বুধবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৫, ১৭ বৈশাখ ১৪৩২

কেরানীগঞ্জের পাবলিক টয়লেট ভেঙে তৈরি হচ্ছে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান!

বাড়ছে ভোগান্তি-স্বাস্থ্যঝুঁকি পুনরায় নির্মাণ দাবি
মাসুম পারভেজ, কেরানীগঞ্জ (ঢাকা)
  ০৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০
কেরানীগঞ্জের পাবলিক টয়লেট ভেঙে তৈরি হচ্ছে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান!
কেরানীগঞ্জের পাবলিক টয়লেট ভেঙে তৈরি হচ্ছে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান!

দক্ষিণবঙ্গের ২১ জেলার মানুষের অন্যতম প্রবেশদ্বার ঢাকার কেরানীগঞ্জের কদমতলি গোলচত্বর এলাকায় সরকারি টাকায় তৈরি পাবলিক টয়লেট ভেঙে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে। মানুষের নিত্যদিনের ব্যবহার্য এমন স্থাপনা কেন ভেঙে ফেলা বা দখল করা হলো সেটি নিয়ে প্রশ্ন সাধারণ মানুষের।

জানা যায়, গত ২০২১ সালের ফেব্রম্নয়ারি-জুলাই মাসে কেরানীগঞ্জ উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গণ ও কদমতলি গোলচত্বর এলাকায় ৩৫ লাখ ৬ হাজার ৭৬১ টাকা খরচে দুইটি পাবলিক টয়লেট নির্মাণ করে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি)। যা পুরুষ কক্ষ ৩টি ও মহিলা কক্ষ ২টিসহ হাইকমোড ও গোসল করার ব্যবস্থা রাখা হয়। এ দিকে উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গণের পাবলিক টয়লেটটি অনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের অপেক্ষায় থাকলেও কদমতলি গোলচত্বর এলাকার পাবলিক টয়লেটটির কোনো চিহ্ন নেই। এ টয়লেটটি কয়েক বছর চালু থাকলেও স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, সরকার পতনের পর তানাকা ফিলিং স্টেশনের এমডি মহিউদ্দিন মাহিম তার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান নির্মাণের জন্য পাবলিক টয়লেটটি ভেঙে ফেলেছেন। এতে ঢাকাগামী দক্ষিণাঞ্চলের লোকজন ও পথচারীকে চরম বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হচ্ছে বলে জানা যায়।

স্থানীয় ব্যবসায়ী বাসিন্দা আব্দুল কাদের বলেন, 'কয়েক বছর আগে কদমতলি গোলচত্বর এলাকায় একটি টয়লেট নির্মাণ করা হলেও গত ৫ আগস্টের পর সেই পাবলিক টয়লেট নেই। প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে হলে তা চেপে ধরে থাকতে হয়। বাসায় গিয়ে ফ্রেশ হতে হয়। কদমতলিতে নির্মিত পাবলিক টয়লেটটি উদ্বোধনের পর থেকেই আওয়ামী শ্রমিক লীগ নেতা জয়নালের বেদখলে ছিল।' এই বাসিন্দা আরও বলেন, 'পদ্মাসেতু চালু হওয়ার পর কেরানীগঞ্জের চুনকুটিয়া ও কদমতলি গোলচত্বর দিয়ে যানবাহন চলাচল কয়েক গুণ বেড়েছে। ফলে হাজার হাজার যাত্রী ও শ্রমিক-চালককে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। এবং বাচ্চাদের প্রস্রাব-পায়খানার জন্য চাপ দেয়, তখন বাধ্য হয়ে অনেক সময় খোলা জায়গাতেই কাজ সারতে হয়।? সরকারি টাকার পাবলিক টয়লেট ভেঙে সেখানে তৈরি হচ্ছে তানাকা ফিলিং স্টেশন নামে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। দেখেও না দেখার ভান করছে যেন উপজেলা প্রশাসন।'

