বাংলাদেশের ভূ-স্বর্গ ও বাংলার দার্জিলিংখ্যাত পাহাড়ি কন্যা বান্দরবান। প্রতিবছর লাখো পর্যটক ছুটে আসেন পাহাড়ের সৌন্দর্য উপভোগে। আর পর্যটন ব্যাবসাকে কেন্দ্র্র করে এ জেলায় প্রতিনিয়ত গড়ে উঠেছে নতুন নতুন রিসোর্ট। এরই সঙ্গে বাড়ছে দেশি-বিদেশি ফল-মূলের দোকানও। তাই এখানকার অর্থনীতির প্রায় পুরোটা জুড়েই রয়েছে পর্যটন।
এ দিকে, বান্দরবানের কৃষকদের বাগানে উৎপাদিত প্রাকৃতিক ও ফরমালিনমুক্ত ফলের সুনাম সারাদেশে ছড়িয়েছে অনেক আগেই। জেলায় উৎপাদিত আম, আনারস, কলা, লিচু আর কাঁঠালসহ বিভিন্ন ফলের কদর থাকে সারা বছরই। পর্যটকদের কাছেও এর ব্যতিক্রম নয়। এরই মধ্যে জেলায় বেড়াতে আসা পর্যটকদের পছন্দের তালিকায় নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে বিভিন্ন ফলের মুখরোচক 'চাটনি'।
বান্দরবানের সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে আসা পর্যটকদের যেমন মুগ্ধ করেছে পাহাড় আর ভোরের দিগন্ত বিস্তৃত সাদা মেঘের ভেলা, তেমনি সবুজ পাহাড়ের গা ছুঁয়ে পাথরের বুকে বয়ে চলা ঝরনার কলধ্বনি। এক কথায় মন ভোলানো সব আয়োজন। আর সুযোগটা কাজে লাগাচ্ছেন বম সম্প্রদায়ের ১২ জন নারী-পুরুষ ব্যবসায়ী।
এদিকে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ১ হাজার থেকে দেড় হাজার টাকার বিভিন্ন ফল ও ফলের চাটনি বিক্রি হয় এ পর্যটন কেন্দ্র এলাকায়। ফলে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছেন সেখানকার বাসিন্দারা।
জেলা সদর থেকে ৫ কিলোমিটার দূরে শৈপ্রপাতে গিয়ে দেখা যায়, স্থানীয় বম সম্প্রদায়ের নারী-পুরুষরা পর্যটন কেন্দ্রের মূল ফটকে রাস্তার ধারে ঝুঁপড়ি ঘর বানিয়ে নিজেদের বাগানে উৎপাদিত আনারস, পেঁপে, জাম্বুরা, আম, কলা পেয়ারাসহ নানা ফলমূলের পসরা সাজিয়ে বিক্রি করছেন। পাশাপাশি এসব বিষমুক্ত বিভিন্ন তাজা ফল কেটে কাঁচা মরিচ, ধনিয়া পাতা, লবন, চিনি ও কাসুন্দিসহ নানা মশলা মিশিয়ে তৈরি করছেন মুখরোচক বিভিন্ন ফলের চাটনি।
এদিকে স্থানীয়দের হাতের তৈরি পছন্দের ফলের চাটনির স্বাদ নিতে পর্যটকরা ভিড় করছেন দোকানগুলোতে। কেউ দলবেঁধে কিংবা যে যার মত করে খেয়ে নিচ্ছেন এ চাটনি। তাজা ও ফরমালিনমুক্ত নানা ফলের সুস্বাদু চাটনি খেয়ে নতুন এক অভিজ্ঞতার মুখোমুখি পর্যটকরা।
ঢাকা থেকে আসা পর্যটক দম্পতি মহসিন কবির ও জেরিন আক্তার বলেন, 'প্রতিবছর দেশের বিভিন্ন স্থানে ভ্রমণে যাই, কিন্তু বান্দরবান ভ্রমণের মজাই আলাদা। এখানকার প্রকৃতি-পরিবেশ যেমন সুন্দর, তেমনি বিভিন্ন পাহাড়ি সম্প্রদায়ের কোমর তাঁতের কম্বল, ওড়না, মাফলারসহ বিষমুক্ত তাজা ফলমূল আমাদের আকৃষ্ট করছে। আর তার সঙ্গে শৈলপ্রপাত পর্যটন কেন্দ্রে বম সম্প্রদায়ের নারী-পুরুষদের হাতের তৈরি বিভিন্ন ফলের সুস্বাদু চাটনি অতুলনীয়।'
চাঁদপুর থেকে বেড়াতে আসা পর্যটক মফিজুর রহমান বলেন, 'আমি এ পর্যন্ত ছয়বার বান্দরবানে আসছি। প্রতিবারই এখানকার চাটনি খেয়ে যাই। এ খাবারের টানে বার বার মন চায় এখানে আসতে। যাবার সময় প্রাকৃতিক ও ফরমালিনমুক্ত আনারস, পেঁপেসহ বিভিন্ন ফল কিনে নিয়ে যাই।'
বিক্রেতারা জানান, প্রতি বাটি আনারস, জাম্বুরা, পেঁপে আর পেয়ারা চাটনি বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা করে। এছাড়াও আম, আনারস ও পেঁপে আকৃতি অনুযায়ী বিক্রি হচ্ছে বিভিন্ন দামে। পর্যটকদের পছন্দ অনুযায়ী কেটে পরিষ্কার করে ধুয়েও দিচ্ছেন বিক্রেতারা।
চাটনি বিক্রেতা ফারুক পাড়ার বাসিন্দা অলিফ বম বলেন, প্রায় প্রতিদিন প্রচুর পর্যটকের ভিড় থাকে শৈলপ্রপাতে। এখানে বেড়াতে আসা পর্যটকদের সবচেয়ে প্রিয় খাবার ফরমালিনমুক্ত বিভিন্ন তাজা ফলের চাটনি। আমাদের তৈরি চাটনি খেয়ে খুশি পর্যটকরাও। বান্দরবান কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক এম এম শাহ্ নেয়াজ বলেন, সারা বছরই বান্দরবানে ফরমালিনমুক্ত ও প্রাকৃতিকভাবে প্রচুর ফল-ফলাদি উৎপাদন হয়ে থাকে। আর এসব ফল-মূল বিক্রি করে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন কৃষকরা।