কলেজ এমপিও হবে। বেতন পাবেন। সংসার হবে। স্বাচ্ছন্দ্যে জীবন-যাপন করবেন- এ আশায় রফিকুন্নবী চৌধুীর ২০ বছর বিনা বেতনে চাকরি করেছেন পাংশা আইডিয়াল গার্লস কলেজে। পরিবারের উপর নির্ভরশীল থেকেছেন। আয়-রোজগারের বিকল্প পথ না থাকায় বিয়েটাও করতে পারেননি। তার বয়স এখন ৪৭ বছর। কলেজ এমপিওভুক্ত হয়েছে। কিন্তু তিনি এমপিওভুক্ত হতে পারেননি। বাবা-মা মারা যাওয়ার পর এখন সম্পূর্ণ একা হয়ে গেছেন। বাড়ির গাছপালা বিক্রি করে এবং জমি লিজ দিয়ে কোনোমতে চলছেন।
রফিকুন্নবী চৌধুরী পাংশা উপজেলার সরিষা ইউনিয়নের বহলাডাঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা। পাংশা আইডিয়াল গার্লস কলেজের ইংরেজি বিষয়ের শিক্ষক ছিলেন তিনি। একই কলেজের আরও দুইজন শিক্ষক ২০ বছর বিনা বেতনে চাকরি করলেও এমপিও হয়নি। সবারই অভিযোগ 'অধ্যক্ষের কারণে' তাদের পুরো জীবনটা শেষ হয়ে গেল।
রফিকুন্নবী চৌধুরী জানান, কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি অনার্স মাস্টার্স সম্পন্ন করেছেন। ২০০৪ সালের ১ জানুয়ারি পাংশা আইডিয়াল গার্লস কলেজে ইংরেজি প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন। পাংশা কলেজপাড়ার বাসিন্দা তপন বিশ্বাস জানান, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৯৩ সালে অনার্স মাস্টার্স পাস করেছেন। ২০০৪ সালে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়ে পাংশা আইডিয়াল গার্লস কলেজে চাকরি করছিলেন। নারায়ণপুর গ্রামের সিদ্ধিরাম ঘোষ বলেন, '১৯৯৯ সালে ৩৪ বছর বয়সে তিনি পাংশা আইডিয়াল গার্লস কলেজে যোগ দেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স মাস্টার্স সম্পন্ন করেছেন।'
পাংশা আইডিয়াল গার্লস কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুল মান্নান বলেন, সিদ্ধিরাম ঘোষের সার্টিফিকেট যাচাইতে দেখা গেছে সেটি ভুয়া। তপন বিশ্বাসকে অর্থনীতি ও বাণিজ্যিক ভুগোল বিষয়ে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। ওই পদে ছিলেন জিয়াউর রহমান নামে একজন। কলেজের একটা মামলা হয়। ওই মামলা চালাতেন তপন বিশ্বাসের ভাই স্বপন বিশ্বাস। পরে অর্থনীতি ও বাণিজ্যিক ভুগোল বিষয় বিলুপ্ত হয়। তখন তাড়াতাড়ি নতুন শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে আবেদন করতে বলেন। তারা কলেজ থেকে তপন বিশ্বাসের নাম দিয়েই পাঠিয়েছিলেন কিন্তু হয়নি। সরকারি নীতিমালায় না থাকায় তার এমপিও হয়নি। ইংরেজি শিক্ষক পদ শূন্য। রফিকুন্নবী কখনই নিয়োগ পাননি। তাকে ইংরেজি বিষয়ে পড়ানোর অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। মামলা চলাকালীন আরেকজনকে নিয়োগ দেওয়া যায় কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, 'নিয়োগ দেওয়া যায়। এটা নীতিমালায় আছে।' কলেজের ম্যানেজিং কমিটির বর্তমান সভাপতি ও পাংশা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এসএম আবু দারদা বলেন, 'তিনি পাংশায় সম্প্রতি যোগ দিয়েছেন। বিষয়টা সম্পর্কে অবগত নন। খোঁজ নিয়ে করণীয় নির্ধারণ করা হবে।'