ক্ষেতলালে আলুর বীজ ও সারের দামে অসন্তোষ

সালথায় প্রণোদনার পেঁয়াজ বীজে ক্ষতিগ্রস্ত দেড় হাজার কৃষক

প্রকাশ | ০৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০

সালথা (ফরিদপুর) ও ক্ষেতলাল (জয়পুরহাট) প্রতিনিধি
পেঁয়াজ উৎপাদনে প্রথম অবস্থানে ফরিদপুরের সালথা উপজেলা। এ উপজেলা থেকে প্রতিবছর প্রায় ১ লক্ষ ৭০ হাজার মে. টন পেঁয়াজ উৎপাদন হয়ে থাকে। সেই লক্ষ্যে প্রতিবছর সরকারিভাবে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের প্রণোদনা হিসেবে পেয়াঁজ বীজ বিতরণ করা হয়ে থাকে। তবে এবারের প্রণোদনার বীজেই ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন কৃষকরা। বিষয়টির সত্যতাও পেয়েছে বলে উপজেলা কৃষি অফিস জানিয়েছে। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের রবি মৌসুমের আওতায় ১ হাজার ৪৫০ জন ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষককে তাহেরপুরী ও বারি পেঁয়াজ-৪ জাতের পেঁয়াজ বীজ বিতরণ করা হয়েছে। প্রণোদনা হিসেবে এক কেজি করে পেঁয়াজ বীজ বিতরণ করা হয়। এতে প্রণোদনা পাওয়া সব কৃষকই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। কৃষকরা বলছেন, এসব বীজের ৫ থেকে ৭% বীজও অঙ্কুরিত হয়নি। এমনকি কোনো কোনো কৃষকের জমিতে অঙ্কুরিত বীজের হার ০%। তবে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বলছেন, ১০-১২% বীজ অঙ্কুরিত হয়েছে বলে সরেজমিনে প্রমাণ পেয়েছেন, যার হার মোটেও সন্তোষজনক নয়। এসব বীজ বপনের সময় শেষ হওয়ায় বর্তমানে হতাশায় দিন কাটছে কৃষকদের। এ বছর সালথা উপজেলা কৃষি অফিস থেকে প্রণোদনা বীজ পাওয়া কৃষক আরজু মিয়া, রমজান হাওলাদার, কবির কাজী ও শরিফুল হাসান জানান, প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র চাষিদের প্রণোদনার এক কেজি বীজ ও সার দেয় কৃষি অফিস। কিন্তু সেই বীজের অঙ্কুরিতের হার দেখে হতাশ তারা। ওই উপজেলার কারও বীজ অঙ্কুরিত হয়নি বলে অনেক কৃষক অভিযোগ করেন। যে বীজ পেয়েছেন তার কিছুই গজায়নি (অঙ্কুরিত)। কয়েকদিন পরই হালি পেঁয়াজ লাগানো শুরু হবে। এখন নতুন করে বীজও পাওয়া যাচ্ছে না, বপনের সময়ও শেষ। এ পেঁয়াজ দিয়ে তাদের সংসার চলে। এ বছর পেঁয়াজ বীজের দাম বেশি হওয়ায় কেনার ক্ষমতার বাইরে। তাই অনেক আশা নিয়ে উপজেলা থেকে এক কেজি বীজ নেন। কিন্তু তার কিছুই অঙ্কুরিত হয়নি। এর ক্ষতিপূরণ দাবি করেন তারা। কৃষকদের এমন ক্ষতির দায়ভার নিতে চাচ্ছেন না সংশ্লিষ্ট উপজেলা কর্মকর্তা। তারা বিএডিসি কর্মকর্তাদের দায়ী করছেন। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুদর্শন সিকদার বলেন, এক হাজার চারশ' পঞ্চাশজন কৃষক পেঁয়াজবীজ পেয়েছেন। তাদের বীজ না গজানোর অভিযোগ উঠেছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, শূন্য থেকে ১০ শতাংশ বীজের চারা গজিয়েছে। তিনি বলেন, বিএডিসির সরবরাহ করা পেঁয়াজবীজ কৃষকদের দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে। ফরিদপুর জেলা কৃষি পুনর্বাসন ও প্রণোদনা কমিটি একটি তদন্ত দল গঠন করেছে। সুদর্শন সিকদার আরও বলেন, এ বছর সালথা উপজেলায় সাড়ে ১১ হাজার হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ রোপণ করা হবে। ক্ষেতলাল (জয়পুরহাট) প্রতিনিধি জানান, জয়পুরহাটের ক্ষেতলালে আলুর বীজ ও সারের দাম নিয়ে বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা। প্রতি বস্তা উচ্চফলনশীল আলুর বীজ, সার সরকার নির্ধারিত দামের প্রায় দ্বিগুণ দামে টিএসপি, এমওপিসহ প্রয়োজনীয় সার বিক্রিতেও নিচ্ছেন অতিরিক্ত দাম। দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম আলু উৎপাদনকারী জেলা হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে জয়পুরহাট। জেলার ক্ষেতলাল ও কালাই উপজেলা কার্তিক মাস থেকেই আলুর বীজ রোপণের জন্য কৃষকরা তাদের জমিতে হাল চাষ করেন। প্রয়োজনীয় সার প্রয়োগ করে বীজের আলু রোপণ করছেন নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে। কৃষকরা জানান, আলুর বীজের দাম অত্যন্ত বেশি। পাশাপাশি সারও কিনতে হচ্ছে বাড়তি দামে, এভাবে চললে আলুর আবাদ করা সম্ভব নয়। তবে বেশি দামে বিক্রির অভিযোগের সত্যতা পেয়েছেন বলেও জানান কৃষি কর্মকর্তারা। উপজেলা কৃষিবিদ মো. জাহিদুর রহমান বলেন, 'সরকার নির্ধারিত দামে সার ও বীজ বিক্রি করতে প্রত্যেক ডিলারকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।' চলতি মৌসুমে ক্ষেতলাল উপজেলায় ৯ হাজার হেক্টর জমিতে আলু রোপণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ফসলটির ১৫ হাজার মেট্রিক টন বীজের প্রয়োজন হচ্ছে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত অর্জিত হয়েছে ৮ হাজার ৫শ' হেক্টর। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এবার লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যেতে পারে।