নেত্রকোনায় গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শেখ হাসিনা দেশ থেকে চলে যাওয়ার পর থেকে জেলায় বিএনপির শীর্ষ নেতারা ফের রাজনীতিতে সক্রিয় হয়ে উঠেছেন। তৃনমূল পর্যায়ে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের সঙ্গে বিএনপি নেতাদের নিয়মিত মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে দায়েরকৃত গায়েবী মামলা মোকাবিলার পাশাপাশি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের রাষ্ট্র মেরামতের ৩১ দফা বাস্তবায়নে জনগণের সম্পৃক্ততা বৃদ্ধির লক্ষ্যে তৃনমূলে সভা, সমাবেশ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নির্বাচন কমিশন শপথ নেওয়ায় জেলার ৫টি আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীদের নিয়ে তৃণমূল নেতাকর্মীদের মধ্যে নানা আলোচনা শোনা যাচ্ছে।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, নেত্রকোনা-১, দূর্গাপুর-কলমাকান্দা আসনে বিএনপির নমিনী স্পেশাল অ্যাসিস্ট্যান্ট টু দ্য চেয়ারপার্সন ফরেন অ্যাফেয়ার্স এডভাইজারি কমিটির সম্মানিত সদস্য কেন্দ্রীয় বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, দূর্গাপুর উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ড. মো. হামিদুর রহমান রাশেদ, কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাবেক সহ-সভাপতি এজমল হোসেন পাইলট, নেত্রকোনা-২, সদর-বারহাট্রা আসনে জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি সাবেক এমপি বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আশরাফ উদ্দিন খান, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক বিএনপির নমিনী অধ্যাপক ডা. মো. আনোয়ারুল হক, কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক এটিএম আব্দুল বারী ড্যানি, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ও জেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি ড. আরিফা জেসমিন নাহীন, জেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি ডা. দেলোয়ার হোসেন টিটো, নেত্রকোনা-৩, আটপাড়া- কেন্দুয়া আসনে বিএনপির নমিনী জেলা বিএনপির সদস্য সচিব ড. রফিকুল ইসলাম হিলালী, জিয়া পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম মহাসচিব জেলা বিএনপির সাবেক উপদেষ্টা রোটারিয়ার এম. নাজমুল হাসান, কেন্দুয়া উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি দেলোয়ার হোসেন ভুইয়া দুলাল, নেত্রকোনা-৪, মদন-মোহনগঞ্জ-খালিয়াজুরী আসনের সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, বাবরপত্নী তাহমিনাজ্জামান শ্রাবনী, নেত্রকোনা-৫, পূর্বধলা আসনে বিএনপির নমিনী জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবু তাহের তালুকদার, পূর্বধলা বিএনপির সাবেক সভাপতি মো. সাইদুর রহমান, উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক বাবুল আলম তালুকদার, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য শহীদুলস্নাহ ইমরানসহ বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা রাজনীতিতে সক্রিয় থাকায় আওয়ামী লীগের রোষানলে পড়েছেন।
আওয়ামী লীগের রোষানলের শিকার হওয়া বিএনপির কেন্দ্রীয় এবং জেলা পর্যায়ের নেতারা মামলা মোকাবিলার পাশাপাশি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের রাষ্ট্র মেরামতের ৩১ দফা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে জেলার বিভিন্ন উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে বিএনপির মতবিনিময় সভা করছেন।
কুয়াকাটা (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি জানান, গত ১৭ বছর ধরে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ক্ষমতার বাইরে থাকলেও সকল পরিস্থিতিতে নিজেদের সাংগঠনিকভাবে গুছিয়ে রাখার চেষ্টা করেছে দলটি। কিন্তু দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পরে পটুয়াখালীর কুয়াকাটায় বিএনপি ও এর অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের মধ্যে দেখা দিয়েছে নানা দলীয় কোন্দল ও বিশৃঙ্খলা। সাংগঠনিক কার্যক্রম পালনের ক্ষেত্রেও নিজেদের মধ্যে রয়েছে একাধিক গ্রম্নপিং।
তবে বিএনপির সহযোগী সংগঠনগুলোর একাধিক নেতাকর্মীদের দাবি, পৌর বিএনপির দুর্বল নেতৃত্ব এবং সভাপতি ও সেক্রেটারি কুয়াকাটার বাইরে বসবাস করায় দলের মধ্যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কঠোর নির্দেশনা এবং শাস্তিমূলক ব্যবস্থা সারাদেশে চলমান থাকলেও এর তেমন কোনো প্রভাব পড়েনি কুয়াকাটায়। জেলা বিএনপি বলছে, দলীয় শৃঙ্খলা কেউ ভঙ্গ করলে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আধিপত্য বিস্তার আর সরকারি বেসরকারি নানা ইজারা ভাগাভাগি নিয়ে দ্বন্দ্ব চলছে নিজেদের মধ্যে। দলটির কার্যক্রমে ক্ষুব্ধ স্থানীয় বিএনপির সাধারণ নেতাকর্মী ও স্থানীয়রা।
কুয়াকাটা পৌর ছাত্রদলের সদস্য সচিব নেছার উদ্দিন বলেন, 'কুয়াকাটা পৌর বিএনপির সকল অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের মধ্যে একটি সুসম্পর্ক সব সময়ই ছিল। কিন্তু স্বৈরাচারী আওয়ামী সরকারের পতনের পর কুয়াকাটা পৌর বিএনপির মধ্যে একটি দলীয় বিশৃঙ্খলা লক্ষ্য করা যাচ্ছে।'
কুয়াকাটা পৌর যুবদলের সভাপতি সৈয়দ মোহাম্মদ ফারুক বলেন, 'কুয়াকাটা পৌর বিএনপির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক একক আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা করছে।'
কুয়াকাটা পৌর স্বেচ্ছাসেবক দলের আহবায়ক আলী হায়দার শেখ বলেন, 'কুয়াকাটা পৌর বিএনপির সভাপতি সেক্রেটারি সঙ্গে আমাদের কোন সুসম্পর্ক তৈরি হয় না। এর কারণ হচ্ছে তারা উভয়ই পৌরসভার বাহিরের বাসিন্দা।'
কুয়াকাটা পৌর শ্রমিক দলের সভাপতি মানিক ফকির বলেন, 'সামান্য সুসময় তৈরি হওয়াতেই নিজেদের মধ্যে দলীয় কোন্দল সৃষ্টি হয়েছে।' কুয়াকাটা পৌর কৃষক দলের সভাপতি আলী হোসেন খন্দকার বলেন, 'কুয়াকাটা পৌর বিএনপির সভাপতি আ. আজিজ মুসলিস্ন প্রবীণ কারো কথা শুনতে চায় না।'
কুয়াকাটা পৌর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সাইদুর রহমান সোহেল বলেন, 'কুয়াকাটা পৌর বিএনপির মধ্যে আওয়ামী লীগের মদদে কিছু লোক রাজনীতি করতে এসেছে।'
কুয়াকাটা পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মতিউর রহমান বলেন, 'কমিটির সকলেরই কোনো না কোনো দায়িত্ব রয়েছে, সবাই যে যার দায়িত্ব পালন করলেই দলে কোন বিশৃঙ্খলা থাকবে না।' পটুয়াখালী জেলা বিএনপির সদস্য সচিব স্নেহংশু সরকার কুটটি বলেন, 'কেউ দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করলে এবং সাংগঠনিক কার্যক্রমে গাফিলতি করলে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।'