বুধবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৫, ১৭ বৈশাখ ১৪৩২

পাখির কলকাকলিতে ঘুম ভাঙে গ্রামবাসীর

নাজমুল হাসান, গুরুদাসপুর (নাটোর)
  ০৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০
পাখির কলকাকলিতে ঘুম ভাঙে গ্রামবাসীর

বিকাল গড়িয়ে সন্ধ্যা নেমে আসছে। আকাশে ঝাঁকে ঝাঁকে পরিযায়ী পাখির উড়াউড়ি। ধীরে ধীরে পশ্চিম দিগন্তে সূর্য অস্ত যাচ্ছে, তখন একে একে গাছের ডালে এসে বসছে বিভিন্ন প্রজাতির পরিযায়ী পাখি। সংখ্যায় তারা একটি কিংবা দুটি নয়, হাজার হাজার। পাখিদের গাছের ডালে বসার নয়নাভিরাম দৃশ্য, কিচিরমিচির শব্দে বিমোহিত দুইটি গ্রাম। ক্ষণিকের জন্য মনে হয়, এ যেন পাখিদের গ্রাম। সকালে পাখিদের কলকাকলিতে ঘুম ভাঙে নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার শাহাপুর ও কালিনগর গ্রামের মানুষের। পাখিদের এমন মুহূর্তের সাক্ষী শুধু গ্রামবাসীই নয়, দূর-দূরান্ত থেকেও ভীষণ আগ্রহ নিয়ে তাদের দেখতে আসেন শত শত মানুষ।

শাহাপুর ও কালিনগর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, আকাশে ঝাঁকে ঝাঁকে বক, পানকৌড়ি, শামুকখোল, কাচিচোড়াসহ নাম না জানা অনেক পরিযায়ী পাখি উড়ে উড়ে গাছের ডালে গিয়ে বসছে। এই দুইটি গ্রামের কিছু অংশে গাছপালা অনেক বেশি। পাখিরা হয়তো এ কারণেই এই দুই গ্রামের এই জায়গাগুলো বেঁছে নিয়েছে। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে আর পাখিদের সংখ্যা ক্রমেই বেড়েই চলছে। হাজার হাজার পাখি। গ্রামের মানুষও পাখিদের আপন করে নিয়েছে। কোন শিকারীকে এই দুই গ্রামে প্রবেশ করতে দেয় না গ্রামবাসী। পাখিদের ডানা ঝাপটানি ও কিচিরমিচির শব্দে বিমোহিত হতেই যেন গ্রামবাসী পাখিদের নিরাপত্তায় একটু বেশিই সজাগ। দুইটি গ্রামের প্রায় দেড় শতাধিক বড় গাছে পাখিগুলো আশ্রয় নিয়েছে। সকালে কিচিরমিচির শব্দে ডানা ঝাপটানি দিয়ে খাবারের সন্ধানে চলে যায় পাখিগুলো। সকাল থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত কোন পাখিকে গ্রামে দেখা না গেলেও ৪টার পর থেকে ধীরে ধীরে পাখিগুলো ফিরতে শুরু করে আপন ঠিকানায়।

শাহাপুর গ্রামের যুবক শরিফুদ্দিন আহমেদ বলেন, উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৫ কিলোমিটার দূরে শাহাপুর ও কালিনগর গ্রাম। গত কয়েকবছর ধরে তাদের গ্রামে পরিযায়ী পাখিদের বসবাস। শীতের শুরুতে পাখিগুলোকে দেখা যায়। তবে এ বছর পাখির সংখ্যা অনেক বেশি। তার বাড়িতে মেহগনি, আম, দেবদার ও বাশপাগান রয়েছে একটি। মূলত এসব গাছেই পাখিগুলো বিকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত আসতে থাকে। রাতে এখানেই থাকে। সকাল হলে আবার খাবারের সন্ধানে চলে যায়। বাড়ির চারপাশের গাছের ডালে পাখিগুলো বসবাস করার কারণে বাড়িতে ও বাড়ির আঙিনায় পাখির অনেক বিষ্টা পরে সাদা হয়ে থাকে। তবে তাদের ভালো লাগে। এ কারণে পাখিদের এখান থেকে কেউ তারিয়ে দেয় না।

কালিনগর গ্রামের রফিকুল ইসলাম বলেন, তার বাঁশবাগানজুড়েই পরিযায়ী পাখির বসবাস। তিনি বরং বাগানের আশপাশের বাসিন্দাদের সতর্ক থাকতে বলেছেন। কোন শিকারী বা অসাধু ব্যক্তি যেন পাখিগুলোকে শিকার করতে না পারে। তবে সরকারিভাবে পাখি শিকার বন্ধে লিফলেট, ব্যানার, সভা-সেমিনার করলে সাধারণ মানুষ আরো বেশি সতর্ক থাকতে পারত।

উপজেলা জীববৈচিত্র্য রক্ষা কমিটির সভাপতি বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এস এম শহিদুল ইসলাম সোহেল বলেন, 'গুরুদাসপুরের শাহাপুর ও কালিনগর গ্রামে হাজার হাজার পরিযায়ী পাখি এসেছে। জীববৈচিত্র্য রক্ষা কমিটির পরিবেশকর্মীরা সে বিষয়ে সজাগ রয়েছে। শিকারীরা যেন পাখি শিকার করতে না পারে সেই লক্ষ্যে ওই এলাকায় পরিবেশকর্মীরা সার্বক্ষণিক পরিদর্শনে আছেন।'

রাজশাহী বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বন্যপ্রাণী পরিদর্শক মো. জাহাঙ্গীর কবির জানান, 'ওই গ্রামের পাখি রক্ষায় রাজশাহী বন বিভাগ থেকে সরেজমিন পরিদর্শন করে গ্রামবাসীকে নানাভাবে পরামর্শ ও সহযোগিতা দেওয়া হবে।'

গুরুদাসপুর ইউএনও সালমা আক্তার বলেন, শাহাপুর ও কালিনগর গ্রামে পাখি এসেছে শুনেছেন। অতি দ্রম্নত গ্রাম দুইটি সরেজমিন করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে