মেয়র আসে-যায়, হয় বদল। চলে নিম্ন মহল থেকে উচ্চ মহলের দৌড়ঝাঁপ। কয়েক দফায় হয়েছে চিঠি চালাচালি। তাতেও কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। স্থানীয় সিটি করপোরেশনের আশ্বাস নিরাশার দোলাচলে দীর্ঘ ৮ বছরের বেশি সময় ধরে অনিশ্চিত হয়ে পড়া রংপুরের আঞ্চলিক রেশম সম্প্রসারণ কার্যালয়ের প্রায় ১ হাজার ৩শ' ফুট ভেঙে পড়া সীমানা প্রাচীরের সংস্কারের কাজ।
ফলে অরক্ষিত হয়ে পড়েছে সরকারি প্রতিষ্ঠানটি। এতে করে সেখানে দিন-রাত অপরাধী ও গরু-ছাগলের বিচরণ বাড়ায় নিরাপত্তা বিঘ্নিত হচ্ছে। এর পাশাপাশি ক্ষতি হচ্ছে তুঁত বাগান বলে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির কর্তৃপক্ষ।
রংপুর আঞ্চলিক রেশম সম্প্রসারণ অফিসের উপপরিচালক মাহবুবুল হক জানান, নগরীর দখিগঞ্জ এলাকায় অবস্থিত তার প্রতিষ্ঠানের ৩৬ দশমিক ৩৭ একর জমি সীমানা প্রাচীরে ঘেরা রয়েছে। এর মধ্যে ৬০ বিঘা জমির বাগানে তুঁত চাষ করা হচ্ছে।
এদিকে, রংপুর সিটি করপোরেশনের প্রথম মেয়র মৃত সরফুদ্দিন আহমেদ ঝন্টুর আমলের শেষ দিকে নগরীর জাহাজ কোম্পানী মোড় থেকে মাহিগঞ্জ সাতমাথা পর্যন্ত ৪ কিলোমিটার রাস্তা মেরামত ও সম্প্রসারণ এবং ড্রেন নির্মাণ কাজ শুরু হয়। সেসময় ঠিকাদার ড্রেনের কাজ করতে গিয়ে রেশন সম্প্রসারণ অফিসের ১ হাজার ৩শ' ফুট সীমানা প্রাচীর ভেঙে পড়ে। বিষয়টি জানতে পেড়ে মেয়র ঝন্টু লিখিতভাবে মেরামতের কথা বলেছিলেন। তার সঙ্গে দফায় দফায় যোগাযোগ করা হলেও তিনি আমলে নেননি। অবশেষে মেয়াদও শেষ হয়ে যায় ঝন্টুর।
১৬ সাল থেকে ১৭ সাল পর্যন্ত দুই দফায় সীমানা প্রাচীর পুনর্নির্মাণের জন্য চিঠি দিয়েছিলেন রংপুরের তৎকালীন ফার্ম ম্যানেজার সালমা আকতার বানু ও উপপরিচালক সাজেদুর রহমান। বাংলাদেশ রেশম বোর্ডের তৎকালীন মহাপরিচালক আনিসুল হক ভুঁইয়াকে অবগত করা হয়েছিল। তিনি সিটির নতুন মেয়র মোস্তাফিজার মোস্তাফার কাছে চিঠি দিয়েছিলেন। মেয়র সেসময় সীমানা প্রাচীর নির্মাণের মৌখিকভাবে আশ্বাস দেন। আশ্বাসের মধ্যে সীমাবদ্ধতা রাখা অবস্থায় তৃতীয় বারের মতো সিটির নির্বাচন ঘনিয়ে আসে। তিনি তার পদ থেকে অব্যাহতি দিয়ে নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নেন। নির্বাচনে ফের তিনি মেয়র পদে নির্বাচিত হন। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের কারণে ৭ মাসের মাথায় তিনি অপসারিত হন। এতে করে সীমানা প্রাচীর পুনর্নির্মাণের কাজ ঝুলে যায়। এক পর্যায়ে চলতি বছরের মাঝামাঝিতে বাংলাদেশ রেশম বোর্ডের বর্তমান মহাপরিচালক আনোয়ার হোসেন কাগজপত্র নিয়ে তৎকালীন রংপুর বিভাগীয় কমিশনার জাকির হোসেনের সঙ্গে দেখা করেন।
বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য তিনি বর্তমান জেলা প্রশাসক রবিউল ফয়সলের কাছে ওই কাগজপত্র পাঠিয়ে দেন। এখন পর্যন্ত কাজটি ঝুলে আছে বলে জানিয়েছেন রংপুর আঞ্চলিক রেশম সম্প্রসারণ কার্যালয়ের বর্তমান উপপরিচালক। রংপুর সিটি করপোরেশনের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী জানান, মেয়রের কাছে কয়েকবার বিষয়টি উপস্থাপন করা হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত অধরা থেকে যায়।
রংপুর সিটি করপোরেশনের সচিব জয়শ্রী রানী রায় জানান, আগের বিভাগীয় কমিশনারের কাছে জানানো হয়েছিল। বরাদ্দ না পাওয়ায় তা বাস্তবায়ন হয়নি। রংপুর সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা উম্মে ফাতিমা জানান, বরাদ্দ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।