বর্ষা মৌসুম শেষ হওয়ার পর দ্রম্নতগতিতে চলছে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় অংশের (২১ কিলোমিটার) দুইলেন থেকে ছয় লেনে সম্প্রসারণের কাজ। ইতোমধ্যে জেলার সরাইল উপজেলার কুট্টাপাড়া থেকে বিজয়নগর উপজেলার সাতবর্গ পর্যন্ত ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অংশের মোট ২৩টি ব্রিজ-কালভার্টের পাইলিং কাজ শেষ হয়েছে। ৩টি কালভার্টের নির্মাণ কাজওশেষ হয়েছে।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, 'এশিয়া হাইওয়ের আদলে আন্তর্জাতিক মানের এ মহাসড়কটি নির্মাণ করা হচ্ছে। এটির নির্মাণ কাজ শেষ হলে জনভোগান্তি কমে আসার পাশাপাশি দুর্ঘটনার সংখ্যাও অনেকাংশে কমবে, ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রেও আসবে গতি।
ঢাকা থেকে সিলেট পর্যন্ত বর্তমান মহাসড়কটি দুই লেন থেকে ছয় লেনে উন্নীতকরণের কাজ চলছে। গত ২০২৩ সালের মে মাসে শুরু হয় সড়কটির ব্রাহ্মণবাড়িয়া অংশের নির্মাণ কাজ। মাঝখানে বর্ষা মৌসুমের কারণে ৪ মাস কাজ বন্ধ ছিল। তবে শুষ্ক মৌসুম শুরু হওয়ার পর থেকে পুরোদমে চলছে মহাসড়কটির নির্মাণ কাজ।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রাজধানী ঢাকা থেকে নারায়নগঞ্জের কাঁচপুর হয়ে নরসিংদী-কিশোরগঞ্জের ভৈরব, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার হয়ে সিলেটের তামাবিলে গিয়ে শেষ হবে সড়কটি। বিশাল কর্মযজ্ঞ চলছে মহাসড়কে ঘিরে। বর্তমান দুই লেনের সংকুচিত এ সড়কটিতে একাধিক বাঁক রয়েছে। এসব বাঁকে ছোট বড় যানবাহন পাশাপাশি চলাচল করতে গিয়ে প্রায়ই ঘটে দুর্ঘটনা। সড়কটির নির্মাণ কাজ শেষ হলে আলাদা লেনে চলাচল করবে ছোট-বড় যানবাহন। এতে দুর্ঘটনার সংখ্যা অনেকাংশে কমে আসবে বলে মনে করছেন পরিবহণ সংশ্লিষ্টরা।
এ সড়কে চলাচলকারী বাস চালক মো. জামাল বলেন, 'এই রাস্তা বড় হলে আমাদের অনেক সুবিধা হবে। বড় গাড়িগুলো তাদের নিজস্ব লেনে চলবে। ছোট গাড়িগুলো তাদের লেনে চলাচল করবে। এতে করে দুর্ঘটনা অনেক কম হবে। তাই আমরা দাবি করব যেন দ্রম্নত রাস্তার কাজ শেষ করা হয়।'
জলিল মিয়া নামে অপর বাস চালক বলেন, 'এই দুই লেনের রাস্তায় গাড়ি চালাতে গিয়ে আমাদের অনেক সমস্যা হচ্ছে। রাস্তার মধ্যে ছোট গাড়ি যানজট সৃষ্টি করছে। যদি রাস্তাটি বড় হয়, তাহলে আমাদের গাড়ি চালাতে সমস্যা হবে না। যাত্রীরাও আর ভোগান্তিতে পড়বে না।'
মহাসড়কটি সম্পর্কে ব্রাহ্মণবাড়িয়া খাঁটিহাতা হাইওয়ে থানার ওসি মারগুব তৌহিদ বলেন, 'আশুগঞ্জ থেকে সাতবর্গ পর্যন্ত ৩৪ কিলোমিটার রাস্তা রয়েছে। এই রাস্তায় আমরা প্রায়শই দুর্ঘটনা দেখি। এর কারণ হিসেবে আমরা দেখেছি রাস্তার মধ্যে গাড়ি ওভারটেকিং এবং বড়-বড় বাঁক থাকার কারণে হচ্ছে। যদি রাস্তাটি ৬ লেনে উন্নীত করা হয়, তাহলে গাড়িগুলো নির্দিষ্ট লেনে চলাচল করতে পারবে এবং আমরা মনে করি এতে দুর্ঘটনার সংখ্যা অনেক কমে যাবে।'
ঢাকা-সিলেট ছয়লেন নির্মাণ প্রকল্পের প্রকল্প ব্যবস্থাপক-(৩) এবং সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ আমিমুল এহসান বলেন, 'এই সড়কে আমরা ডিজাইন স্পিড ধরেছি যেন, ১০০ কিলোমিটার গতিতে গাড়ি চলাচল করতে পারে। সেই সঙ্গে আমরা চেষ্টা করছি পর্যাপ্ত আন্ডারপাস ও ওভারপাস দেওয়ার জন্য, যেন মানুষ নিরাপদে রাস্তা পারাপার হতে পারে। বড় গাড়িগুলো তাদের লেনে চলবে, ছোট গাড়ি তাদের লেনে চলবে। এতে করে দুর্ঘটনাও অনেক কম হবে। সেই সঙ্গে সড়কের বাঁকগুলোকে সোজা করার ব্যবস্থাও আমরা রাখব। পাশাপাশি এই মহাসড়টি নির্মাণ হলে ৯০ ডিগ্রি বাঁক আর থাকবে না। এতে মূল সড়কটিতে ৮০ কিলোমিটার গতিতে চলাচল করতে পারবে সব ধরনের যানবাহন। এতে ব্যবসা বাণিজ্যেরও গতি আসবে।'
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হেগো-মীর আক্তার জয়েন্টভেঞ্চার লিমিটেডের প্রজেক্ট ম্যানেজার প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম বলেন, 'এখন আমাদের পুরোদমে কাজ চলছে। এখানে আমাদের ১২টা কালভার্ট আছে এবং ১১টা ব্রিজ রয়েছে। আমরা এখন ৯টা ব্রিজের কাজ ধরেছি। আর ১২টি কালভার্টের মধ্যে ৭টির কাজ চলমান রয়েছে। ইতোমধ্যে ৩টি কালভার্টের কাজ শেষ হয়েছে। এই জাতীয় মহাসড়কটি হয়ে গেলে এলাকার মানুষের পাশাপাশি যাত্রীরাও উপকার পাবে। পাশাপাশি ব্যবসা-বাণিজ্য এবং অর্থনীতিতেও গতি আসবে।'