অবকাঠামো তৈরির নির্দিষ্ট জায়গাও রয়েছে। একটি প্রকল্পও হাতে নেওয়া হয়েছিল। এগিয়েছিল ওই কাজের চলমান অবস্থার কিন্তু বগুড়া বলেই থমকে গেছে 'বগুড়া শ্রমজীবী পুরুষ ও মহিলা হোস্টেল নির্মাণ প্রকল্প'র কাজ। এতে করে ন্যায্য পাওনা সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন উত্তরের শ্রমজীবী মানুষগুলো।
চারটি জেলা নওগাঁ, গাইবান্ধা, জয়পুরহাট নিয়ে বগুড়া আঞ্চলিক শ্রম কার্যালয় গঠিত। প্রায় অর্ধকোটি শ্রমজীবী মানুষের সেবা দিয়ে থাকে এই দপ্তর। অর্থনৈতিক, আইন, স্বাস্থ্য ও চিকিৎসাসহ নানা ধরনের সেবা থাকলেও জনবল ও অবকাঠামোর ঘাটতি থাকায় চাহিদা সম্মতভাবে সেবা দেওয়া সম্ভব হয় না। অর্থাৎ সরকারি ও বেসরকারি শ্রমিকের তুলনায় জনবল একেবারেই কম। এছাড়া অন্য জেলা থেকে অনেক দূরের পথ পারি দিয়ে সেবা নিতে এসে পরিমাণের চেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় হয়। এ বিষয়গুলোর চিন্তা থেকেই শ্রমজীবী হোস্টেলের পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছিল।
বগুড়ায় একটি শ্রমজীবী হোটেল স্থাপন হলে, অন্য ৩টি জেলার শ্রমজীবীরা নানা ধরনের অফিশিয়াল কাজ কিংবা ব্যক্তিগত কাজে বগুড়ায় এসে নূ্যনতম সরকারি ফি পরিষদের মাধ্যমে রাতযাপন ও আহারের ব্যবস্থা করতে পারবে। এতে করে যেমন অর্থ ব্যয় হ্রাস পাবে, তেমনি নিরাপত্তা, ব্যক্তিগত স্বাধীনতা ও সরকারি হোস্টেলে থাকার পরিতৃপ্তি গ্রহণ করতে পারবে। কারণ ছোট ছোট চাকরিজীবীরা কিংবা শ্রমিকরা অন্য জেলায় গিয়ে রাতযাপনের মহাসংকটে ভোগেন। কারণ বর্তমান সময়ে মানসম্মত কোনো হোস্টেলে থাকতে গেলে মোটা অংকের টাকা গুনতে হয়। এছাড়া নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে হয়। এ কারণে অধিকাংশ শ্রমজীবী মানুষের কাছের কোনো আত্মীয়-স্বজনের বাসা না থাকলে, কাজ শেষ না হলেও আবারও ফিরে যায় নিজ বাড়িতে। এভাবে দিনের পর দিন যাওয়া-আসার মাধ্যমে নানা ধরনের অফিশিয়াল ও ব্যক্তিগত কাজ করে থাকেন। বগুড়া শহরের সূত্রপুরে আঞ্চলিক শ্রম দপ্তরের কার্যালয়। প্রায় ৩ একর জায়গা রয়েছে এই দপ্তরের। তবে মাত্র দুটি নতুন ভবনে চলে দাপ্তরিক কার্যক্রম। বাকি জায়গাগুলো রয়েছে ফাঁকা। এখানকার কর্মকর্তাদের দেওয়া তথ্যানুযায়ী এখানে একটি শ্রমজীবী হোস্টেল ও অর্থপেডিক হাসপাতাল অনায়াসেই তৈরি সম্ভব।
বগুড়ার এই কার্যালয়ে সংবাদ সংগ্রহে গেলে দেখা হয়, গাইবান্ধা থেকে আসা আব্দুর রহিম নামের এ ব্যক্তির সঙ্গে তিনি কথা বলেন আমাদের গাইবান্ধা বগুড়া আঞ্চলিক কার্যালয়েই আসতে হয়। আমরা যে কাজে আসি তা কোনো কোনো সময় এক দিনে হয় না। আবারও ফিরে যেতে হয় গাইবান্ধায়। আমরা দীর্ঘদিন থেকেই শুনে আসছি যে, এখানে একটা শ্রমজীবী হোস্টেল হবে কিন্তু বাস্তবায়ন তো হতে দেখলাম না। আমাদের দাবি অতিদ্রম্নত একটি হোস্টেল নির্মাণ করে আমাদের মতো শ্রমজীবীদের সুবিধা করে দেওয়া হোক। একই ধরনের কথা বলেন অন্য তিন জেলা থেকে আগত অনেকেই।
