মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ১৬ বৈশাখ ১৪৩২

কফি ও কাজুবাদাম চাষে কৃষকের মুখে হাসি

পাহাড়ে লাঘব হবে অর্থনৈতিক সংকট
লংগদু (রাঙামাটি) প্রতিনিধি
  ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০
কফি ও কাজুবাদাম চাষে কৃষকের মুখে হাসি
কফি ও কাজুবাদাম চাষে কৃষকের মুখে হাসি

বলা হয়ে থাকে পাহাড়ের মাটি, সোনা ফলায় খাটি। অর্থাৎ যে কোনো চাষাবাদের জন্য উপযোগী এখানকার আবহাওয়া ও উর্বর মাটি। নানান অর্থকরী ফসলের মধ্যে নতুন করে পাহাড়ে কফি ও কাজুবাদাম চাষের ব্যাপক সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন হয়েছে। পার্বত্য অঞ্চলের মাটি কফি ও কাজুবাদাম চাষের জন্য বেশ উপযোগী। এই মাটি ও আবহাওয়া কাজে লাগিয়ে প্রকল্পের আওতায় সরকারিভাবে লাগানো হয়েছে প্রায় ২০ লাখ চারা। এসব চারার বেশ কিছু পার্বত্য জেলা রাঙামাটির লংগদু ও কাপ্তাই উপজেলায় পরীক্ষামূলক প্রদর্শনীতে রোপণ করা হয়েছে। কিছু গাছে এরই মধ্যে ফল আসাও শুরু করেছে।

পাহাড়ে কাজুবাদাম ও কফির চাষে কৃষি সম্প্র্রসারণ অধিদপ্তর ২১১ কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। ২০২০ সালে তিন জেলায় ১ হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে কাজুবাদাম চাষ হতো। এখন ৩ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে চাষ হচ্ছে। এছাড়া ২০২০ সালে ১২৫ হেক্টর জমিতে কফি চাষ হতো। এখন ১ হাজার ৩৫০ হেক্টর জমিতে আবাদ হচ্ছে বলে এসব তথ্য জানিয়েছে কৃষি অধিদপ্তর।

স্থানীয় পাহাড়ি-বাঙালি চাষিরা বলেন, আগে জুম ও তামাক চাষ ছাড়া কিছুই চিন্তা করা যেত না। এসব ফসল থেকে পাওয়া সামান্য অর্থে আমাদের চলতে হতো। আশা করছি, কাজুবাদাম ও কফি চাষে আমাদের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটবে। সরকারিভাবে আমাদের কাজুবাদাম ও কফি গাছের চারা দিয়েছে এবং চাষাবাদে সার্বিক সহযোগিতা করছে। গত বছরের তুলনায় এবার ফলন ভালো হচ্ছে, লাভও হবে। আমাদের আর অর্থনৈতিক সংকটে থাকতে হবে না। রাঙামাটির লংগদু উপজেলার বগাচতর ইউনিয়নের রাঙ্গীপাড়া এলাকায় দুই একর জমিতে কফি ও কাজুবাদামের চারা রোপণ করেছেন সাদ্দাম। তরুণ এই চাষি বলেন, 'অ্যারাবিকা ও রোবাস্টা জাতের কফির চারা রোপণ করেছি। চারার বয়স প্রায় তিন বছর হয়েছে। এরই মধ্যে কয়েকটা গাছে ফল এসেছে। আশা করি, আগামী বছর বেশিরভাগ গাছে ফল আসবে।'

এদিকে শুষ্ক মৌসুমে পাহাড়ে পানি সংকটে অর্থকরী ফসল কফি ও কাজুবাদাম চাষে সমস্যায় পড়ছেন বলে জানালেন স্থানীয় চাষিরা। লংগদু কৃষি অফিসের উপ-সহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা রতন চৌধুরী জানান, পরীক্ষামূলকভাবে লংগদুতে ১৫ একর জমিতে কফি ও কাজুবাদাম চাষ করা হয়েছে। এরমধ্যে উন্নত জাতের অ্যারাভিকা ও রোভাস্টা কফি এবং এম-২৩ ও কমোডিয়া জাতের কাজুবাদাম চাষ হয়েছে।

এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম বলেন, কফি ও কাজুবাদাম চাষে ব্যাপক সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হয়েছে প্রত্যন্ত পাহাড়ি জনপদে। অত্যধিক পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ এবং উচ্চমূল্যের ফসল কফি ও কাজুবাদামের পরীক্ষামূলক চাষে দেখা যায় পাহাড়ের মাটি এ ফসলের জন্য খুবই উপযুক্ত। এ কারণে পাহাড়ে কাজুবাদাম ও কফি ফসলের চাষাবাদ দিন দিন কৃষকদের মাঝে ব্যাপক জনপ্রিয় হচ্ছে। পরীক্ষামূলকভাবে কাজু বাদাম ও কফি চাষে সফলতার হাতছানিতে পাহাড়ের প্রত্যন্ত এলাকায় কৃষকদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে কৃষি বিভাগ কাজ করছে বলে জানান এ কর্মকর্তা।

তিন পার্বত্য চট্টগ্রামে কফি ও কাজুবাদাম চাষাবাদ প্রকল্পের পরিচালক শহিদুল ইসলাম জানান, ইতোমধ্যে ৩৬ হাজার কৃষককে কাজুবাদাম ও কফি উৎপাদন প্রযুক্তি, সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণ বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এখন পর্যন্ত ৬ হাজার ৭০০টি প্রদর্শনী বাস্তবায়ন করা হয়েছে। এসব প্রদর্শনীর আওতায় কাজুবাদম ও কফির প্রায় ২০ লাখ চারা বিতরণ করা হয়েছে। বছরজুড়ে আরও চারা বিতরণ করা হবে।

গবেষকরা বলছেন, দেশে ও আন্তর্জাতিক বাজারে কাজুবাদাম ও কফির বিশাল চাহিদা ও দাম অনেক বেশি। তাই এসব ফসলের চাষাবাদ ও প্রক্রিয়াজাত বাড়াতে হবে। পাহাড়ের পাদদেশে বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে এসব ফসল চাষে সাফল্যের সম্ভাবনা অনেক। পাহাড়ি এলাকার মানুষের জীবনযাত্রার মানের দর্শনীয় উন্নয়ন হবে এসব অর্থকরী ফসল চাষাবাদে এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকার অর্থনীতিতে বিপস্নব ঘটবে বলেও ধারণা করছেন অনেকে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে