চারণকবি বিজয় সরকারের মৃতু্যবার্ষিকী আজ
কবির জন্মস্থান নড়াইলে নেই বিজয়গীতি চর্চা
প্রকাশ | ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০
মো. আল আমিন, নড়াইল
'এ পৃথিবী যেমন আছে তেমনই ঠিক রবে, সুন্দর এই পৃথিবী ছেড়ে একদিন চলে যেতে হবে।' 'পোষা পাখি উড়ে যাবে সজনি গো আমি একদিন ভাবিনী মনে, ও তুমি জান না জানোরে প্রিয় তুমি মোর জীবনের সাধনা'- এ সব বিখ্যাত মরমী গানের স্রষ্টা কবিয়াল বিজয় সরকার। বিরল ব্যক্তিত্ব ও প্রতিভা সম্পন্ন এ আধ্যাত্নিক পুরুষের গান আজো দেশের আনাচে কানাচে মানুষের মুখে মুখে চলে আসছে।
অসাম্প্রদায়িক চেতনার সুরস্রষ্টা চারণকবি বিজয় সরকারের ৩৬তম মৃতু্যবার্ষিকী আজ ৪ ডিসেম্বর। দুই বাংলায় সমানভাবে জনপ্রিয় এ কবি শেষ জীবনে পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগনা জেলার কেউটিয়া গ্রামে বসবাস করতেন। কবির প্রথম স্ত্রী বীনাপানি দেবী ও দ্বিতীয় স্ত্রী প্রমাদা দেবী। কাজল অধিকারী, বাদল অধিকারী ও শ্রীমতি বুলবুল বিশ্বাস কবির সন্তান। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৯৮৫ সালের ৪ ডিসেম্বর জামাতা সুশীল কুমার বিশ্বাস ও কন্যা বুলবুল বিশ্বাসের হাওড়ার বাড়িতে মহান এ কবির দেহাবসান ঘটে। সেখানে কেউটিয়ায় তাকে সমাহিত করা হয়।
১৯০৩ সালের ২০ ফেব্রম্নয়ারি নড়াইলের বাঁশ গ্রাম ইউনিয়নের ডুমদি গ্রামে পিতা নবকৃষ্ণ অধিকারী ও মাতা হিমালয় অধিকারীর সংসারে জন্ম গ্রহণ করেন। দশ ভাইবোনের মধ্যে বিজয় ছিলেন সবার ছোট। দীর্ঘ সংগীত সাধনার জীবনে প্রায় দুই হাজার গান লিখেছেন। বিচ্ছেদগান, শোকগান, ইসলামীগান, আধ্যাত্যিক গান, দেশের গান, কীর্তন, ধর্মভক্তি, মরমী গান, বাউল, কৃঞ্চপ্রেম। গ্রামের নদী মাঠ আর প্রকৃতিতে ঘুরে বেড়ানো বিজয় সরকার ছোট বেলা থেকেই কবিতা আর গান লেখেন। নিভৃতচারী এই সংগীত সাধক আসরের প্রয়োজনে মঞ্চে বসেই গান রচনা করে তাৎক্ষনিকভাবে সুর করে তা পরিবেশন করেছেন।
মহান এ চারন কবি ২০১৩ সালে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি হিসেবে মরোনত্তর একুশে পদ পান। প্রখ্যাত এই শিল্পীর গানের কোন সংগ্রহ না থাকায় এ যুগের ছেলে-মেয়েদের কাছ থেকে দিনদিন হারিয়ে যেতে বসেছে তার সব বিখ্যাত মরমী গানসহ স্মৃতি। দেশের বিভিন্ন স্থানে এবং বিদেশে মরমী গানের এই কবিকে নিয়ে নানা ধরনের চর্চা হলে ও তার জন্মভূমি নড়াইলে নেই কোনো একাডেমী বা চর্চা কেন্দ্র।
খুলনা বেতার, বাংলাদেশ টেলিভিশনের ফোক গানের শিল্পী ও গানের শিক্ষক প্রতুল হাজরা বলেন, 'আমরা নিজেদের উদ্যোগে কবিয়াল বিজয় সরকারের গান চর্চ্চা করি। শিল্পকলা বা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি বিজয় সরকার একাডেমী থাকলে ভালো হতো।' মূর্ছনা সঙ্গীত নিকেতনের সভাপতি শামীমূল ইসলাম বলেন, 'এটা খুবই লজ্জাজনক যে, চারন কবি বিজয় সরকারের এলাকাতে তাকে মূল্যায়ন করা হয় না, তার গানের চর্চ্চা হয় না।' চারন কবি বিজয় সরকার ফাউন্ডেশনের যুগ্ম আহবায়ক আকরাম শাহীদ চুন্নু বলেন, 'একুশে পদক প্রাপ্ত এ শিল্পীর জন্য আমাদের উদ্যোগ নেই, কলকাতায় তারা অনেক এগিয়েছে।'
আগে চারনকবির মৃত্যবার্ষিকীতে ৩দিনের মেলাসহ নানা অনুষ্ঠান হলেও ৩৯তম মৃতু্যবার্ষিকী পালিত হবে স্বল্প পরিসরে। ডুমদীতে স্থানীয় বিজয়ভক্তরা কবির গান দিয়ে স্মরণ করবেন।