নেত্রকোনা জেলার কলমাকান্দা উপজেলার সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোতে পাহাড়ি ঢল, বন্যায় প্রচুর বালু এসে আদিবাসী বাঙালিদের কৃষি জমি অনুর্বর জমিতে পরিণত করেছে। এলাকার অনেক জমি ফসল চাষের বাহিরে পড়ে আছে। ফলে প্রান্তিক কৃষক তার জমিতে ফসল ফলাতে পারছে না।
চন্দ্রডিঙ্গা, বেতগড়া, বাঘবের, সন্যাসীপাড়া, পাতলাবন, হাতিবের, উত্তর লেংগুরাসহ ২৭টি সীমান্ত গ্রামের কৃষকরা বালু ও সেচের পানির সংকট মোকাবিলা করতে না পেরে স্থানীয়ভাবে উদ্বাস্তু হয়েছে অনেক কৃষক। শত শত উর্বর ফসলি জমি অনাবাদিতে পরিণত হয়েছে। বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান বারসিকের সহায়তায় কৃষক নেতৃত্বে বালু ও খরা মোকাবিলায় প্রায়োগিক গবেষণার মাধ্যমে চন্দ্রডিঙ্গা, বেতগড়া, বাঘবের, সন্যাসীপাড়া, পাতলাবন, উত্তর লেংগুরা গ্রামের কৃষকেরা বালু সহনশীল শস্যফসল চাষ করার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে ২০২০ সাল থেকে।
সীমান্ত এলাকার বালুতে নষ্ট হওয়া জমিগুলোতে গত তিন বছর কৃষক নেতৃত্বে ধানজাত গবেষণা করে চলেছে কৃষক।
কলমাকান্দা উপজেলার রংছাতি ইউনিয়নের 'চন্দ্রডিঙ্গা বাঁধরক্ষা কমিটির' সদস্যরা পানিসহনশীল বালুতে উপযোগী সেসব ধান নেত্রকোনার আটপাড়া উপজেলার রামেশ্সর গ্রামের তুষাই পাড়ের কৃষক সংগঠনের কাছ থেকে ২০টি স্থানীয় ধানের জাত সংগ্রহ করে চাষ করে পরীক্ষা করছিলেন। ২০২১ সালে গবেষণা পস্নট থেকে মালশিরা, খেকশিয়া, বিশালী বিন্নি ধান বাছাই করেন। ২০২২-২০২৩ সালে কৃষক নেতৃত্বে ধানজাত গবেষণা পস্নট থেকে মাঠদিসবের মাধ্যমে মালশিরা ধান পছন্দ করে নিয়ে যান সাতজন কৃষক। ২০২৪ সালে চন্দ্রডিঙ্গা, বাঘবেড়, বেতগড়া, গোবিন্দপুর, নয়াপাড়া, খারনৈ, তারানগর, শিবপুর, মনতলা, উত্তরলেংগুরা, গৌরিপুর, বেতুয়াতলী, নলছাপ্রাসহ ১৪ গ্রামের পরিমল রেমা, গ্রেগরি, কেরুপ কুবি, পুলক কুবি, সুনীল, আব্দুর রাজ্জাক, যন্ত্র হাজং, এলিয়, জসিন্তা রেমা, আব্দুল মান্নান, ভুট্টো মিয়া, সলিতা চিসিম, শহিদুল আলম, তারা নকরেক, প্রত্যয় জাম্বিল, আব্দুল হেলিম, নুরে আলমসহ ২৭ জন কৃষক বালু জমিতে মালশিরা ধান চাষ করে সফল হয়েছেন।
চন্দ্রডিঙ্গা গ্রামের কৃষক পরিমল রেমা বলেন, 'আমি ৪০ শতাংশ জমিতে মালশিরা ধান চাষ করে ২৪ মণ ধান পেয়েছি। গতবছর আমার কাছ থেকে আরও পাঁচজন কৃষক মালশিরা ধানের বীজ নিয়েছিলেন। এ বছর মাঠদিবসে ১১ জন কৃষক মালশিরা ধানের বীজ পছন্দ করেছেন।'
মালশিরা ধান এখন সীমান্ত অঞ্চলের বালু সমস্যা মোকাবিলায় কৃষকের ভরসা হয়ে উঠেছে। পছন্দের কারণ হিসেবে কৃষকেরা বলছেন, মালশিরা ধান বালু ও দোআঁশ মাটি উভয় জমিতেই ভালো হচ্ছে। ফলন ১০ শতকে ৬ থেকে ৭ মণ। ধানের শীষে সব ধানই পুষ্ট। ধানগাছ হেলে পড়ে না। রোগবালাই কম। বীজ রাখা যায়। ১২৪ দিনে ফলন পাওয়া যায়। আগামী বছর কলমাকান্দার বালু দুর্যোগ মোকাবিলায় মালশিরা ধান গ্রামে ছড়িয়ে পড়বে বলে স্থানীয় কৃষকদের ধারণা।