উলেস্নখ্য, ২০২১ সালের শেষের দিকে শ্রম অধিদপ্তরের সালিসি শাখা থেকে একটি প্রতিবেদন তৈরি করা হয়। দপ্তরের পরিচালক গিয়াস উদ্দিন স্বাক্ষরিত ওই প্রতিবেদনে উলেস্নখ করা হয় যে, আঞ্চলিক শ্রম দপ্তর বগুড়া কর্তৃক আয়োজিত অংশীজনের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত সভায় গোটা উত্তরবঙ্গের শ্রমজীবী মানুষের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে, এই অঞ্চলের মানুষের জন্য একটি মহিলা হোস্টেল তৈরির প্রকল্প করা যেতে পারে। সে অনুযায়ী প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হয় এবং এসংক্রান্ত কার্যক্রমটি চলমান থাকে। দপ্তরের চিঠিটি সদয় অবগতি ও কার্যার্থে প্রেরণ করা হয়েছিল- ১। পরিচালক, পরিচালকের দপ্তর, বিভাগীয় শ্রম দপ্তর, রাজশাহী ২। পরিচালক, পরিচালক (পরিকল্পনা, পরিসংখ্যান ও তথ্য প্রযুক্তি) শ্রম অধিদপ্তর ৩। অফিস কপি, শ্রম অধিদপ্তর প্রধান কার্যালয় ঢাকা বরাবর। সেই সঙ্গে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করার নির্দেশ প্রদান করা হয়। কিন্তু রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে বগুড়াকে উন্নয়ন বহির্ভূত রাখার জন্যই এই প্রকল্পটির কাজ বাস্তবায়ন হয়নি।
এ বিষয়ে বগুড়া আঞ্চলিক শ্রম দপ্তরের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ শহিদুজ্জামান বলেন বগুড়া অর্থপেডিক হাসপাতাল ও 'বগুড়া পুরুষ ও মহিলা হোস্টেল' বিষয়ে আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে একটি প্রকল্প বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত হয়েছিল। কোনো এক কারণে সেটির কার্যক্রম বন্ধ হয়ে আছে। আমরা আবারও একটি প্রস্তাবনা পাঠিয়েছি। দ্রম্নত কার্যকর হলে বগুড়াসহ উত্তরের মানুষ অনেক সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। এই হোস্টেল সব শ্রমজীবী মানুষের জন্য উন্মুক্ত থাকবে- সবাই নূ্যনতম সরকারি ফি পরিশোধের মাধ্যমে এখানে থাকতে পারবে এবং মিল দেওয়ার মাধ্যমে খাবার খেতে পারবে।
বগুড়া জেলা প্রশাসক মোছা. হোসনা আফরোজা বলেন, 'বগুড়া শ্রমজীবী মহিলা ও পুরুষ হোস্টেল' বগুড়া আঞ্চলিক শ্রম অফিস থেকে জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিতভাবে জানালে তা ফরোয়ার্ট করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। জেলা প্রশাসক আরও বলেন, বগুড়ায় একটি শ্রমজীবী মহিলা ও পুরুষ হোস্টেল হওয়া দরকার। আমরাও এ বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে চেষ্টা করব।