বুধবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৫, ১৬ বৈশাখ ১৪৩২

রাঙ্গামাটির পাহাড়ে হাতির সংখ্যা বেড়ে ১৩

লংগদু (রাঙামাটি) প্রতিনিধি
  ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০
রাঙ্গামাটির পাহাড়ে হাতির সংখ্যা বেড়ে ১৩

দেশের সীমান্তবর্তী পার্বত্য জেলা রাঙামাটির পাহাড়ি এলাকায় বন্যহাতি ও মানুষের সংঘাতের খবর বেশ পুরনো। প্রায়ই কৃষকের ফাঁদে পড়ে অসুস্থ হচ্ছে হাতি। আবার হাতির আক্রমণে প্রাণ হারাচ্ছেন মানুষ। সংঘাত থামাতে নেই তেমন কোনো উদ্যোগ। এ কারণে পাহাড়ে হাতি-মানুষ দ্বন্দ্বে আতঙ্ক বিরাজ করে সব সময়। পার্বত্য চট্টগ্রামে 'পাবলাখালি' বন্যপ্রাণীর অভয়ারণ্য হিসেবে সংরক্ষিত। রাঙামাটির বাঘাইছড়ির কাচালং নদী তীরবর্তী বনের আয়তন প্রায় ৪২ হাজার ৮৭ হেক্টর। চিরসবুজ এই বনের আশপাশে লংগদু উপজেলার গুলশাখালী, বগাচতর ও ভাসান্যাদম ইউনিয়নে গত দুই দশকের বেশি সময় ধরে এসব এলাকায় বন্যহাতির বিচরণ।

স্থানীয়রা জানান, কখনো কখনো খাবারের খোঁজে হাতির পাল কাপ্তাই হ্রদ পাড়ি দিয়ে বরকলের বরুণাছড়ি পর্যন্ত বিচরণ করে। জনবসতি থাকায় এসব এলাকায় মানুষের সঙ্গে প্রাণীটির দ্বন্দ্ব তীব্র হয়ে উঠেছে।

বনবিভাগ সূত্রে জানা গেছে, পার্বত্য চট্টগ্রাম উত্তর বনবিভাগের সুবলং সেক্টরের আওতায় কাঁচালং রেঞ্জের ভাসান্যাদম-চাইল্যাতলী এলাকায় সম্প্রতি আরও একটি নতুন শাবকের জন্ম দিয়েছে বুনো মা হাতি। এ নিয়ে রাঙামাটির লংগদুতে চিরসবুজ পাহাড়ি বনে হাতির সংখ্যা বেড়ে ১২ থেকে হলো ১৩। তবে এই সংখ্যা দুটি দলে বিভক্ত। লংগদুতে হাতি ও মানুষের দ্বন্দ্ব নিরসনে কাজ করছে হাতি সুরক্ষায় এলিফেন্ট রেসপন্স টিম-ইআরটি। বর্তমানে এই টিমের সদস্য সংখ্যা ১১ জন। এ ছাড়া গত এক বছরে লংগদুতে হাতির আক্রমণে চারজনের মৃতু্যর ঘটনা ঘটেছে এবং আহত হয়েছে ৭-৮ জন।

হতাহত ব্যক্তিদের বা পরিবারকে বনবিভাগ ক্ষতিপূরণ দিয়ে থাকে। এ ছাড়া ফসলের ক্ষতি হলেও বনবিভাগ ক্ষতিপূরণ দিচ্ছে বলে জানান সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

পাবলাখালী রেঞ্জের রেঞ্জ কর্মকর্তা সজীব কুমার মজুমদার বলেন, হাতিতে ফসলের ক্ষতি, কেউ আহত বা নিহত হলে থানায় সাধারণ ডায়েরি করতে হয়। যাচাই-বাছাই শেষে বনবিভাগের পক্ষ থেকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়। তিনি আরও বলেন, যদি করে হাতি ক্ষতি, সরকার দিবে ভর্তুকি' এটি মূলত আমার দেওয়া একটি স্স্নোগান। যখন কাঁচালং রেঞ্জের দায়িত্বে কাজ করেছি তখন স্থানীয়রা খুব ভালো করে এই স্স্নোগানটি মুখস্ত করেছেন। তারা হাতির কোনো ক্ষতি করে না।

উল্টাছড়ি রেঞ্জ কর্মকর্তা মাহাবুব উল আলম জানান, পাহাড়ি এলাকায় মানববসতি গড়ে ওঠায় খাবার ও চলাচলের মারাত্মক সংকটে রয়েছে হাতি। ফলে তারা উন্মুক্ত হচ্ছে। বিকল্প কোনো জায়গা না পেয়ে পাহাড়েই তাদের স্থায়ী আবাস গড়েছে এবং প্রজননের মাধ্যমে বংশবিস্তার করছে।

বাংলাদেশ থেকে এশিয়ান প্রজাতির বন্যহাতির সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে এবং বিলুপ্তের পথে চলে আসছে বলে হাতি গবেষকরা উদ্বেগজনক খবর জানালেও পাহাড়ে আশার আলো দেখছেন বনবিভাগের কর্মকর্তারা।

এদিকে পাহাড় ও জীববৈচিত্র্যপ্রেমীরা জানান, বিলুপ্তপ্রায় এই এশিয়ান প্রজাতির হাতির সংখ্যা বাড়ছে এটি খুবই আশার খবর। তবে আগামী দিনগুলোতে জানমালের রক্ষার পাশাপাশি হাতি রক্ষা করতে স্থানীয় জনগণ এবং প্রশাসনের সুদৃষ্টি রাখা প্রয়োজন বলে মনে করছেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে