চাঁদপুরে দুই কোটি টাকার ব্রিজে উঠতে ব্যবহার করা হচ্ছে মই। ফলে ভোগান্তিতে পড়েন চলাচলকারীরা। যানবাহন চলাচল করতে পারে না। এদিকে, টাঙ্গাইলের সখীপুরে পাকা সড়ক পারাপারে ব্যবহার করা হচ্ছে কাঠের সাঁকো। সেই সাঁকোতে ঝুঁকি নিয়ে চলছে যানবাহন। স্থানীয়রা শিগগিরই এসব সমস্যা সমাধানে কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন। প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্যে বিস্তারিত ডেস্ক রিপোর্ট-
চাঁদপুর প্রতিনিধি জানান, নৌকা যুগের ভোগান্তি দূর করতে তৈরি হয় ব্রিজ। কিন্তু সেই ব্রিজে উঠতে যদি ব্যবহার করা হয় বাঁশ ও কাঠের তৈরি মই, তাহলে ভোগান্তি দূর না হয়ে উল্টো বেড়ে যায়। এমনই ঘটেছে চাঁদপুরের কচুয়া উপজেলায়। উপজেলার কাদিরখিল-প্রসন্নকাপ সুন্দরী খালে নির্মিত ব্রিজে উঠতে হয় বাঁশ ও কাঠের তৈরি মই দিয়ে। ফলে ২ কোটি ১৩ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত ব্রিজটি মানুষের কল্যাণে আসছে না। সংযোগ সড়ক নির্মাণ না করায় জনগণের এই ভোগান্তি।
জানা যায়, এই এলাকায় কোনো ব্রিজ না থাকায় দীর্ঘদিন ধরে নৌকা দিয়ে মানুষ পারাপার হতো। তাই ভোগান্তি দূর করতে তৈরি হয় ব্রিজ। কিন্তু ব্রিজে ওঠার সংযোগ সড়ক নির্মাণ না হওয়ায় দুই পারের লোকজন বাঁশ-কাঠের মই লাগিয়ে ব্রিজে উঠে পারাপার হচ্ছে দীর্ঘদিন ধরে। ব্রিজ নির্মাণের কাজ শেষ হওয়ার এক বছরেও নির্মাণ হয়নি সংযোগ সড়ক।
কচুয়া উপজেলার ৫নং পশ্চিম সহদেবপুর ইউনিয়নের কাদিরখিল-প্রসন্নকাপ গ্রামের খালের ওপর ২ কোটি ১৩ লাখ টাকা ব্যয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ব্রিজটির নির্মাণ কাজ শেষ করেছে। বছরখানেক আগে ঠিকাদার ব্রিজ নির্মাণ সম্পন্ন করলেও সংযোগ সড়ক না করায় ওই ইউনিয়নের কাদিরখিল, মালচোয়া, শাসনপাড়া, তারাবাড়িয়া, প্রসন্নকাপ, তুলপাই, কান্দিরপাড়, চারটভাঙ্গা, সেঙ্গুয়া গ্রামসহ প্রায় ১০টি গ্রামের শিক্ষার্থীসহ কয়েক হাজার মানুষকে বাঁশের মই দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ব্রিজ পার হতে হচ্ছে।
স্থানীয় এলাকাবাসী জানান, দীর্ঘদিন পর এ স্থানে একটি ব্রিজ নির্মাণ হয়েছে। কিন্তু কোনো কাজে আসছে না। কারণ ব্রিজের দুইপাশের মাটি নেই, যার কারণে ব্রিজ থেকে নামতে বা উঠতে বাঁশের মই ব্যবহার করা হচ্ছে। এতে করে এলাকাবাসীর কষ্ট হয়। কয়েকদিন আগে এক বৃদ্ধ নারী ব্রিজে উঠতে আকস্মিকভাবে পড়ে গিয়ে গুরুতর আহত হন। তাই দ্রম্নত ব্রিজের দুইপাশে সংযোগ সড়ক নির্মাণের দাবি জানান এলাকাবাসী।
শিক্ষার্থীরা বলেন, প্রতিদিন এ ব্রিজ দিয়ে তারা যাতায়াত করে। কয়েকবার পড়ে গিয়ে মারাত্মক ব্যথা পেয়েছে কয়েকজন শিক্ষার্থী। তারাও অচিরেই ব্রিজের সংযোগ সড়ক নির্মাণের দাবি জানান।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আলমগীর হোসেন জানান, 'ব্রিজের নির্মাণ কাজ প্রায় বছরখানেক আগে শেষ হলেও সংযোগ সড়কে মাটি ভরাট করেননি ঠিকাদার। ঠিকাদারের গাফিলতির কারণে প্রতিনিয়ত লোকজনকে বাঁশের মই দিয়ে উঠে ব্রিজ পারাপার হতে হয়। সংযোগ সড়ক না থাকার কারণে ব্রিজটি আমাদের এলাকার লোকজনের কোনো কাজেই আসছে না।
ইউপি সদস্য শাহজাহান শিকদার বলেন, ব্রিজের সংযোগ সড়কটি নির্মাণ করতে ঠিকাদারকে তাগিদ দেওয়া হলেও এখন পর্যন্ত তা করা হয়নি। এতে করে মানুষ চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে।
কচুয়া উপজেলা প্রকৌশলী আব্দুল আলীম লিটন বলেন, ঠিকাদার আহসান হাবীব অরুন দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ থাকায় একটু বিলম্বিত হচ্ছে। তবে ব্রিজটি সচল করতে এবং দুই পাশের সংযোগ সড়কের নির্মাণ কাজ শুরুর জন্য ঠিকাদারকে বলা হয়েছে। সংযোগ সড়ক তৈরি হলে ব্রিজ দিয়ে মানুষের যাতায়াতে আর দুর্ভোগ পোহাতে হবে না।
সখীপুর (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি জানান, টাঙ্গাইলের সখীপুরে একটি পাকা সড়কের মধ্যে একটি কাঠের সাঁকো দিয়ে চলছে যানবাহনসহ সাধারণ মানুষ। মূল সড়কের অর্ধেক ওই সাঁকো দিয়ে ঝুঁকি নিয়েই ছোট ছোট যানবাহন পারাপার হচ্ছে। তবে আশংকা রয়েছে, যে কোনো সময় ঘটে যেতে পারে বড় কোনো দুর্ঘটনা। উপজেলার বহুরিয়া ইউনিয়নের আটিয়া বাজার-বাটাজোর সড়কের ভাঙার মোড় এলাকায় দেখা মিলেছে এ রকম আজব এক দুর্ভোগের চিত্র।
স্থানীয় বাসিন্দা ও জনপ্রতিনিধির সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, চলতি বছরের জুন মাসের দিকে ব্যস্ততম এ সড়কের ইউকালভার্টটি ভেঙে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে স্থানীয় বাসিন্দা ও ইউপি সদস্যের সহযোগিতায় কাঠ দিয়ে একটি অস্থায়ী সাঁকো তৈরি করা হয়। ওই সাঁকো দিয়ে মোটর সাইকেল, অটোভ্যান, ইজিবাইক চলাচল করতে পারলেও বন্ধ রয়েছে ভারী যান চলাচল। এমন পরিস্থিতির ছয় মাস পেরিয়ে গেলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কালভার্টটি পুনর্নির্মাণের কোনো উদ্যোগ নেয়নি।
ওই গ্রামের জাবেদ আলী বলেন, 'আমাদের গ্রামের প্রধান সড়ক হওয়ায় বাটাজোর, কালমেঘা, ফুলবাড়িয়া, মাওনা, জৈনাসহ আশপাশের আরও ৭-৮ গ্রামের মানুষ এ রাস্তায় চলাচল করে। কালভার্টটি ভেঙে যাওয়ায় আশেপাশের গ্রামের মানুষের চলাচলে খুবই অসুবিধা হচ্ছে। কালভার্টটি দ্রম্নত সংস্কারের দাবি জানাই।'
স্থানীয় ইউপি সদস্য মোশারফ হোসেন বলেন, 'এ রাস্তা দিয়ে প্রতিদিন প্রায় হাজারখানেক যানবাহন চলাচল করে। আশেপাশের গ্রামের কোনো রোগী যদি হাসপাতালে নেওয়ার প্রয়োজন হলে অনেক দূরের রাস্তা ঘুরে যেতে হয়। এই কালভার্টটি হলে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ লাঘব হবে। ইতোমধ্যে বিষয়টি উপজেলা প্রকৌশলীকে জানিয়েছি।'
উপজেলা এলজিইডি প্রকৌশলী আরিফুর রহমান বলেন, 'কালভার্টটির তথ্য অনুমোদনের জন্য ঢাকা পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু অনুমোদন হয়নি। আবারও তথ্য পাঠাব, অনুমোদন পেলে টেন্ডার হবে। টেন্ডার হয়ে গেলেই কাজটা শুরু হবে।'