বুধবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৫, ১৭ বৈশাখ ১৪৩২

ডুমুরিয়ার ঘোষড়া গ্রামবাসী নিজেরাই নির্মাণ করলেন স্বপ্নের সড়ক!

সুব্রত কুমার ফৌজদার, ডুমুরিয়া (খুলনা)
  ০৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০
ডুমুরিয়ার ঘোষড়া গ্রামবাসী নিজেরাই নির্মাণ করলেন স্বপ্নের সড়ক!
ডুমুরিয়ার ঘোষড়া গ্রামবাসী নিজেরাই নির্মাণ করলেন স্বপ্নের সড়ক!

খুলনার ডুমুরিয়ায় নিজেদের স্বেচ্ছাশ্রম ও অর্থে বিলের মধ্য দিয়ে প্রায় ২ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের স্বপ্নের সড়ক তৈরি করেছেন মাগুরাঘোনা ইউনিয়নের ঘোষড়া গ্রামের বাসিন্দারা। ঘোষড়া বটতলা হতে মফিদুল খানের বাড়ি ভায়া হামিদুলের বাড়ি হতে রশিদ ডাক্তারের সীমানা পর্যন্ত এ সড়ক নির্মাণ করা হয়। যা নির্মাণ করতে সরকারের অর্ধকোটি টাকার বেশি ব্যয় হতো। শিক্ষা, চিকিৎসা, হাট-বাজার, কৃষিসহ নানা সুবিধার কথা চিন্তা করে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানান গ্রামের বাসিন্দারা।

জানা যায়, যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন এবং অবহেলিত গ্রামের নাম ঘোষড়া। মাগুরাঘোনা ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ড আওতাধীন গ্রামটি। এ অঞ্চলে সড়ক নিয়ে সরকারের তেমন নজর আসেনি এ যাবত। বর্ষা মৌসুমে চরম দুর্ভোগের শিকার হয়ে আসছে কয়েক হাজার মানুষ। কৃষি অধু্যষিত বিশাল এই অঞ্চল থেকে কৃষকদের ফসল বাড়িতে নেওয়ার ভালো কোনো ব্যবস্থা ছিল না। তাই গ্রামের মানুষ চেয়ারম্যান-মেম্বারদের দিকে না তাকিয়ে নিজেরাই রাস্তা তৈরির উদ্যোগ নেন। প্রায় এক মাস ধরে তৈরি করে আসছেন স্বপ্নের সড়কটি। কাজ শেষ হতে আরও দুই সপ্তাহ সময় লাগবে বলে জানিয়েছেন গ্রামবাসী। শুধু শ্রম নয়, গ্রামবাসী প্রত্যেক বাড়ি থেকে অর্থ এবং বাঁশ-খুটিসহ রাস্তা তৈরির নানা সরঞ্জামাদি আদায় করে রাস্তায় কাজে লাগান।

এ বিষয়ে এলাকার জিয়াউর রহমান মিঠু জানান, 'রাস্তা প্রায় ৩ ফুট উঁচু করা হয়েছে। এর সম্পূর্ণ খরচ গ্রামবাসী বহন করেছে। এবার আমরা গাড়িতে করে কৃষি ফসল ঘরে তুলতে পারব।' ওয়াজেদ আলী শেখ বলেন, 'অর্থ-কড়ি, বাঁশ-খুটি দিয়ে এবং গতর খেঁটে রাস্তা তৈরি করছি। এ ছাড়া আমাদের আর কোনো উপায় নেই। আমাদের রাস্তা নিয়ে এ পর্যন্ত কোনো জনপ্রতিনিধিরা ভাবেননি।'

সাবেক মেম্বর মাহাবুবুর রহমান গাজী ও এনামুল হক জানান, 'বর্ষা মৌসুমে কেশবপুরের পানির চাপে পস্নাবিত হতো ঘোষড়াসহ বেতাগ্রাম, আরশনগর, কাঞ্চনপুর ও হোগলাডাঙ্গা এলাকা। তাই নতুন তৈরি করা এই সড়কটি বন্যার সময় রক্ষা বাঁধের কাজ করবে। সড়কটি নির্মাণ করতে গ্রামবাসীর শ্রম ও আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র মিলে ৩০ লাখ টাকার বেশি ব্যয় হয়েছে। যা কিনা সরকারের পক্ষ থেকে করতে হলে ব্যয় অর্ধ কোটি ছাড়াতো। তবে রাস্তাটি স্থায়ীভাবে রাখার জন্য পাকা পাইলিংয়ের একান্ত প্রয়োজন।'

মাগুরাঘোনা ইউপি চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম হেলাল জানান, রাস্তা নির্মাণ করায় দ্রম্নত তাদের বাড়ির পানিও নেমে গেছে। ওই রাস্তা ঘোষড়া গ্রামবাসীর জন্য খুবই উপকার হবে।'

ইউএনও মুহাম্মদ আল-আমিন জানান, 'গ্রামবাসীর প্রশংসনীয় এ উদ্যোগকে আমি সাধুবাদ জানাই। রাস্তাটি যাতে স্থায়ীত্ব লাভ করে সে ব্যবস্থা করার চেষ্টা করব।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে