বুধবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

হারিয়ে যাচ্ছে শীতকালীন অতিথি পাখি

ফসলি জমিতে কীটনাশক ব্যবহার নেই পাখিদের জন্য অভয়ারণ্য পাখি শিকারিদের আনাগোনা
মন্তোষ চক্রবর্তী
  ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০
হারিয়ে যাচ্ছে শীতকালীন অতিথি পাখি

শীতের শুরুতেই হবিগঞ্জের লাখাই, আজমিরীগঞ্জ, বানিয়াচং, ব্রহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর, সরাইল সুনামগঞ্জের দিরাই, শালস্না, নেত্রকোনার খালিয়াজুড়ি, কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম, ইটনা, মিঠামইন, বাজিতপুর নিকলী ও পার্শ্ববর্তী উপজেলার হাওড়গুলোতে ঝাঁক বেঁধে আসত দেশীয় ও শীতকালীন অতিথি পাখি পাখিদের কিচিরমিচির শব্দের মুখরিত হতো হাওড় পাড়, মানুষের ঘুম ভাঙত সেই শব্দে। সেই শব্দ বিগত কয়েক বছর ধরে আর শোনা যায় না। কিশোরগঞ্জ, হবিগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনার প্রতিটি হাওড়কে অতিথি পাখির রাজ্য বলা হতো।

আবাদি জমিতে কীটনাশক ও সার ব্যবহার, হাওড়গুলোতে পাখিদের জন্য নেই পর্যাপ্ত অভয়ারণ্য ও পাখি শিকারিদের তৎপরতায় প্রতি বছর কমছে এসব হাওড়ে অতিথি পাখির আগমন।

স্থানীয়রা জানান, গ্রামের লোকজনের প্রয়োজনের তাগিদেই গ্রাম, পাড়াসহ হাওড়ের বিভিন্ন চাষাবাদের ব্যবহার উপযোগী স্থানগুলোতেও তৈরি হচ্ছে ঘরবাড়ি। মাটির ঘর থেকে তৈরি দালান হচ্ছে। ফলে পাখিরা বাসস্থান হারিয়ে ছুটছে অন্যত্র। ফলে পাখির কিচিরমিচির ডাকে এখন আর শোনা যায় না।

এলাকার প্রবীণ ব্যক্তিরা জানান, গ্রামের প্রবীণ ব্যক্তিরা জানান, আগেও মাঠ-ঘাট, চাষাবাদের ফসলি জমিনে ছিল দেশীয় ও শীতের মৌসুমে বিভিন্ন অতিথি পাখিদের বিচরণ ছিল চোখ, মন এবং প্রাণজুড়ানোর মতো। ঝাঁক বেঁধে খাদ্যের সন্ধানে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ব্যস্ত থাকে পাখিরা। চাষাবাদের ফসলি জমিগুলোতে পাখি বসার দৃশ্য আগে দেখা যেত বেশি, বর্তমানে এমন দৃশ্য আর চোখে পড়ে না বললেই চলে।

বিগত কয়েক বছর আগেও বিস্তীর্ণ এই হাওড় অঞ্চলে টুনটুনি, চিল, পানকৌড়ি, ডাহুক, বালি হাঁস, কোকিল, বক, শালিক, ঘুঘু, দোয়েল, বাবুই, টর, কাকসহ বিভিন্ন পাখির দেখা মিলত। এখন এসব পাখি তেমন চোখে পড়ে না। গ্রামবাংলার অতি পরিচিত বসন্তের কোকিলের শব্দও এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে।

হাওড় অধু্যষিত কিশোরগঞ্জের ইটনা উপজেলার বড়হাটি গ্রামের রুস্তম আলী জানান, হাওড়ে আগে পাখিদের প্রচুর প্রাকৃতিক খাদ্যসামগ্রী পাওয়ার থাকত; কিন্তু বর্তমানে হাওড়ে পাখিদের জন্য প্রাকৃতিক খাদ্য সংকট থাকার কারণেই এখন আর আগের মতো পাখির দেখা পাওয়া যায় না।

জানা যায়, অতিথি পাখিগুলো প্রতি বছর নভেম্বর মাস থেকেই হাওড়ের বিভিন্ন নির্জন মাঠে ও ঘাটে আসা শুরু করত এবং প্রতিটি হাওড়ের দল বেঁধে গাছের ডালে সঙ্গিনী নিয়ে ওড়াউড়ি করত।

পরিবেশবাদী ও হাওড় অঞ্চলবাসী ঢাকা কমিটির সাধারণ সম্পাদক রোটারিয়ান কামরুল হাসান বাবু বলেন, 'হাওড়ে অতিথি পাখির বিচরণের জন্য অভয়ারণ্যে তৈরি করা যায়নি, পাখির আবাসস্থল ও জীবন রক্ষায় সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতার অভাব রয়েছে। পাখির পক্ষে আইন প্রয়োগ করার মাধ্যমে মানুষকে আরও সচেতন পারলে হাওড়ে হবে পাখির নিরাপদ আবাস এবং পাখি শিকারিদের দমন করতে স্থানীয় প্রশাসনের কঠোর হস্তক্ষেপ করতে হবে।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে