টাঙ্গাইলে কমলা ও চট্টগ্রামের কর্ণফুলীতে মালচিং পদ্ধতিতে টমেটো চাষে চমক দেখিয়েছেন স্থানীয় কৃষকরা। টাঙ্গাইলে কমলা চাষ করে বছরে কয়েক লাখ টাকা আয় করছেন কৃষক। অন্যদিকে, কর্ণফুলীতে মালচিং পদ্ধতিতে চাষ করার কারণে কৃষকের সেচ খরচ অনেক কমেছে। আঞ্চলিক স্টাফ রিপোর্টার ও প্রতিনিধির পাঠানো খবরে বিস্তারিত-
স্টাফ রিপোর্টার, টাঙ্গাইল জানান, চায়না কমলার বাগান করে তাক লাগিয়েছেন টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার বাঁশতৈল ইউনিয়নের পাঁচগাঁও গ্রামের যুবক দেলোয়ার হোসেন দিলু।
কমলা চাষে সফল কৃষক দেলোয়ার জানান, ২০১৯ সালে প্রথম নিজস্ব অল্প জমিতে বেকারত্ব ঘোচাতে মিশ্র ফলের বাগান শুরু করেন। বাগানের নাম দেন 'দিলু অ্যাগ্রো ফার্ম'। স্বীয় কায়িক পরিশ্রম ও অসীম ধৈর্যের পরীক্ষা দিয়ে তিনি ২০২২ সালে সফলতার মুখ দেখেন। দিলু অ্যাগ্রো ফার্মের পরিধি এখন সাড়ে ৬ একর জুড়ে। হলুদ রঙের চায়না কমলা চায় দেলোয়ার হোসেন দিলুর ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়ে দিয়েছে। বছরে সাড়ে তিন লাখ থেকে চার লাখ টাকা আয় করছেন। আনুষঙ্গিক খরচ বাদ দিয়ে তিন বছরে সাড়ে ৯ লাখ থেকে ১০ লাখ টাকা আয় হয়েছে তার। এলাকাবাসী ও আশপাশের উপজেলা এমনকি জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রায় দিনই লোকজন এসে তার চায়না জাতের কমলার বাগান দেখতে ভিড় করছেন। অনেকেই উদ্যোক্তা হওয়ার আগ্রহ দেখাচ্ছেন। জেনে নিচ্ছে চায়না কমলা চাষের খুঁটিনাটি।
সরেজমিন কমলা বাগান দেখতে আসা গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার চন্দ্রা এলাকার আব্দুস সামাদ, রিপন মাহমুদ, বলিয়াদী এলাকার সামছুল আলম, ঘাটাইলের ইসমাইল হোসেন, গৃহবধূ আছমা আক্তার, দেলদুয়ারের মাসুদ রানা ও তার বন্ধু আশিক মাহমুদসহ অনেকেই জানান, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের মাধ্যমে দিলু অ্যাগ্রো ফার্মে চায়না কমলা চাষের বিষয়ে তারা জানতে পারেন। স্বচক্ষে অবলোকনের লোভ সামলাতে না পেরে বাগান দেখতে এসেছেন। বাগানে এসে কমলার ফলন দেখে তারা প্রায় সবাই অবাক হয়েছেন।
দেলোয়ার জানান, তার বাগান পরিচর্যায় প্রতিনিয়ত চারজন শ্রমিক কাজ করছেন। তাদেরকে দৈনিক মজুরি হিসেবে জনপ্রতি ৪৫০ টাকা দিতে হয়। এতে বাগানের মাধ্যমে কিছু লোকের বেকারত্ব দূর হচ্ছে।
টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলা কৃষি অফিসার মাহমুদা খাতুন জানান, দেলোয়ার হোসেন দিলুর বাগানে ১৪০টি চায়না কমলা গাছ রয়েছে। কমলা বাগানটি করার ক্ষেত্রে তার দপ্তরের পক্ষ থেকে বিভিন্ন পরামর্শগত সহায়তা দেওয়া হয়েছে। ওখানে যিনি উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা রয়েছেন তিনি চাষি দেলোয়ারকে সবসময় সহযোগিতা করছেন। আরও যদি কেউ কমলাসহ অন্যান্য ফল বাগান করতে আগ্রহী হন তাদেরকেও কৃষি বিভাগ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।
কর্ণফুলী (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি জানান, চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলার জুলধার ক্ষেতের মাঠ জুড়ে মালচিং পদ্ধতিতে চাষ হচ্ছে টেমেটো। বিষমুক্ত সবজি চাষে কৃষিক্ষেত্রে অন্যতম উপায় জৈব সার ও মালচিং পদ্ধতি। কম খরচে অধিক উৎপাদনে এ পদ্ধতিতে টমেটো চাষ করে লাভবান হয়েছেন এ উপজেলার কৃষক। কীটনাশকের পরিবর্তে জৈব সার ব্যবহার করছেন তারা। ফসলের চাহিদা ও মূল্য বেশি পাওয়ায় কৃষক আগ্রহী হয়ে পরামর্শ নিচ্ছেন এ পদ্ধতি সম্পর্কে। এ পদ্ধতি ব্যাপক হারে ছড়িয়ে দিতে কৃষি অফিস থেকে বিভিন্ন পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর ১০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের সবজি ও টমেটো আবাদ হয়েছে। ৫০০ মেট্রিক টন সবজি ও টমেটো উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। উন্নত জাতের টমেটোর মধ্যে বিউটি পস্নাস, লাভলী, অভিলাস, লভেলট্রি, বাহুবলি ও জিরো ফোর জাতের টমেটো আবাদ হচ্ছে। আর এ সকল টমেটোর আবাদের খরচ কমিয়ে রোগ বালাইয়ের হাত থেকে রক্ষা পেতে মালচিং পদ্ধতি দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
জানা যায়, জুলধা মাঠে আবদুর রহিম ২ কানি, শরিফ মেম্বার দেড় কানি, আবদুর রহমান ১ কানি, কামরুল হাসান ১ কানিসহ অন্তত ৫০ জন কৃষক টমেটো চাষ করেছেন। আগে জমিতে সেচ ও আগাছা দমনে সময় বেশি লাগতো। মালচিং পদ্ধতিতে তা লাগে না। আবাদ ভালো হচ্ছে এবং খরচও কমেছে। তবে কৃষকদের অভিযোগ টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ না করায় তারা প্রতিবছর ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। টমেটো চাষি আবদুর রহমান জানান, 'প্রচলিত পদ্ধতিতে আবাদ করে লোকসান হচ্ছিল। পরে উপজেলা কৃষি অফিসের পরামর্শে মালচিং পদ্ধতি শুরু করি। সেচ খরচও হচ্ছে না। দুই কানি জমিতে টমেটো আবাদ করতে খরচ হয়েছে ১ লাখ টাকা। আবহাওয়া ঠিক থাকলে ৪ থেকে সাড়ে ৪ লাখ টাকা পর্যন্ত টমেটো বিক্রি করা সম্ভব হবে।' আরেক কৃষক আবদুর রহিম জানান, চলতি বছর এক কানি জমিতে টমেটো চাষ করেছেন, এতে তার খরচ এক লাখ টাকা, ইতোমধ্যে ১০ হাজার টাকার মতো বিক্রি করেছেন, সব ঠিক থাকলে ২ থেকে আড়াই লাখ টাকা বিক্রি করা সম্ভব হবে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শ্যামল চন্দ্র সরকার বলেন, 'মালচিং পদ্ধতিতে সবজিতে রোগবালাই কম হয় তাই কীটনাশক ব্যবহার করতে হয় না। সেচ খরচও অনেক কম। উৎপাদিত ফসল দেখতেও ভালো হয়। যে কারণে বাজারেও চাহিদা বেশি। তাই কৃষকদের কাছে দিন দিন এ পদ্ধতি জনপ্রিয় হচ্ছে। এতে আমাদের পাশাপাশি বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থাও কৃষকদের সাহায্য করছে।'