বুধবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৫, ১৬ বৈশাখ ১৪৩২

রূপসার গোয়ালবাড়ি চর আশ্রয়ণ প্রকল্পে দুই যুগেও সংস্কার হয়নি

রূপসা (খুলনা) প্রতিনিধি
  ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০
রূপসার গোয়ালবাড়ি চর আশ্রয়ণ প্রকল্পে দুই যুগেও সংস্কার হয়নি
রূপসার গোয়ালবাড়ি চর আশ্রয়ণ প্রকল্পে দুই যুগেও সংস্কার হয়নি

'সরকার আসে, সরকার যায়। আমাদের খবর কেউ রাখে না। নানা সমস্যার মধ্যে আমরা আছি। কতজন আসে আর যায়। কই আমাদের ঘর তো মেরামত হয় না। থাকার ঘরের টিনের চালা ঝাঁঝরা হয়ে গেছে। একটু বৃষ্টি এলে ছেলেমেয়ে গলা নিয়ে মাথার ওপর পলিথিন কাগজ দিয়ে থাকি আমরা। ঘরে গিয়ে দেখেন, চালার টিন ধান চালনির মতো। পানি ঠেকাতে পলিথিন দিয়েছি চালের ওপর।'

কথাগুলো খুলনার রূপসা উপজেলার গোয়ালবাড়ি চর আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরের বাসিন্দা বৃদ্ধ আ. হাকিম হাওলাদার বলেন। দীর্ঘ ২০ বছর ধরে বসবাস করলেও দেখা মেলেনি ঘর মেরামতের কাজ। সোমবার এই প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে এভাবে দুর্দশার কথা তুলে ধরেন তিনি।

খুলনা জেলার রূপসা উপজেলার ঘাটভোগ ইউনিয়নে আঠারোবেকী নদীর পাড়ে খাসজমির ওপর নির্মিত আশ্রয়ণ প্রকল্পটি দীর্ঘ দুই যুগ ধরে সংস্কার না করায় জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। এতে মানবেতর জীবনযাপন করছেন বাসিন্দারা। তারা সরকারের কাছে ঘর সংস্কার ও প্রকল্পে মাটি ভরাটের দাবি জানিয়েছেন। ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে বাথরুম, চলাচলের রাস্তা। টিউবওয়েল না থাকায় পানির জন্য যেতে হয় অনেক দূরে।

উপজেলা ভূমি অফিস সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯৯ সালে তৎকালীন আওয়ামীগ সরকার সরকারি অর্থায়নে উপজেলার ঘাটভোগ ইউনিয়নের গোয়ালবাড়ি চর গ্রামে ৪১ একর খাস জমির ওপর সেনাবাহিনী আশ্রয়ণ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করে। প্রকল্পে মসজিদ, কবরস্থান, পুকুর, সমবায় সমিতির কার্যালয়সহ টিনের তৈরি ১৮টি ব্যারাক নির্মাণ করে। বর্তমানে সেখানে গেলে দেখা যায় পরিত্যক্ত ঘর।

প্রতিটি ব্যারাকে ১০টি করে ছোট কক্ষ রয়েছে। ওই সময় আবাসিক জমিসহ একটি ভূমিহীন পরিবারকে এসব ব্যারাকের একটি করে কক্ষ বরাদ্দ দেওয়া হয়। প্রকল্পে ১০টি পরিবারের জন্য যৌথভাবে চারটি বাথরুম ও দুটি গোসলখানা নির্মাণ করা হয়। প্রতিটি ব্যারাকের জন্য একটি করে নলকূপ ও একটি কমিউনিটি সেন্টারও নির্মাণ করা হয়।

আশ্রয়ণ প্রকল্পে গিয়ে দেখা যায়, সব কয়টি ব্যারাক জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। ঘরের ছাউনির টিনগুলো মরিচা পড়ে ছিদ্র হয়ে গেছে। সেগুলো বন্ধ করতে পলিথিন ও তাঁবু বিছিয়ে এর ওপর ইট ও খড়ি চাপা দেওয়া হয়েছে। দরজা-জানালার কপাট ভেঙে গেছে। এসব জানালা-দরজা চটের বস্তা দিয়ে বন্ধ করার চেষ্টা করা হয়েছে। কয়েক বছর আগে একটি ব্যারাক আগুনে পুড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। দুই-একজন ঘরে থাকার জন্য নিজের টাকা ব্যয় করে কোনো রকম থাকার জন্য মেরামত করেছেন।

হাসিব মোলস্না বলেন, ঘরে থাকার মতো পরিবেশ নেই। জায়গা-জমি না থাকায় বাধ্য হয়ে থাকি। সরকারের কাছে দ্রম্নত সময়ের মধ্যে ঘর সংস্কার ও মাটি ভরাটের দাবি জানান।

মোমেনা বেগম বলেন, আমাদের চলাচলের জন্য এক কিলোমিটার রাস্তা কাঁচা থাকায় বৃষ্টির সময় চলাচলে দুভোর্গ হয়। স্কুল না থাকায় ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা ব্যাহত হচ্ছে। এ ছাড়া তাদের জমি প্রভাবশালী এক ব্যক্তি ইটভাটা করে দখল করে রেখেছে।

আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দা বকুল ফকির বলেন, আশ্রয়ণ প্রকল্পে ১৮০টি পরিবার ছিল। প্রকল্পটির জরাজীর্ণ অবস্থা দেখে এবং অভাব-অনটন থাকায় অন্যত্র চলে গেছে অর্ধেক পরিবার। বর্তমানে এখানে ৩০-৪০টি পরিবার খুব কষ্টে বসবাস করছে। কারণ, প্রতিটি ব্যারাকের চালের টিন ছিদ্র হয়ে গেছে। সামান্য বৃষ্টি হলেই পানি পড়ে। বৃষ্টির পানি ঠেকাতে হাঁড়ি-পাতিল নিয়ে বসে থাকতে হয়। এ ছাড়া বর্ষা মৌসুমে প্রকল্প এলাকায় পানি জমে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়।

ইউপি সদস্য মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, নির্মাণের দীর্ঘদিন পার হয়ে গেলেও এগুলোর সংস্কার কাজ না করায় এখন বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। অনেক কষ্ট করে এখানে বসবাস করছে অসহায় মানুষগুলো।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার আকাশ কুমার কুন্ডু বলেন, আমি সরেজমিন পরিদর্শন করে মেরামতের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করব। সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে বরাদ্দ পেলে দ্রম্নত সংস্কার কাজ শুরু করা হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে