প্রতিবাদে এলাকাবাসীর বিক্ষোভ বাঁধ ভেঙে বন্যার শঙ্কা

টাঙ্গাইলে হাত বদলে বেড়েছে অবৈধ বালুঘাট

প্রকাশ | ০৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০

জোবায়েদ মলিস্নক বুলবুল, টাঙ্গাইল
যমুনার তীর ঘেঁষে টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর অংশে ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে উঠেছে অবৈধ বালুঘাট। স্থানীয় প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা ও নগদ টাকার প্রলোভনে স্থানীয়দের প্রতিবাদের মুখেও রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় ওইসব বালুঘাটের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। ফলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত নদী তীর রক্ষাবাঁধ বর্ষা মৌসুমে ভেঙে বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে এবং সরকারের ইকোনমিক জোন তৈরির প্রস্তাবিত প্রকল্প ভেস্তে যাচ্ছে। এলাকাবাসী বালুঘাট বন্ধে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করছেন। জানা যায়, যমুনা নদীর বালু স্থানীয়দের কাছে সাদাসোনা হিসেবে খ্যাত। আওয়ামী লীগের শাসনামলে টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরের নিকরাইল ও গোবিন্দাসী ইউনিয়নে অবৈধ বালুঘাট ছিল ১৯টি। এসব বালুঘাট উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক পৌর মেয়র মাসুদুল হক মাসুদ এবং সাবেক এমপি তানভীর হাসান ছোট মনির নিয়ন্ত্রণ করতেন। অন্যদিকে, অর্জুনা ও ফলদা ইউনিয়নে বালুঘাট ছিল ৩টি। এগুলোর নিয়ন্ত্রণ করতেন উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক তাহেরুল ইসলাম তোতা। ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর আওয়ামী লীগ নেতারা আত্মগোপনে চলে যান। ওইসব বালুঘাটের নিয়ন্ত্রণ চলে যায় স্থানীয় বিএনপি নেতাদের হাতে। ১৯টি অবৈধ বালুঘাটের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বিএনপি নেতারা আরও ১৪টি অতিরিক্ত বালুঘাট বসায়। তাহেরুল ইসলাম তোতার নিয়ন্ত্রণাধীন ৩টি বালুঘাটের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ওই এলাকায় আরও ২টি নতুন বালুঘাট বসায় স্থানীয় ওয়ার্ড বিএনপি নেতারা। বর্তমানে ভূঞাপুর উপজেলায় ৩৩টি ও ৫টি মোট ৩৮টি অবৈধ বালুঘাট চলছে। প্রতিটি বালুঘাটে রয়েছে ৩-৪টি করে বালু তোলার পয়েন্ট। যেগুলো থেকে বালু কেটে ট্রাকে তোলা হয়। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নিকরাইল ও গোবিন্দাসী ইউনিয়নের ৩৩টি অবৈধ বালুঘাট ভূঞাপুর উপজেলা বিএনপির নেতাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তারা ৩৩টি অবৈধ বালুঘাটকে ৬ ভাগে ভাগ করে স্থানীয় নেতাকর্মীদের দায়িত্ব দিয়েছেন। এছাড়া ভূঞাপুর-তারাকান্দি আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশে ফলদা ইউনিয়নের কুঠিবয়ড়া, অর্জুনা ইউনিয়নের অর্জুনা, তারাই, জগৎপুরা ও নলিন এলাকার ৫টি বালুঘাটের নিয়ন্ত্রণ করছেন বিএনপি নেতারা। সরেজমিন দেখা যায়- নিকরাইল ইউনিয়নের নিকরাইল, মাটিকাটা, সিরাজকান্দি, জিগাতলা এলাকায় ২৪টি এবং গোবিন্দাসী ইউনিয়নে ৯টি বালুঘাট রয়েছে। বালুঘাটগুলো নিয়ন্ত্রণে ৬টি গ্রম্নপ করে দেওয়া হয়েছে। তারাই গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক রজমান আলী ও সিফাত আহমেদসহ অনেকেই জানান, যেভাবে দিন-রাত ভেকু মেশিন (খননযন্ত্র) দিয়ে বালু কেটে ট্রাকযোগে বিক্রি করা হচ্ছে তাতে আগামী বর্ষা মৌসুমে নদী ভাঙনে ঘরবাড়ি বিলীন হয়ে যাবে। সরকারের কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত নদীরক্ষা বাঁধ ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। একাধিকবার তারা প্রতিবাদ ও অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার পাননি। বাধ্য হয়ে গত মঙ্গলবার উপজেলার বলরামপুর, তারাই ও গারাবাড়ি এলাকার লোকজন ভূঞাপুর-তারাকান্দি আঞ্চলিক মহাসড়কের গারাবাড়ী এলাকায় আগুন জ্বালিয়ে প্রায় ২ ঘণ্টা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করতে থাকেন। এতে ওই সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এ খরব পেয়ে ভূঞাপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ফাহিমা বিনতে আখতার ও থানার ওসি একেএম রেজাউল করিম ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে বালু উত্তোলন বন্ধে ব্যবস্থাগ্রহণের আশ্বাস দিলে বিক্ষোভকারীরা অবরোধ তুলে নেয়। এরআগে গারাবাড়ী এলাকায় স্থানীয়দের আন্দোলন চলাকালে অবৈধ বালুঘাটে গিয়ে এলাকাবাসী বালু উত্তোলনের বেশ কয়েকটি ভেকু (খননযন্ত্র), একটি ড্রামট্রাক ও বেশকিছু পাইপ ভাঙচুর করে। পরে পাইপগুলো মহাসড়কে নিয়ে আগুন জ্বালিয়ে দেয়া হয়। এদিকে, ভূঞাপুর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সেলিমুজামান তালুকদার সেলু জানান, তিনি বালু ঘাটের সঙ্গে জড়িত নন। তার নাম ভাঙিয়ে বিএনপির লোকজন ঘাটগুলো পরিচালনা করছে। ভূঞাপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ফাহিমা বিনতে আখতার জানান, বিক্ষোভের খবর পেয়ে তিনি ঘটনাস্থলে গিয়ে বালুঘাট বন্ধের প্রতিশ্রম্নতি দিয়ে আন্দোলনকারীদের আশ্বস্ত করেছেন। পরবর্তীতে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক শরীফা হক জানান, বালু বা ফসলি জমির মাটি কেটে বিক্রি করার কোনো সুযোগ নেই। ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট উপজেলায় অবৈধ বালু উত্তোলন ও ফসলি জমির মাটি কাটা বন্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।