ফরিদপুরের সালথায় বাঁশের গৃহস্থালি জিনিসপত্র তৈরিতে ব্যস্ত দুই নারী -যাযাদি
বাঁশ ও বেতের তৈরি কুলা, চালুন, খাঁচা, মাচা, মই, চাটাই, ঢোল, খোল, গোলা, ঝুড়ি, ডুলা, ধামা, সেড়, মোড়া, মাথাল, সোফাসেট, বইপত্র রাখারর্ যাক, মাছ ধরার ঘুনিসহ বিভিন্ন আসবাবপত্র, বাঁশের ঘর, বেড়া, ঝাপ, বেলকি, দরমা বাংলাদেশের নিজস্ব শিল্প-সংস্কৃতির প্রতীক। দৈনন্দিন কাজে ব্যবহৃত বাঁশের তৈরি গৃহস্থালি পাত্রসমূহ খুবই আকর্ষণীয়। পস্নাসটিকের তৈরি জিনিসপত্রের ভিড়ে হারাতে বসেছে বাঁশ ও বেতের তৈরি জিনিসপত্র। আর এতে কুটিরশিল্পের সঙ্গে জড়িত ফরিদপুরের সালথা উপজেলা সদরের সাহাপাড়া গ্রামের কয়েকটি পরিবার পড়েছেন অর্থনৈতিক সংকটে। যে কারণে তাদের মধ্য থেকে অনেকে পেশা বদল করে ফেলেছেন।
সম্প্রতি সরেজমিন সালথা সাহাপাড়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, বাঁশ ও বেত থেকে চটা বের করে নিপুণ হাতের কারুকাজে স্বপ্ন বুনছেন ঋষি সম্প্রদায়ের কৃষ্ণ দাস, প্রভাস দাস, রানী দাস ও অনামিকা দাস। কৃষিনির্ভর এলাকাটিতে তারা বারোমাসই এই পণ্য তৈরি করেন।
এতে তারা বর্তমানে কষ্টের দাম না পেলেও বংশপরম্পরায় বাঁশ ও বেতের পণ্য বানানো তাদের একটি নেশা। তাই এখনো মনের মাধুরী মিশিয়ে কুটিরশিল্পের বুনন কাজটি তাদের করতে দেখা গেছে।
ঋষি সম্প্রদায়ের কৃষ্ণ দাস, রানী দাস ও অনামিকা দাস বলেন, যুগ যুগ ধরে বাঁশের কুলা-ডালা, চালন, বেতের ধামা, সেড় ও দাড়িপালস্নাসহ নানা ধরনের পণ্য নিজেদের হাতে তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছিলাম আমরা। কিন্তু বাজারে পস্নাস্টিকের পণ্যের দাম কম হওয়ায় ও বাঁশের দাম বেড়ে যাওয়ায় আমাদের তৈরি পণ্যের কদর দিন দিন কমে যাচ্ছে। বর্তমানে অনেক পরিবার শখ করে বাঁশ ও বেত দিয়ে তৈরি কিছু পণ্য গৃহস্থালির কাজের ব্যবহার করছেন, তাই এখনো এ শিল্পীটি টিকে আছে। এমন অবস্থায় আমরা তেমন ভালো নেই। খেয়ে না খেয়ে আমাদের জীবন চলছে।
সরকার যদি আমাদের পুঁজির ব্যবস্থা করে দেয়, তাহলে আমরা অন্য ব্যবসা করে একটু ভালোভাবে চলতে পারব। অনেকে বলছেন, বাজারে পস্নাস্টিকের সামগ্রীর সরবরাহে বন্ধ থাকলে, পরিবেশবান্ধব এসব পণ্য টিকে থাকবে, বেঁচে থাকবে ঋষি সম্প্রদায়ের এসব জীবন-জীবিকা।
ফরিদপুর বেসিকের উপ-মহাব্যস্থাপক মানছুরুল করিম বলেন, বর্তমান সরকার যেহেতু পস্নাস্টিক পণ্য ও পলিথিন ব্যবহার বন্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছেন। এরই ধারাবাহিকতায় আমরাও পস্নাস্টিক পণ্য পরিহার করে শিল্পবান্ধব দেশীয় বাঁশের পণ্য তৈরি করে বাজারজাত করার জন্য এ শিল্পের সঙ্গে জড়িতদের উৎসাহিত করছি।