ ও জলজ প্রাণী মারা যাওয়ার খবর পেয়ে নদীর পানির মান পরীক্ষা করছে মতলব উত্তর উপজেলা মৎস কর্মকর্তার কার্যালয়। ফলাফলে দেখা গেছে, মেঘনার পানিতে পিএইচুএর পরিমাণ কমে এখন ৬ থেকে সাড়ে ৬ পিপিএমুএ দাঁড়িয়েছে। এর স্বাভাবিক পরিমাণ বা নরমাল ভ্যালু সাড়ে ৭ থেকে ৯ পিপিএম। পানিতে অ্যামোনিয়ার স্বাভাবিক পরিমাণ থাকে শূন্য দশমিক ১ পিপিএম। মেঘনার পানিতে সেটি বেড়ে এখন শূন্য দশমিক ২ পিপিএম বা ততোধিক। পানিতে অক্সিজেনের স্বাভাবিক পরিমাণ থাকে ৫ থেকে সাড়ে ৫ পিপিএম। অতিরিক্ত দূষণের ফলে মেঘনার পানিতে অক্সিজেনের পরিমাণ কমে দাঁড়িয়েছে ১ থেকে দেড় পিপিএম-এ। এ কারণে ব্যাপক হারে মাছ মরে যাচ্ছে।

মেঘনাঞ্চলের জেলে প্রদীপ চন্দ্র, কালাচান জানায়, 'গত ২২ থেকে ২৩দিন আমরা নদীতে মাছ ধরতে যাই না, গেলেও মাছ পাই না। বউ-পোলাপান লইয়া অনেক কষ্টে আছি।'

মতলব উত্তর উপজেলা জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা বিজয় কুমার বলেন, নদীর পানিতে অ্যামোনিয়ার পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় এবং পিএইচ ও অক্সিজেনের হার কমে যাওয়ায় ব্যাপকহারে মাছ মরছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। নারায়ণগঞ্জ ও মুন্সিগঞ্জ জেলার কারখানার বিষাক্ত বর্জ্য মিশে মেঘনার মিঠাপানিও দূষিত হয়ে উঠেছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে