শেরপুরের নকলায় আগাম ও বিএডিসির বীজ আলু চাষে ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা। অন্যদিকে, চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার চাষিরা ব্যস্ত রয়েছেন ইরি-বোরো ধানের বীজতলায় তৈরিতে। প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্যে বিস্তারিত ডেস্ক রিপোর্ট-
নকলা (শেরপুর) প্রতিনিধি জানান, আগাম জাতের ধান ঘরে তুলে এখন আগাম ও বীজ আলু চাষে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন শেরপুরের নকলা উপজেলার চাষিরা। আগাম জাতের আলু চাষ করে লাভবান হওয়ায় বরাবরের মতো এবারও আলু চাষ করছেন কৃষক। কিছুদিন আগে আগাম জাতের ধান ঘরে তুলেছেন। সেই জমিতে এখন আগাম আলুর বীজ বুনছেন। উপজেলার চরমধূয়া, চন্দ্রকোনা, পাঠাকাটা, নারায়ণখোলা, চরবশন্তি, বানেশ্বর্দী এলাকায় দেখা যায় কৃষকরা আলু চাষে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন।
বিএডিসি বীজ আলু হিমাগার সূত্রে জানা যায়, প্রতিবছর নভেম্বর মাসের ১৫ তারিখ থেকে ২৮ তারিখ পর্যন্ত বীজ আলু রোপণের উত্তম সময়। গত বছর উপজেলায় ২৪৫ একর জমিতে বীজ আলু রোপণ করা হয়েছিল। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল এক হাজার ৪৪৮ মেট্রিক টন ও অর্জিত হয়েছিল এক হাজার ৪৩৭ মেট্রিক টন। এ বছর ২৬০ একর জমিতে বীজ আলু রোপণ করা হয়েছে, যার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে এক হাজার ৫৬০ মেট্রিক টন। গত বছরের তুলনায় এ বছর আলু চাষের জমির পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে।
চন্দ্রকোনা ইউনিয়নের বীজ আলুচাষি কামরুজ্জামান গেন্দু ও গোলাম মোস্তফা জানান, গেল বছরের চেয়ে এবার আলু চাষ বৃদ্ধি পেয়েছে। এখন পর্যন্ত আবহাওয়া ভালো। সবকিছু ঠিক থাকলে গতবারের চেয়ে ভালো দাম পাবেন।
বানেশ্বর্দী ইউনিয়নের বীজ আলুচাষি হাকলিজুর রহমান ও ছাইদুল হক বলেন, 'আগাম জাতের আলু চাষ করে ভালো দাম পাওয়া যায়। এ ছাড়া ৬০-৬৫ দিনের মধ্যে এই আলু মাঠ থেকে তোলা যায় বলে আমরা আলু চাষের আগ্রহী হয়েছি।'
বিএডিসির উপসহকারী পরিচালক (টিসি) মিজানুর রহমান বলেন, 'গুণগত মানসম্পন্ন বীজ আলু উৎপাদনের লক্ষ্যে বিএডিসি আলুর বিভিন্ন বস্নক পরিদর্শনে গিয়ে চাষিদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিচ্ছি এবং মাঠ দিবসের মাধ্যমে প্রদর্শনী পস্নট স্থাপন ও মাল্টি লোকেশন পারফরম্যান্স যাচাইসহ উৎপাদিত এই আলু বিদেশে রপ্তানি করা সম্ভব। বীজ আলু হিসেবে ডায়মন্ড, এস্টারিক্স, সানসাইন, সান্তানা ও লেডিরোসেটা বেশি চাষ হচ্ছে। এর মধ্যে সানসাইন ও সান্তানা আলুর ফলন বেশি পাওয়া যায়।'
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ শাহরিয়ার মোরসালিন মেহেদী বলেন, 'প্রতিবারের মতো এবারও আলুর বাম্পার ফলনের আশা করছে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ ও বিএডিসি আলু হিমাগারের কর্মকর্তারা। সে লক্ষ্যে নিয়মিত মাঠ পরিদর্শন, কৃষি প্রণোদনা ও প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।'
বিএডিসির উপ-পরিচালক (টিসি) শহীদুল ইসলাম জানান, রবিশস্য হিসেবে আলু আবাদ করে কৃষকরা যেন অধিক লাভবান হতে পারেনম এর জন্য সরকার ২২ কোটি ব্যয়ে নকলা পাঠাকাটা গ্রামে বিএডিসির দুই হাজার মেট্রিক টন ধারণক্ষমতার বীজ আলু হিমাগার তৈরি করেছে। এর ফলে এলাকার কৃষি অর্থনীতিতে ইতিবাচক পরিবর্তন সাধিত হয়েছে।
দামুড়হুদা (চুয়াডাঙ্গা) প্রতিনিধি জানান, দামুড়হুদায় ইরি-বোরো ধানের মৌসুমকে সামনে রেখে ধুমধাম করে বিভিন্ন এলাকায় আমন ধান কাটার পাশাপাশি কৃষকরা বোরো ধানের চারার জন্য বীজতলা প্রস্তুত করছেন। ভালো বীজতলা করতে পারলে মিলবে ভালো চারা। তাই কৃষকরা খেয়ে না খেয়ে বীজতলা নিয়ে কাজ করছেন। অগ্রহায়ণ মাস বোরো ধানের বীজতলা তৈরির উপযুক্ত সময় বলে মনে করেন কৃষকরা। তাই বীজতলায় রোদ পড়ে এমন উর্বর ও সেচ সুবিধাযুক্ত জমি নির্বাচন করেন চাষিরা। চাষের আগে জৈবসার দিয়ে ভালোভাবে জমি তৈরি করে থাকেন। পানি দিয়ে জমিকে থক থকে কাদা করে এক মিটার চওড়া এবং জমির দৈর্ঘ্য অনুসারে লম্বা করে ভেজা বীজতলা তৈরি করা হয়। বীজ বপন করার আগে ৪৮-৭২ ঘণ্টা ধান ভালোভাবে জাগ দিয়ে রাখতে হয়, এ সময় ধানের অঙ্কুর গজাবে। অঙ্কুরিত বীজ বীজতলায় ছিটিয়ে বপন করতে হয়। বোরো ধানের বীজতলার অতিরিক্ত ঠান্ডায় পড়লে চারা যাতে নষ্ট না হয়, সে জন্য কৃষকরা রাতে চারার ওপর পলিথিন দিয়ে থাকেন। পরদিন সকালে রোদ দেখা দিলে পলিথিন সরিয়ে রাখেন। চারায় ইউরিয়া ও জিপসাম সার দিয়ে থাকে বীজতলা থেকে চারা তোলার এক সপ্তাহ আগে কৃষকরা কীটনাশক দিয়ে থাকেন।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলার আটটি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় ৯ হাজার ৫০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, কৃষকরা ইরি-বোরো ধান চাষের জন্য পূর্ব প্রস্ততি হিসেবে বীজতলা তৈরি ও বীজতলায় ধান রোপণ করছেন, কেউবা ধান চাষের জমি প্রস্তত করছেন।
উপজেলা ধান্যঘরা গ্রামের ধানচাষি জহিরুলল ইসলাম বলেন, 'সার, কীটনাশক ও তেলের দাম বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কায় আছি। তবুও আশায় বুক বেঁধে ধানের বীজ বপন করেছি।'
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শারমিন সুলতানা জানান, বিগত বছরগুলোতে এ উপজেলায় বোরো ধানের ব্যাপক আবাদ করা হয়। আশা করছি, এ বছরও বোরো ধানের ব্যাপক আবাদ হবে। সার-কীটনাশকসহ বাজারে কোনো প্রভাব পড়বে না।