রুমিজউদ্দিন নামের আরেকজন বাসিন্দা বলেন, 'সরকারের পটপরিবর্তনের পর আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মতো কেরানীগঞ্জের পাবলিক টয়লেটও আত্মগোপনে চলে গেছে। পাবলিক টয়লেটের চিহ্ন এবং নেতাকর্মীদের আর এলাকায় দেখা যায়নি। উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ কদমতলি ও চুনকুটিয়া এলাকায় বর্তমানে পাবলিক টয়লেট না থাকায় ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কের যাত্রীরা যত্রতত্র প্রস্রাব করে পরিবেশ নষ্ট করছেন। পথচারীদের নাকে-মুখে রুমাল দিয়ে পথ চলাচল করতে হচ্ছে।' পুনরায় নারী ও প্রতিবন্ধী বান্ধব, আধুনিক, মানসম্মত পাবলিক টয়লেটের দাবি জানিয়েছেন পথচারী ও পরিবেশবাদীরা। চাকরিজীবী নারী মাইমুনা ফেরদৌসী বলেন, 'প্রতিদিন বিভিন্ন প্রয়োজনে ঘর ছেড়ে বাইরে আসি। কয়েক ঘণ্টা পরপর প্রত্যেকেরই প্রাকৃতিক কাজ সম্পাদনের প্রয়োজন পড়ে। কদমতলি গোলচত্বরে পাবলিক টয়লেট ছিল, হঠাৎ করে সে পাবলিক টয়লেটটিও নেই। নারীদের ভোগান্তির পাশাপাশি বয়োজ্যষ্ঠরা আরও বিপাকে। কেননা বয়সের সঙ্গে সঙ্গে মানুষ বিভিন্ন রকম রোগ এমনকি ডায়াবেটিসের শিকার। অনেকের হাতে সময় সংকটের কারণে সেই মানুষকে বাধ্য হয়ে পথেঘাটে প্রাকৃতিক কাজ সারতে হচ্ছে। তাতে পরিবেশ যেমন দূষণ হচ্ছে, তেমনি দৃষ্টিকটু। যেটা নারীদের পক্ষে সম্ভব না। সবকিছু মিলিয়ে কদমতলি ও চুনকুটিয়া চৌরাস্তা এলাকায় গণশৌচাগারের একান্ত প্রয়োজন।'

কেরানীগঞ্জের ব্যস্ততম সড়ক কদমতলি দাবি করে দিনমজুর করিমন বেগম বলেন, 'বাসা থেকে বের হয়ে জরুরি প্রয়োজনে টয়লেট ব্যবহার করতে হলেও তাকে বাধ্য হয়ে এক থেকে দুই ঘণ্টা অপেক্ষা করে বাসায় ফিরতে হয়, যা চরমভাবে মেয়েদের স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে। আর কোনো কারণে মার্কেটের কোনো টয়লেট ব্যবহার করতে হলে পড়তে হয় নানা বিড়ম্বনায়।' এদিকে ঢাকা জেলা দক্ষিণ ট্রাফিক পুলিশ সদস্য মাকসুদ আলম বলেন, 'পাবলিক টয়লেটটি না থাকায় প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে হলে আমাদেরও আশপাশের ব্যাংক বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে অনুরোধ করতে হয়। এতে মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে জনস্বাস্থ্য।'

পাবলিক টয়লেট ভাঙার বিষয়ে তানাকা ফিলিং স্টেশনের কর্ণধার মো. মহিউদ্দিন মাহিমকে একাধিকবার ফোন দিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) উপজেলা প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম বলেন, 'জনস্বার্থে নির্মিত কদমতলি গোলচত্বর এলাকার পাবলিক টয়লেট ভেঙে ফেলেছে এমন একটি অভিযোগ পেয়েছি। এই অভিযোগ পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বিচার বিশ্লেষণ করে সরকারে আইন বিধি অনুসরণ পূর্বক আমরা শিগগিরই ব্যবস্থা নেব।'

জমির মালিকানার বিষয় জানতে চাইলে কেরানীগঞ্জ সহকারী কমিশনার (ভূমি) মনীষা রানী কর্মকার জানান, 'সরকার সাধারণত খাস অথবা অধিগ্রহণকৃত জমি ছাড়া কোনো ধরনের অবকাঠামো তৈরি করে না। তবে কদমতলি গোলচত্বরের পাবলিক টয়লেটটি সরকারি জায়গা নাকি ব্যক্তিগত জায়গায় বিষয়টি আমার জানা নেই। আমি নতুন জয়েন করেছি, সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদ নায়েবকে পাঠিয়ে সরজমিনে তদন্ত করে বিস্তারিত জানাতে পারব।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে