সত্তর বছরের বৃদ্ধা খোদেজা খাতুন। স্বামী মারা গেছেন অনেক আগেই। সন্তানরাও তেমন একটা দেখেন না। তার বাড়ি ময়মনসিংহের মুক্তাগাছার গাবতলী এলাকায়। তিনি বাবার বাড়ি নেত্রকোনায় যাওয়ার উদ্দেশে বাড়ি থেকে বেড়িয়েছেন। মাত্র দশ টাকা নিয়ে এসেছেন ময়মনসিংহ রেলওয়ের জংশনে। লোকালে ট্রেনে যাবেন নেত্রকোনায়।
বুধবার সকাল থেকে তিনি পস্ন্যাটফর্মে ট্রেনের জন্য বসা। তার জানা ছিল না, লোকাল ট্রেন বন্ধ। চোখেমুখে অন্ধকারের ছাপ। বৃদ্ধা খোদেজার প্রশ্ন, এখন কিভাবে যাবেন বাপের বাড়ি। তার সঙ্গে বসা ছিলেন আরেক যাত্রী সোলেমা খাতুন। তিনি যাবেন নেত্রকোনার জারিয়া। তিনিও মাত্র ২০ টাকা নিয়ে বাসা থেকে বেড়িয়েছেন। তারও জানা ছিল না লোকাল ট্রেন বন্ধের কথা। এখন কিভাবে যাবেন, এ প্রশ্ন সোলেমা খাতুনেরও।
মাইলেজ বন্ধের প্রতিবাদে রেলওয়ের রানিং স্টাফদের কর্মবিরতি চলায় ময়মনসিংহ অঞ্চলের সব লোকাল ট্রেন বন্ধ। এতে খোদেজা, সোলেমা খাতুনের মত লোকাল ট্রেনের শত শত যাত্রী চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। বুধবার দুপুরে রেলওয়ে জংশনে গিয়ে দেখা যায় এ সব চিত্র। লোকাল ট্রেন বন্ধ থাকায় যাত্রীদের দূর্ভোগের কথা স্বীকার করেছেন স্টেশন সুপারিনটেনডেন্ট নাজমুল হক খান। তবে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত কর্মবিরতি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।
রেলওয়ের ১৮৩২ সালের আইন অনুযায়ী, ট্রেন চালক, সহকারী চালক, পরিচালক ও টিকিট কালেক্টরদের বিশেষ সুবিধা দেওয়া হয়ে থাকে। ৮ ঘন্টা কর্মদিবস হলেও রানিং স্টাফদের গড়ে ১৫-১৮ ঘন্টা কাজ করতে হয়। এ জন্য তাদের দেওয়া হয় বিশেষ আর্থিক সুবিধা, যাকে রেলওয়ের ভাষায় বলা হয় মাইলেজ।
সেই মাইলেজ বন্ধের প্রতিবাদে রেলওয়ের রানিং স্টাফদের তৃতীয় দিনের মত চলছে কর্মবিরতি। ট্রেন পরিচালনায় রানিং স্টাফ-এলএম গার্ড ও টিটিই সংকটের কারণে ময়মনসিংহ থেকে নেত্রকোনার জারিয়া, মোহনগঞ্জ ও জালামপুরের দেওয়ানগঞ্জ রেলপথে লোকাল ট্রেন তিন ধরে বন্ধ রয়েছে। বুধবারও ছিল রানিং স্টাফদের কর্মবিরতি। রানিং স্টাফদের কর্মবিরতি চলায় ময়মনসিংহ অঞ্চলে ৮ জোড়া লোকাল ট্রেন এবং ঢাকা দেওয়ানগঞ্জ রেলপথে ভাওয়াল মেইল ট্রেন ১ ডিসেম্বর থেকে চলাচল বন্ধ রয়েছে। ময়মনসিংহ অঞ্চলের সব লোকাল ট্রেন বন্ধ থাকায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন বৃহৎ অঞ্চলের মানুষ। লোকাল ট্রেন বন্ধ থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন যাত্রীরা।
রেলওয়ে রানিং স্টাফ ও শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম বলেন, দীর্ঘ ১৬০ বছরের বেশি সময় ধরে রেলওয়ে রানিং স্টাফদের মাইলেজ সুবিধা চালু ছিল। কিন্তু ২০২২ সালে নতুন নিয়োগপ্রাপ্তদের থেকে মাইলেজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তবে এর আগে নিয়োগপ্রাপ্তরা এখনো মাইলেজ সুবিধা পেলেও ২০২১ সালে অর্থ মন্ত্রণালয়ের একটি পরিপত্রে পেনশন ও আনুপাতিক পার্ট অব পে মাইলেজ সুবিধা বাতিল করা হয়। বৈষম্যমূলক এই সিদ্ধান্ত বাতিল করে সবার জন্য মাইলেজ সুবিধা ও পেনশন এবং আনুপাতিক পার্ট অব পে মাইলেজ চালুর দাবি জানান। এই দাবি নিয়ে তারা কর্মবিরতি পালন করছেন। তাদের দাবি পূরণ না পর্যন্ত তারা আন্দোল চালিয়ে যাওয়ার কথা জানান।
লোকাল ট্রেন বন্ধ ধাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে লোকাল ট্রেনের যাত্রীরা। তারা বলেন, লোকাল ট্রেন বন্ধ করে তাদের আন্দোলন করতে হয় কেন। তারা অন্য পথেও আন্দোলন করতে পারত। তাদের দুর্ভোগে ফেলে আন্দোলন কিসের। তাদের দাবি যদি যৌক্তিক হয় তাহলে দ্রম্নত পূরণ করা দরকার। এভাবে যাত্রীদের দুর্ভোগে ফেলে রাখা ঠিক হয়নি। তারা দ্রম্নত ট্রেন চালুর দাবি জানান।