বুধবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৫, ১৬ বৈশাখ ১৪৩২
চারঘাট পৌরসভা

কাগজে-কলমে প্রথম শ্রেণীর মর্যাদা পেলেও বাড়েনি নাগরিক সেবা

চারঘাট (রাজশাহী) প্রতিনিধি
  ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০
কাগজে-কলমে প্রথম শ্রেণীর মর্যাদা পেলেও বাড়েনি নাগরিক সেবা

কাগজে-কলমে রাজশাহীর চারঘাট প্রথম শ্রেণীর পৌরসভার মর্যাদা পেলেও নেই পর্যাপ্ত নাগরিক সুযোগ-সুবিধা। রাস্তাঘাট, ড্রেনেজব্যবস্থা, বর্জ্যব্যবস্থাপনা, পানি নিষ্কাশনসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত চারঘাট পৌরবাসী। পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডে প্রায় কয়েক লাখ পৌরবাসীর নাগরিকের সুবিধা না বাড়লেও পরিশোধ করতে হচ্ছে পৌরট্যাক্স ও পানির বিলসহ অন্যান্য ট্যাক্স। পর্যাপ্ত আলোর কথা বলা হলেও বাস্তবে নেই আলো। বিভিন্ন ধরনের সমস্যায় জর্জড়িত চারঘাট পৌরসভা শুধুই কাগজে-কলমেই প্রথম শ্রেণীর পৌরসভা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ১৯৯৮ সালে প্রতিষ্ঠিত রাজশাহীর চারঘাট পৌরসভা। এরপর ২০১৮ সালে 'ক' শ্রেণীতে উন্নীত পৌরসভাটি। ওয়ার্ড ৯টি, ১১টি মহলস্নায় প্রায় ৩৭টি পাড়ার ৪০ হাজার জনবসতির পৌরসভাটির আয়তন ১৮.৭৩ বর্গকিমি.। এসব জনবসতির চলাচলের জন্য প্রায় ১২৫ কিমি. রাস্তার মধ্যে ৮১ কিমি. রাস্তা পাকাকরণ করা হয়েছে। ১৮ কিমি. রাস্তা রয়েছে সেমি পাকা। এখনো পাকাকরণ করায় হয়নি ২৬ কিমি. কাঁচা রাস্তা। এ দিকে দীর্ঘদিন ধরে পাকা রাস্তার সংস্কার না করায় অধিকাংশ পাকা রাস্তা এখন চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। আবার অনেক রাস্তায় পিচ উঠে গিয়ে সৃষ্টি হয়েছে বড় বড় গর্তের। আর এ জন্য রাস্তা তৈরিতে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারকে দায়ী করছেন পৌরবাসী। পৌরবাসীকে রাতের আধারেও পর্যাপ্ত আলোয় আলোকিত করতে ২৫০টি স্ট্রিট লাইট লাগালেও তা এখন অকার্যকর। ফলে অন্ধকারের মধ্যেই চলতে হয় পৌরবাসীকে। সরেজমিন পৌরসভার কয়েকটি ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায়, প্রায় প্রত্যেকটি ওয়ার্ডের প্রায় অধিকাংশ সৌর লাইটগুলো বন্ধ রয়েছে। দু-একটি লাইট জ্বললেও তা অনেকটা নিভোনিভো অবস্থায় চলছে। অভিযোগ উঠেছে দীর্ঘদিন ধরে লাইটগুলো বন্ধ থাকলেও এগুলো মেরামত করার কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করেনি পৌর কর্তৃপক্ষ।

৯টি ওয়ার্ডের প্রায় ৯ হাজার পরিবারে মাত্র সাতশ' পরিবারকে পানি সরবরাহের আওতায় নিলেও এখনো বেশিরভাগ পরিবারে নেই পানি। পৌরবাসীর নিরবচ্ছিন্ন পানি সরবরাহের নিমিত্তে ২০২০ সালে ইউজিআইআইপি-৩ প্রকল্পের আওতায় প্রায় সাড়ে ৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ৬ লাখ লিটার ওভারহেড ট্যাংক তৈরি করা হয়। তবে ২০২৪ সাল পেরিয়ে গেলেও এখনো ব্যবহার করা হয়নি ট্যাংকটি। ফলে অচল অবস্থায় পড়ে আছে বিপুল পরিমাণ অর্থের বিনিময়ে তৈরি ট্যাংকটি।

৫নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা আজাদ বলেন, প্রথম শ্রেণীর পৌরসভা শুধু কাগজে-কলমেই। এ পৌরসভায় ড্রেনেজ ব্যবস্থা করুণ। পর্যাপ্ত ডাস্টবিন নাই, সু্যয়ারেজ লাইন নাই, পর্যাপ্ত লাইটিংব্যবস্থা নাই এবং সামান্য বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়।

২নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা হাফিজ বলেন, চারঘাট পৌরসভাটি পদ্মা নদীর কোলঘেঁষা পৌরসভা। ফলে পানি নিস্কাশনের জন্য প্রায় ১৮ কিমি. পাকা ড্রেন তৈরি হলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। অপরিকল্পিতভাবে নির্মিত ড্রেনেজব্যবস্থা নির্মাণের ফলে আজ পানি নিষ্কাশন তো দূরের কথা অল্প বৃষ্টিতেও রাস্তায় জমে থাকে পানি। নির্মিত ডেনেজ ব্যবস্থা কোনো কাজেই আসছে না পৌরবাসীর।

বিশিষ্ট হোমিও চিকিৎসক ও সমাজসেবক ডা. আব্দুল হাকিম অভিযোগ করে বলেন প্রথম শ্রেণীর এই পৌরসভার উন্নয়নে স্থায়ী ও সময়োপযোগী কোনো পরিকল্পনা তৈরি হয়নি। নিয়মিত পৌরকর পরিশোধ করেও সেবা পাচ্ছে না পৌরবাসী। অপরিকল্পিত নগরায়নে জনদুর্ভোগ দিন দিন বাড়ছে। বাজেটে নাগরিকদের সেবা প্রদানে কী কী কাজ হবে তার তালিকা এবং এর বাজেট জনসম্মুখে প্রকাশ করা দরকার বলে তিনি দাবি করেন।

এ বিষয়ে পৌরসভার ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী অফিসার ও প্রকৌশলী রেজাউল হকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তথ্য দিতে অপারগতা প্রকাশ করে বলেন, তথ্য নিতে হলে প্রশাসকের সঙ্গে যোগাযোগ করেন।

পৌর প্রশাসক উপজেলা নির্বাহী অফিসার সানজিদা সুলতানা বলেন, পৌরবাসীর সমস্যা সমাধানে আমরা বদ্ধপরিকর। দ্রম্নত সময়ের মধ্যে সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে