চট্টগ্রামে বাংলাদেশ সনাতন জাগরণ জোটের মুখপাত্র অধ্যক্ষ চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর মুক্তির দাবিতে ইসকন সমর্থকদের হামলায় সাইফুল ইসলাম আলিফ নিহত হন। গত মঙ্গলবার বিকেলে চট্টগ্রাম আদালত ভবনের সামনের সড়কে ঘটে এ ঘটনা। এই হত্যার প্রতিবাদে ও হত্যাকারীর বিচার দাবিতে বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিক্ষোভকারীরা হিন্দুদের সংগঠন ইসকন নিষিদ্ধের দাবিও জানান। আঞ্চলিক অফিস ও প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্যে বিস্তারিত ডেস্ক রিপোর্ট-
বরিশাল অফিস জানিয়েছে, চট্টগ্রামে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম হত্যার প্রতিবাদে বরিশাল আদালত প্রাঙ্গনে বিক্ষোভ করেছেন আইনজীবীরা। বুধবার দুপুরে আদালত চত্বরে এ প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করেন তারা। পরে সংক্ষিপ্ত বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
বিএনপিপন্থী আইনজীবী পিপি মহসিন মন্টু, মীর জাহিদুল কবির এর উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভ মিছিলে শতাধিক আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন। মিছিল শেষে এক এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে বিক্ষোভকারীরা বলেন, 'ইসকনের হামলায় আদালত চত্বরে আইনজীবী সাইফুল ইসলামের মৃতু্য হয়েছে। তাদের এ হত্যাকান্ড মনে করিয়ে দেয় ইসকন একটি জঙ্গি সংগঠন।'
এদের নিষিদ্ধ করার দাবি তোলেন তারা। এর আগে বেলা ১২টায় ব্রজমোহন কলেজের শিক্ষার্থীরা আইনজীবী সাইফুল ইসলামের হত্যার বিচার এবং ইসকন নিষিদ্ধের দাবিতে নগরীর অশ্বিনী কুমার হলের সামনের সড়কে প্রতিবাদ সমাবেশ করে। এছাড়াও গত মঙ্গলবার রাত ও বুধবার সকালে পৃথকভাবে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ ক্যাম্পাসে ইসকনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ মিছিল করেছেন শিক্ষার্থীরা।
রাজশাহী অফিস জানায়, বুধবার সকাল ১০টায় রাজশাহী অ্যাডভোকেট বার সমিতির কার্যালয়ের সামনে এ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। রাজশাহী অ্যাডভোকেট বার সমিতির সদস্যরা এতে অংশ নেন।
মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন রাজশাহী অ্যাডভোকেট বার সমিতির সভাপতি আবুল কাসেম, সাধারণ সম্পাদক জমসেদ আলী, সাবেক সাধারণ সম্পাদক পারভেজ তৌফিক জাহেদী।
আবুল কাসেম বলেন, 'আদালত প্রাঙ্গনে আইনজীবীকে নির্মমভাবে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করা বাংলাদেশের ইতিহাসে নজিরবিহীন। এ ঘটনাকে ছোট করে দেখার কোন সুযোগ নেই। একটি গোষ্ঠী বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করে তুলতে সনাতনীদের উস্কানি দিচ্ছে।'
তিনি বলেন, আইনজীবী সাইফুলের হত্যাকারী যারাই হোক না কেন, অতি দ্রম্নত সময়ের মধ্যে তাদের গ্রেপ্তার করে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে। তা না হলে আইনজীবীরা আরও বৃহৎ কর্মসূচি দিতে বাধ্য হনে। আইনজীবীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত ও বাংলাদেশে ইসকনের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার দাবিও জানান তিনি।
পটুয়াখালী প্রতিনিধি জানান, চট্টগ্রামে আদালতের সহকারী সরকারি কৌঁসুলি (এজিপি) সাইফুল ইসলাম আলিফকে কুপিয়ে হত্যার প্রতিবাদে পটুয়াখালীতে বিক্ষোভ ও মশাল মিছিল করেছেন বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এ সময় তারা অপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করার পাশাপাশি ইসকন সংগঠনকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করার দাবি জানান।
গত মঙ্গলবার রাতে পটুয়াখালী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট, পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ এবং পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীরা এ বিক্ষোভ মিছিলের করেন।
পটুয়াখালী শহরের পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা কলেজ ক্যাম্পাস থেকে বের হয়ে শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক গুলো প্রদক্ষিণ করে চৌরাস্তা এলাকায় গিয়ে এক পথসভায় মিলিত হয়। পথসভা শেষ মিছিলটি ফোর লেন সড়ক হয়ে পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে এসে শেষ হয়। পথসভায়, ইলেকট্রিক্যাল ডিপার্টমেন্টের ষষ্ঠ সেমিস্টারের ছাত্র আশরাফুল আলম এবং সাকিব আল হাসানসহ আরও অনেকে বক্তব্য রাখেন।
আশরাফুল আলম বলেন 'বাংলাদেশের জঙ্গি সংগঠন ''ইসকন''র উস্কানীমূলক বক্তব্যের কারণে আমাদের ভাই সাইফুলকে জঙ্গি সংগঠনের সদস্যরা অপহরণ করে তুলে নিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করেছে। সেই সঙ্গে চট্টগ্রামের কিছু মসজিদ ভাংচুর করেছে। তাই আমরা এই জঙ্গি সংগঠনকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করার পাশাপাশি অপরাধীদের ফাঁসির দাবি জানাচ্ছি।' সাকিব আল হাসান বলেন, 'আমরা সাইফুল হত্যার বিচার চাই এবং কেন মসজিদে হামলা এবং ভাংচুর করা হয়েছে তার সঠিক তদন্ত চাই।'
এছাড়াও ইলেকট্রিক্যাল ডিপার্টমেন্টের ষষ্ঠ সেমিস্টারের ছাত্র মো. সিফাত, সিভিল ডিপার্টমেন্টের ষষ্ঠ সেমিস্টারের ওবায়দুর রহমান, মেহেদী হাসান, ইলেকট্রিক্যাল, সিভিল, ইলেক্ট্রনিক্স, কম্পিউটার ও আরএসি বিভাগের প্রায় চার শতাধিক শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে একই সময় পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজের সাধারণ শিক্ষার্থীরাও একটি বিক্ষোভ মিছিল করে। এছাড়া পটুয়াখালী দুমকি উপজেলায় অবস্থিত পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে মূল ক্যম্পাসে এবং বাবুগঞ্জ ক্যাম্পাসেও শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল করেছে।
পটুয়াখালী সদর থানার ওসি ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, এখন পর্যন্ত শহরের পরিবেশ শান্ত আছে। কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা এড়াতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও পুলিশ কাজ করছে।
রাবি প্রতিনিধি জানান, ইসকনকে সন্ত্রাসী সংগঠন আখ্যা দিয়ে বাংলাদেশ থেকে নিষিদ্ধের দাবি জানিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। এ সময় চট্টগ্রামের আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যার বিচারের দাবি জানান তারা।
গত মঙ্গলবার রাত ৯টায় শহীদ জোহা চত্বরের সামনে এ বিক্ষোভ মিছিল করেন শিক্ষার্থীরা। এর আগে, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন আবাসিক হল থেকে শিক্ষার্থীদের জোহা চত্বরে মিলিত হতে দেখা যায়। পরে জোহা চত্বরে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফের গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।
এ সময় উপস্থিত শিক্ষার্থীরা বলেন, 'জুলাই অভু্যত্থানে হিন্দু মুসলমানসহ সব ধর্মের ভেদাভেদ ভুলে আন্দোলন করেছিলেন ছাত্র-জনতা। কিন্তু পতিত সরকারের দোসর ও দিলিস্নর ষড়যন্ত্রে দেশে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা লাগানোর ষড়যন্ত্র চলছে। সেই উদ্দেশেই চট্টগ্রামে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে।' সেই সঙ্গে চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের বিচার দাবি করেন তারা। আলিফ নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, 'ভারতের ষড়যন্ত্রে আজকে ইসকন সদস্যরা চট্রগ্রামে আমাদের এক ভাইকে প্রকাশ্যে হত্যা করেছে। আমাদের আবারও এক হয়ে তাদের ষড়যন্ত্র রুখে দিতে হবে। এছাড়াও আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যার দ্রম্নত বিচার চাই।'
বিক্ষোভ মিছিলে অংশ নিয়ে সাইফুল ইসলাম নামের আরেক শিক্ষার্থী বলেন, 'আমরা সন্ত্রাসী সংগঠন ইসকনের নিষিদ্ধের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করছি। শুধু আজ নয় সবসময় ইসকন বাংলাদেশের জন্য এক আতঙ্কের নাম। বাংলাদেশ থেকে ইসকনের নাম চিরতরে মুছে দিতে হবে।' এ সময় প্রায় ৫ শতাধিক শিক্ষার্থী এ বিক্ষোভ মিছিলে উপস্থিত ছিলেন।
শাবি প্রতিনিধি জানান, ইসকন নিষিদ্ধের দাবিতে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শাবি) বিক্ষোভ মিছিল করেছেন শিক্ষার্থীরা। গত মঙ্গলবার রাতে বিক্ষোভ মিছিল করেন তারা। অবিলম্বে অপরাধীদের গ্রেপ্তার করে তাদের বিরুদ্ধে আইনী প্রক্রিয়ায় বিচার নিশ্চিতের দাবিও জানান বিক্ষোভকারীরা।
বিক্ষোভ মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহপরান হল থেকে বের হয়ে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে প্রধান ফটকে এসে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়। সমাবেশে ইসকনের নানা দেশবিরোধী কর্মকান্ড তুলে ধরেন বক্তারা। এ সময় ইসকনকে আজীবনের জন্য নিষিদ্ধের দাবি জানানো হয়। যদি নিষিদ্ধ না করা হয় তাহলে এর বিরুদ্ধে কঠোর থেকে কঠোরতর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে হুঁশিয়ারি দেন তারা।
এ সময় বক্তব্য দেন শাবিপ্রবি শিক্ষার্থী দেলওয়ার হোসেন শিশির, আজাদ শিকদার, দিলওয়ার হোসাইন, পলাশ বখতিয়ার, জুবায়ের রায়হান ও জহিরুল ইসলাম প্রমুখ।
পবিপ্রবি প্রতিনিধি জানান, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (পবিপ্রবি) ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীরা হত্যাকারীদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আইনের আওতায় আনার আল্টিমেটাম দেন। মঙ্গলবার রাত ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজয় ২৪ চত্বর ও মুক্ত বাংলা চত্বরে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ মিছিলে এ দাবি জানান তারা।
বিক্ষোভ মিছিলে মো. জায়েদ তার বক্তব্যে বলেন, '৫ আগস্টের আগ পর্যন্ত আমরা সব ধর্মের মানুষ মিলে দেশ স্বাধীন করেছি। কিন্তু আজকে চট্টগ্রাম কোর্টে প্রকাশ্য দিবালোকে যা হয়েছে (মানুষ হত্যা) তা কোনো ধর্মের ধার্মিক মানুষ করতে পারে না। তারা নিঃসন্দেহে সন্ত্রাসী। আমরা দাবি জানাচ্ছি ইসকনকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ঘোষণা দিতে হবে এবং যারা হামলা করেছে তাদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আইনের আওতায় আনতে হবে।'
এ সময় হাফেজ ফরিদুল ইসলাম বলেন, 'ইসকন একটি সন্ত্রাসী সংগঠন। সন্ত্রাসী এ সংগঠনটির লক্ষ্যই হলো দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করা। আমরা অবিলম্বে এ সংগঠনকে নিষিদ্ধের দাবি জানাই।'
বীরগঞ্জ (দিনাজপুর) প্রতিনিধি জানান, দিনাজপুরের বীরগঞ্জে বুধবার দুপুরে সাধারণ ছাত্র জনতার ব্যানারে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন ধলু, ছাত্রনেতা হুমায়ুন আহম্মেদ ইফতি, ফাহমিদ হোসেন, মো. তপু, তোজাম্মেল হোসেন প্রমুখ। মানববন্ধন শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল শহরের প্রধান প্রধন সড়ক প্রদক্ষিণ করে।