চাকরি পেতে চান সরকারে সহায়তা

৫ প্রতিবন্ধী নিয়ে এক পরিবারের বেঁচে থাকার সংগ্রাম

প্রকাশ | ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০

মাসুম পাঠান, কটিয়াদী (কিশোরগঞ্জ)
এক পরিবারে ছয় ভাই-বোনের মধ্যে পাঁচজনই প্রতিবন্ধী। শারীরিক প্রতিবন্ধকতার দেয়াল ডিঙ্গিয়ে আত্মনির্ভরশীল হতে সবাই করছেন লেখাপড়া। তারা অত্যন্ত মেধাবী, পরিশ্রমী, ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন। দরিদ্র হলেও তারা কারো কাছে কোন করুনা বা দয়া প্রত্যাশা করে না। তাদের যোগ্যতা অনুযায়ী রাষ্টীয় প্রটোকল ও আইন মোতাবেক চাকরিসহ অন্য সুযোগ সুবিধা প্রত্যাশা করেন। পাঁচ প্রতিবন্ধীর মধ্যে একমাত্র ভাই সুজন মিয়া (৩০) কিশোরগঞ্জ গুরুদয়াল সরকারি কলেজ থেকে হিসাব বিজ্ঞান বিষয়ে অনার্স ও মাস্টার্স করেছেন। বোনদের মধ্যে মার্জিয়া আক্তার (২৮) বাজিতপুর সরকারি কলেজ থেকে ব্যবস্থাপনা বিষয়ে অনার্স করেছেন, জহুরা খাতুন (১৯) কটিয়াদী ডা. আব্দুল মান্নান মহিলা কলেজ থেকে ২০২৪ সালে এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে, মুক্তা আক্তার (১৬) উত্তর পিরিজপুর বিএম কলেজে একাদশ শ্রেণিতে এবং পান্না আক্তার (১৪) ডুয়াইগাঁও সুলতানপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত। ব্যক্তিত্ববান আচরণের জন্য এলাকার লোকজনের কাছে পরিচিত প্রতিবন্ধী পাঁচ ভাইবোন। তারা কারোর কাছে আর্থিক সহযোগিতা চান না, সরকারি কিংবা বেসরকারি পর্যায়ে চাকরি করে আত্মনির্ভরশীল হয়ে সংসারের হাল ধরে সমাজে মাথা উঁচু করে বাঁচতে চান পাঁচ-ভাইবোন। কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর উপজেলার পিরিজপুর ইউনিয়নের বিলপাড়-গজারিয়া গ্রামের মৃত মহরম আলী ও ফুলবানু দম্পতির  এক ছেলে পাঁচ মেয়ে। তাদের পাঁচজনই শারীরিক প্রতিবন্ধী। মৃত মহরম আলী ও ফুলবানুর সন্তানদের জন্মের সময় কোন সমস্যা না থাকলেও, তাদের ২-৩ বছর বয়সে শুরু হয় কোমড়ের নিচে অবস হওয়া, হাত-পা ও আঙ্গুল বাঁকা হয়ে যাওয়া। তার কিছু দিনের মধ্যেই স্বাভাবিক চলাচলের ক্ষমতা হারান সবাই। পাঁচজনেরই হাত-পা চিকন ও বাঁকা হয়ে গেছে। ফলে তারা কেউই স্বাভাবিক চলাফেরা করতে পারে না। বড় ভাই সুজন একটি ইলেকট্রনিক হুইলচেয়ার ও চার বোন সাধারণ হুইলচেয়ার ব্যবহার করেন। চার বোনের জন্য তিনটি হুইলচেয়ার থাকলেও দুটি ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। খাওয়া, গোসল, স্কুলে আসা-যাওয়াসহ সব কাজে সহযোগিতা করেন চাচা ইসরাইল, মা ফুলবানু আর বড় ছেলে সুজনের স্ত্রী। প্রতিবন্ধী সুজন জানান, 'আমরা কারো বোঝা হয়ে থাকতে চাই না, কাজ করে খেতে চাই। পাশাপাশি পরিবারের বড় ছেলে হিসেবে সংসারের হালও ধরতে চাই। এ জন্য সরকারের সহযোগিতা প্রয়োজন। সরকার কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দিলে আমার পক্ষে সব বাধা পেরিয়ে সংসারের প্রতিবন্ধকতা দূর করা সম্ভব হবে।' প্রতিবন্ধীদের চাচা মো. ইসরাইল জানান, 'আমি তাদের চাচা হলেও তারা আমাকে আব্বা বলে ডাকে। আমার স্ত্রী ও কোন সন্তান নেই। তারাই আমার সন্তান। তাদের বাবা আমার ছোট ভাই মহরম আলী ৮ বছর পূর্বে মারা গেছেন। আমার অবর্তমানে তাদেরকে দেখবে সুজন ও মার্জিয়া অনার্স ও মাস্টার্স শেষ করেছে, তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হলে সংসারের হাল ধরতে পারবে। ছোট তিন বোন কলেজ ও স্কুলে পড়ালেখা করছে। তাদের জন্য মুখে হাসি ফোটাতে সরকার ও বিত্তবানদের এগিয়ে আসার জন্য আকুল আবেদন করছি।' বাজিতপুর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা বাবুল মিয়া জানান, তাদের যোগ্যতা বলে একদিন সরকারি বেসরকারি চাকরি করে মায়ের মুখে হাসি ফোটাবে। সমাজের বোঝা না হয়ে সমাজের অপরিহার্য্য মানুষ হয়ে উঠবেন এমনটাই তাদের আশা। বাজিতপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারাশিদ বিন এনাম জানান, এক পরিবারের পাঁচজন প্রতিবন্ধী সবাই ভালোভাবে পড়াশোনা করছে। শত বাধা অতিক্রম করে তাদের সম্মানের সঙ্গে এগিয়ে চলার উদাহরণ সাড়াদেশে অন্যদের জন্য অনুপ্রেরণা যোগাবে। সদস্যদের কর্মসংস্থান গড়ার লক্ষ্যে বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণের পাশাপাশি সহজ শর্তে ঋণ দেওয়া হবে। উপজেলা প্রশাসন সবসময় তাদের পাশে থাকবে।