কোথাও ইটের সলিং, কোথাও গর্ত ধুলায় ঢেকে থাকে দিনভর

ভোগান্তির নাম ঝিনাইদহ-যশোরের ৪৭ কিলোমিটার মহাসড়ক

প্রকাশ | ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০

তারেক মাহমুদ, ঝিনাইদহ
ধুলায় ঢেকে থাকা ঝিনাইদহ-যশোর মহাসড়ক -যাযাদি
ঝিনাইদহ বাস টার্মিনাল থেকে যশোরের চাঁচড়ার দূরত্ব ৪৭ দশমিক ৪৮ কিলোমিটার। এ সড়ক ধরেই প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজার হাজার মালবাহী ও যাত্রীবাহী যানবাহন বেনাপোল ও দর্শনা স্থল এবং মোংলা সমুদ্র বন্দরসহ দক্ষিণের জেলা উপজেলায় যাতায়াত করে। এছাড়া খুলনা বিভাগের সঙ্গে রাজশাহী বিভাগের যোগাযোগের একমাত্র সড়কপথ এটি। কিন্তু অতি গুরুত্বপূর্ণ এ মহাসড়কটি আজ বেহাল অবস্থা। সড়কটির ঝিনাইদহ অংশের ২৭ কিলোমিটার অধিকাংশে পিচ-পাথর উঠে বড় বড় গর্ত তৈরি হয়েছে। এসব স্থানে ইটের সলিং করে কোনো রকমে যানবাহন চলাচলের উপযোগী করে রাখা হয়েছে। একই অবস্থা যশোর অংশের ২০ কিলোমিটার সড়ক। ফলে ভাঙাচোরা ৪০ থেকে ৪৫ মিনিটের পথ পাড়ি দিতে যানবাহনগুলোর প্রায় দেড় ঘণ্টা সময় লেগে যাচ্ছে। সড়কের এ দুরবস্থার কারণে প্রতিদিন যাতায়াতকারীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। প্রায় আট মাস ধরে সড়কটির এমন অবস্থায় পড়ে রয়েছে বলে জানিয়েছেন এলাকাবাসী। সর্বশেষ বর্ষা মৌসুমে অতিরিক্ত বৃষ্টির কারণে সড়কের এমন অবস্থার তৈরি হয়েছে। যদিও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বলছে, সড়কটির ছয় লেনে উন্নীতকরণের কাজ চলমান থাকায় মূল সড়কটির কাজ বন্ধ রয়েছে। তবে বড় বড় গর্তগুলোতে ইট বসিয়ে কিছুটা চলাচলের উপযোগী করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, সড়কটির ছয় লেনে উন্নীতকরণের কাজ চলছে। ঝিনাইদহ সড়ক বিভাগ থেকে সড়ক প্রশস্তকরণ প্রকল্প 'উইকেয়ার'র কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। মূলত ঝিনাইদহ বাস টার্মিনাল থেকে যশোরের চাঁচড়া পর্যন্ত ৪৭ দশমিক ৪৮ কিলোমিটার সড়ক উইকেয়ার প্রকল্পের আওতায় ছয় লেনে উন্নীতকরণের কাজ চলমান রয়েছে। এ প্রকল্পে সড়কটি লট-১, ২ ও ৩ এ তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০২১ সালে পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো ছয় লেনের এ প্রকল্পটি শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে। সময়মতো কাজ শেষ করতে না পারায় প্রথম দফায় প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৬ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়। এরপর চলতি বছরের জুন মাসে প্রকল্পের মেয়াদ ছয় মাস বাড়িয়ে সংশোধন প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে পাঠায় সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর। এতে জমি অধিগ্রহণ ব্যয় ৩ গুণ বাড়িয়ে ২ হাজার ৬৫০ কোটি টাকা করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। যে কারণে রাস্তার কাজে চরম ধীর গতি দেখা দিয়েছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। সরেজমিন দেখা গেছে, এ মহাসড়কের ঝিনাইদহের অংশে বিভিন্ন স্থানে ছোট বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। অনেক স্থান ভেঙে গেছে। বিশেষ করে বিষয়খালী এলাকার প্রায় এক কিলোমিটার সড়কে ইটের সলিং দেওয়া রয়েছে। বাকি সড়কের বেশিরভাগ স্থানে ঝুঁকি নিয়ে হেলেদুলে চলছে গাড়ি। ফলে সড়কটিতে যানবাহন চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। কুষ্টিয়া থেকে খুলনা যাতায়াতকারী গড়াই পরিবহণের বাসচালক লাল্টু মিয়া বলেন, সড়ক ভাঙা ও গর্ত থাকায় সময়মতো গন্তব্যে যাওয়া যায় না। প্রায় প্রতিদিনই কমবেশি বাস ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, জরুরি সমাধান দরকার। সদর উপজেলার বিষয়খালী এলাকার বাসিন্দা বসির উদ্দীন বলেন, 'ভাঙা তো আছেই, সঙ্গে ধুলার যন্ত্রণা। সারাদিনে ঘরবাড়িসহ সবকিছুতে ধুলার স্তর পড়ে যায়। রাস্তার পানি দেওয়া কথা থাকলেও নামমাত্র পানি দিচ্ছে। মাসের পর মাস আমরা এভাবে দুর্ভোগ পোহাচ্ছি।' ইজিবাইক চালক ইমন জোয়ারদার বলেন, যাত্রী নিয়ে চলতে গিয়ে কষ্ট হয়। গর্তে পড়লে মনে হয় গাড়ি উল্টে গেল, ভয় করে। টায়ার ও গাড়ি তো নষ্ট হচ্ছেই প্রতিনিয়ত। সওজের ঝিনাইদহ কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী হাফিজুর রহমান জানান, 'গেল বর্ষা মৌসুমে ভারী বৃষ্টি হওয়ায় রাস্তার ক্ষতি হয়েছে। এখন মহাসড়কটির ছয় লেনে উন্নীতকরণ কাজ শুরু হয়েছে। এটি একটি প্রকল্পের আওতায় চলে গেছে। এখানে আমাদের নতুন করে কিছু করার নেই।' ঝিনাইদহ-যশোর মহাসড়ক উন্নয়ন প্রকল্পের উইকেয়ার ফেজ-১-এর উপপ্রকল্প ব্যবস্থাপক-১ নিলন আলী বলেন, পানির সংস্পর্শে এলে বিটুমিনাস সার্ফেস নষ্ট হয়ে যায়। এ কারণে বর্ষায় রাস্তা সংস্কার করা সম্ভব হয়নি। যেখানে বেশি সমস্যা ছিল সেখানে কেটে দেওয়া হয়। এখন বৃষ্টি নেই, অল্প কিছুদিনের মধ্যেই রাস্তার সংস্কার কাজ শুরু হবে।